fbpx
হোম আন্তর্জাতিক যে ভয়াবহ দুর্যোগে ধ্বংস হয়েছিল পম্পেই নগরী
যে ভয়াবহ দুর্যোগে ধ্বংস হয়েছিল পম্পেই নগরী

যে ভয়াবহ দুর্যোগে ধ্বংস হয়েছিল পম্পেই নগরী

0

হাজার বছরের পুরনো একটি শহর পম্পেই। ইতালির ক্যাম্পানিয়া প্রদেশে নেপলসের (নাপোলি) আগ্নেয়গিরি ভিসুভিয়াস পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত ছোট্ট এই নগরী। বর্তমানে উপকূল থেকে বেশ দূরে সরে গেছে এটি। একসময় একেবারে উপকূলের ধার ঘেঁষে ছিল এই জায়গা। পরিকল্পিত নগরটি চাপা পড়েছিল পাশের ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে সৃষ্ট জ্বলন্ত লাভার নিচে।

মানুষ যখন নিজের অস্তিত্ব ভুলে ক্ষমতার দম্ভ, জুলুম, অত্যাচার ও দুনিয়ার ভোগ বিলাসে মত্ত হয়ে বিভিন্ন পাপাচারে লিপ্ত হয়, তখনই সৃষ্টিকর্তার ক্রোধ চরমে উঠে।উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য যুগে যুগে পৃথিবীতে শাস্তিস্বরূপ পাঠানো হয় বিভিন্ন ভয়াবহ বিপর্যয়।

তেমনি এক বিপর্যয় নেমে এসেছিল ২৪ আগস্ট ৭৯ খ্রিস্টাব্দে ইতালির পম্পেই নগরীতে। প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের জানালা হিসাবে পরিচিত এই পম্পেই নগরী সেই সময় উন্নতির র্স্বণ শিখরে আরহণ করেছিল। আধুনিক বিশ্বে এমন কোন সুযোগ সুবিধা বাকি  ছিল না সেখানে।

রোমানদের অনেকে উচ্চ পদস্থ পরিষদবর্গ, আমির ওমরাহ ও ধনী ব্যবসায়ীরা সেখানে যেত অবকাশ যাপন করতে। উৎসবের আমেজ সেখানে সবসময় লেগেই থাকতো। সে সময় এই নগরীকে পোর্ট (বন্দর) হিসাবেও ব্যবহার করা হতো। তাই প্রাচীন গ্রীক, রোমানসহ বিভিন্ন দেশের নাবিকদের অবাধ চলাচল ছিল এই নগরীতে। তাদের বিনোদনের জন্য ইউরোপ, এশিয়া , আফ্রিকার থেকে সুন্দরী মেয়েদের সংগ্রহ করে রাজ্য সরকারের তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের দ্বারা অবাধে চলতো দেহ ব্যবসা।

সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার জন্য তারা পতিতাবৃত্তিকে আয়ের প্রধান উৎস হিসেবে গ্রহণ করেছিল। এমন কি সেখানে বসবাসকারীরা তাদের সুন্দরী স্ত্রীদেরকেও এই ব্যবসায় নিয়োজিত করেছিল। নারী যৌনকর্মীদের পাশাপাশি পুরুষ যৌনকর্মীরাও সেখানে ছিল। সবাই সমকামিতা ও নেশাগ্রস্ত হয়ে দলবদ্ধভাবে যৌনাচারে লিপ্ত থাকতো। এমন কি গৃহপালতি পশুও তাদের এই বিকারগ্রস্থ যৌন নিগ্রহ থেকে বাদ পড়তো না। এইসব সৃষ্টির নিয়ম বহিঃভূত কুর্কমের কারণে তাদের ধ্বংস করে দেওয়া অনস্বীকার্য হয়ে পড়েছিল।

তেমনি এক কর্মব্যস্ত সকালে প্রচন্ড এক ভূমিকম্পে কেঁপে উঠে পম্পেই নগরী। হারকুলেনিয়ামসহ পুরো বেঅফ ন্যাপলসে গর্জে উঠে ইউরোপের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর আগ্নেয়গিরি ভিসুভিয়াস। রেরিয়ে আসতে থাকে বিষাক্ত ধোঁয়া। ৪৫০ মাইল গতিতে ধেয়ে আসা তিক্ত গ্যাস, চূর্ণ -বিচূর্ণ পাথর শিলা মেঘের মতো মারাত্মক আকারে প্রায় ৩৩ কিলোমিটার (২১ মাইল ) উচ্চতায় ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকা।

প্রতি সেকেন্ডে ১.৫ মিলিয়ন টন উত্তপ্ত লাভা, গলিত শিলা , ছিদ্রযুক্ত পমিসি এবং হট এশ (উত্তপ্ত ছাই) নির্গত হয়ে এক নিমিষেই সব কিছু গ্রাস করে ফেলে। বিস্ফোরণের সময় সেখানে এতো বেশি পরিমান তেজস্ক্রিয়তা নির্গত হয়েছিল যে, তার পরিমাপ কয়েক লক্ষ্য গুণ বেশি ছিল। আর এভাবেই তারা রোষানলে পতিত হয়েছিল।

 

প্রায় ২০,০০০ মানুষের বসবাসরত জনপদটি ১৩-২০ ফুট উচ্চতার আগ্নেয় ছাইয়ের নিচে পম্পের নগরীর ৮০ কিলোমিটার এলাকা চাপা পড়ে যায়। ঠিক একদিন একরাত পর যথারীতি বিস্ফোরণ ও অগ্ন্যুৎপাত বন্ধ হয়ে যায়। আর এভাবেই পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে হারিয়ে যায় সেই জাতি।

 

এখনো ধ্বংস হওয়া সেই কঙ্কাল ও দালান-কোঠাগুলো সেই চিহৃ বহন করে। যে যেভাবে ছিলো ঠিক সেভাবেই তাদের দেহগুলো পড়ে আছে। আগ্নেয়গিরির লাভা তাদের সেই মুহুর্তকে আজও সেখানে ঘুরতে যাওয়া দর্শনার্থীদের মনে করিয়ে দেয়, কতোটা ভবয়াবহ ছিলো সেই ধ্বংসলীলা।

 

 

এই জনপদটি মূলত ব্রোঞ্জ যুগে সার্নো নদীর মোহনায় গড়ে উঠেছিলো । নদীকে কেন্দ্র করে পম্পেই ওই এলাকায় একটি অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করতো যা দ্বিমুখী সুবিধা প্রদান করতো। যার একদকিে নদীর জলবায়ু অন্যদিকে ভিসুভিয়াস আগ্নেয় শিলার উষ্ণতা, যা কৃষি কাজ ও বসবাসের জন্য খুবই উপযোগী ছিল।

অষ্টম শতাব্দীতে এই জনপদটি গোড়াপত্তন হলেও  শহরটি খ্রিস্টর্পূব ৭ই-৬ষ্ঠ শতাব্দীতে অস্কার বা অস্কান জাতির দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এলাকাটি জনবসতিপূর্ন হয়ে উঠেছিল। ইতিমধ্যে ফোনকিযান নাবিকদের দ্বারা এটি একটি নিরাপদ পোর্ট (বন্দর) হিসাবে ব্যবহৃত হত।

প্রথমবারের মত ৫০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে সরিকুসরে সাথে সংযুক্ত করে কুমিয়াতে গ্রীক ঔপনিবেশ শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে সামানিয়ানরা এখানকার সমস্ত নগরী ও গ্রামগুলো জয় করে নতুন শাসন ব্যবস্থা চালু করেন। নতুন শাসকরা পম্পেইতে স্থাপত্য শিল্প প্রতিষ্ঠা করে শহরকে আরো বিস্তৃত করেন।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *