fbpx
হোম অনুসন্ধান দুর্নীতিবাজদের আবাসভূমি ‘বেগমপাড়া’র গোপন খবর…
দুর্নীতিবাজদের আবাসভূমি ‘বেগমপাড়া’র গোপন খবর…

দুর্নীতিবাজদের আবাসভূমি ‘বেগমপাড়া’র গোপন খবর…

0

কানাডায় আসলে সুনির্দিষ্টভাবে ‘বেগমপাড়া’ বলে কোনো জায়গা নেই। ‘বেগমপাড়া’ হচ্ছে বাংলাদেশের লুটেরা-দুর্নীতিবাজদের দ্বিতীয় আবাসভূমির প্রতীকী নাম। বিপুল সম্পদের মালিক হয়ে তাদের পরিবার এখানে আয়েশি, নিরাপদ ও বিলাসবহুল জীবন যাপন করে।

যেভাবে এলো বেগমপাড়ার ধারণা...

অন্টারিওর একটি ব্যয়বহুল ও অভিজাত ছোট শহর মিসেসাওগা। কানাডার বিখ্যাত লেক অন্টারিওর তীর ঘেঁষে টরেন্টো শহরের পাশে এটি অবস্থিত। এ শহরের একটি বড় কনডোমিনিয়ামে দক্ষিণ এশিয়া থেকে আসা বহু অভিবাসী পরিবার বাস করে। এসব পরিবারের কর্তারা কাজকর্ম করেন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। আর স্বামীদের অনুপস্থিতিতে স্ত্রীদের নিঃসঙ্গ ও কঠিন জীবনসংগ্রাম নিয়ে ভারতীয় পরিচালক রশ্মি লাম্বা একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন, যার নাম ছিল ‘বেগমপুরা’। সেই ‘বেগমপুরা’ থেকেই ‘বেগমপাড়া’ নামটি এসেছে। বেগমপুরা থেকে বেগমপাড়া হলেও কাহিনি বিপরীত !

বেগমপুরার কাহিনী ছিল অনেক সংগ্রামের ও চ্যালেঞ্জের। আর বাংলাদেশের কথিত বেগমপাড়ার কাহিনি তার বিপরীত। বাংলাদেশের বেগমদের সাহেবরা দেশে চাকরি, ব্যবস্যা-বাণিজ্য, রাজনীতি করে দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ আয় কানাডায় পাচার করে তাদের বেগমদের কাছে পাঠায়। আর তাদের বেগমরা-সন্তানরা এখানে অভিজাত এলাকার দামি বাসা-বাড়ি-গাড়িতে বিলাসবহুল আয়েশি জীবন যাপন করে।

সেই প্রতীকী বেগমপাড়াগুলো কোথায় ?

বেগমপাড়া বলে বাস্তবে কানাডায় কোনো পাড়া-মহল্লা, এলাকা না থাকলেও এখানে এমন কিছু জায়গা আছে, যেখানে অসৎ-দুর্নীতিবাজ বাংলাদেশিরা বসতি গেড়েছে। কোথায় সেসব? সাধারণত যেসব এলাকায় বাংলাদেশিদের আনাগোনা নেই, স্থানীয় প্রবাসী পেশাজীবীরা বসবাস করে না, সেসব এলাকাকেই তারা বেছে নিয়েছে বসবাসের জন্য। এবং সেসব এলাকাতেই বাসা-বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট কিনে বসবাস করছে। যে স্থানগুলোকে এখানকার অভিজাত এলাকা হিসেবে অভিহিত করা হয়।

জানা যায়, টরেন্টোর বেলভিউতে বিলাসবহুল হাইরাইজ কনডোমিনিয়াম, টরেন্টোর প্রাণকেন্দ্র সি এন টাওয়ারের আশপাশ, টরেন্টোর পাশের শহর রিচমন্ড হিল, মিসেসাওগা ও মার্কহামের অভিজাত এলাকায় এরা বাস করে। অন্টারিওতে এমন ২ শতাধিক বেগমপাড়ার কথা শোনা যায়। এ ছাড়া আরও অনেকে কানাডার অভিবাসী হয়ে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে।

কী করে এই বেগমরা ?

অভিজাত এলাকার এই বেগমসাহেবারা এখানে কোনো কাজকর্ম করে না, কিন্তু তারা দু-চার-পাঁচ মিলিয়ন ডলারের বাড়ির মালিক। তারা এখানে থাকে কিন্তু তাদের জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে দৃশ্যমান জীবনযাপনের কোনো মিল নেই। কানাডায় থাকা সাধারণ প্রবাসীদের পক্ষে সহজে এমন বাড়ি কেনা সম্ভব নয়। তাদের এ রকম একটি বাড়ি কিনতে অনেক মেহনত করতে হয়।

কেন বেগমপাড়া এত আলোচিত ?

কানাডাই একমাত্র দেশ যেখানে দেশপ্রেমিক প্রবাসীরা লুটেরাদের বিরুদ্ধে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। যে সংবাদ দেশের সব মিডিয়ায় গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করা হয়। যে আন্দোলন দেশ-বিদেশের বাঙালিদের দ্বারা ব্যাপক প্রশংসিত হয়। মানুষের মধ্যে অনেক উৎসাহের সৃষ্টি করে। অন্যান্য দেশের প্রবাসীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের ওখানেও এমন সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য।

বিশেষত কানাডা ছাড়া যেসব দেশে লুটেরারা অর্থ পাচার করে। সেটা হলে লুটেরাবিরোধী এ আন্দোলন হয়তো একটি বৈশ্বিক আন্দোলন হতো। কিন্তু দুর্ভাগ্য বিশ্বব্যাপী করোনার ভয়ঙ্কর আক্রমণ সে সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কিন্তু লুটেরাবিরোধী আন্দোলনের আলাপ-সংগ্রাম থেমে নেই। কানাডায় বেগমপাড়া ও লুটেরাবিরোধী আন্দোলন ছিল বেগমপাড়া শব্দের ব্যাপক প্রচার ও আলোচনার বিষয়। এ আন্দোলনের আগে ও পরে কানাডার বেগমপাড়া নিয়ে মিডিয়ায় অনেক সংবাদ, প্রতিবেদন, আলাপ-আলোচনা হয় যা এখন চলমান। যে আলোচনা দেশ-বিদেশে এক বিশাল মিথ ও কিংবদন্তি সৃষ্টি করে।

যেসব দেশে লুটেরা দেশ থেকে অর্থসম্পদ লুট করে তাদের দ্বিতীয় বিলাসী ও নিরাপদ আবাস গড়ে তুলেছে, সেখানেই এ বেগমপাড়া বর্তমান। সে হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কেইম্যান আইল্যান্ডস ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে বেগমপাড়া আছে। এ তথ্য বাংলাদেশ সরকার ও জিএফআইয়ের; আমার মনগড়া নয়।

লেখক : গবেষক ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট। তথ্যসূত্র : বিবিসি বাংলা।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *