কামাল মিশন কেন ব্যর্থ হলো ?
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বড় জয়ের আশা করেছিল ঐক্যফ্রন্ট। প্রতিদ্বন্দ্বীতা কঠিন হবে বলেও মনে করেছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাহলে ঐক্যফ্রন্টের এই বিপর্যয়ের কারণ কি? আওয়ামী লীগের ব্যাপক জনপ্রিয়তা? ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং নাকি ঐক্যফ্রন্টের ভুল কৌশল?
ইতোমধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহবায়ক ড. কামাল হোসেন নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং পুনর্নির্বাচন দাবি করেছেন। নির্বাচনে প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকে ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি নেতাদের প্রধান অভিযোগ ছিল প্রচারণার পরিবেশ ও প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে। তাদের দাবিই ছিল সেনা মোতায়েন ও প্রার্থীদের নিরাপত্তা। গত ১৩ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে গিয়ে বিএনপির প্রতিনিধি দল তখনই সেনা মোতায়েন চেয়েছিল। নিরাপত্তা ইস্যুতে সরব থাকলেও কি কি প্রক্রিয়ায় ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং হতে পারে, সে দিকে তারা মনোযোগ দেননি এবং কৌশলগত কোন প্রস্তুতিও নেননি।
তাহলে কী ব্যর্থ হলো কামাল মিশন ? আপাতদৃষ্টিতে এ ব্যর্থতার জন্য ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের কৌশলগত দুর্বলতা ও সমণ্বয়হীনতাই দায়ী বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
দেশের জাতীয় নির্বাচন একটি বৃহৎ ইভেন্ট। সে ইভেন্ট যদি পরিচালিত হয় দলীয় সরকারের অধীনে, সেখানে কেবল জনগনের শক্তি আর ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে কোন জয় অর্জন করা অসম্ভব এটা বিএনপি নেতারাও জানেন। বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট মনে করেছিল, ভোট বিপ্লব হবে। কিন্তু ভীতির বিপরীতে সাহস যোগানোর মত বাস্তব সম্মত কোন পদক্ষেপ তাদের ছিলনা।
কেন্দ্রে-কেন্দ্রে বিএনপির পোলিং এজেন্ট না পাওয়া বা না থাকার বড় কারণ হলো সাহস যোগানোর মত কিছু ছিলনা। বিএনপি জামায়াতের তরুণ ও যুবকরা নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি। প্রতিপক্ষের নির্যাতনে অতিষ্ঠ ও অসংগঠিত এই প্রজন্ম কার নির্দেশনায় ঝাপিয়ে পড়বে ?
নির্বাচনে বাহ্যিক পরিবেশ শান্তিপূর্ণ হয়েছে এবং সেটাই চেয়েছিল বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট। কিন্তু অন্তরালের ইঞ্জিনিয়ারিং হলে কি করে সামলাবে, সে ব্যাপারে উদাসীন একটি দল ও ফ্রন্ট কিভাবে জয়ের আশা করে? পরিকল্পনার ফোকাস ছিল এককেন্দ্রিক, অদূরদর্শী এবং এলোমেলো। এমনকি ভোট বর্জনের বিষয়টিও দেখা গেল, যে যার মত বিচ্ছিন্নভাবে বর্জন করছে। কোন সামষ্টিক সিদ্ধান্ত দেখা যায়নি।
এ ব্যর্থতার দায় নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট পুনর্নির্বাচন দাবি করেছে। এমনকি দশম সংসদের চলমান সরকারের শেষ দিকে সে দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন জোরালো করে নতুন সরকার গঠনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে!