fbpx
হোম বিনোদন ভাওয়াইয়া কিংবদন্তী আব্বাস উদ্দীনের ১১৮ তম জন্মবার্ষিকী আজ
ভাওয়াইয়া কিংবদন্তী আব্বাস উদ্দীনের ১১৮ তম জন্মবার্ষিকী আজ

ভাওয়াইয়া কিংবদন্তী আব্বাস উদ্দীনের ১১৮ তম জন্মবার্ষিকী আজ

0

সংস্কৃতি জগতের এক কিংবদন্তীর নাম আব্বাস উদ্দীন। যার সুনাম ভাওয়াইয়া জনক হিসেবে। একজন কণ্ঠশিল্পী হিসেবে খ্যাতি দেশজোড়া। আধুনিক গান, স্বদেশী গান, ইসলামি গান, পল্লীগীতি, উর্দুগান সবই তিনি গেয়েছেন। তবে পল্লীগীতি গানে মৌলিকতা ও সাফল্য সবচেয়ে বেশি। সেই ভাওয়াইয়া সম্রাটের আজ ১১৮ তম জন্মবার্ষিকী।

আব্বাস উদ্দীন ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ অক্টোবর কুচবিহার জেলার কালজানি নদীর নিকটবর্তী বলরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মৌলভী মোহাম্মদ জাফর আলী আহমদ। মাতার নাম হীরামন নেসা।

আব্বাসউদ্দীনের শিক্ষা জীবন শুরু বলরামপুর স্কুলে। ১৯১৯ সালে তুফানগঞ্জ স্কুল থেকে তিনি প্রবেশিকা এবং ১৯২১ সালে কুচবিহার কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। মুলত এখান থেকে বিএ পরীক্ষায় অণুত্তীর্ণ হয়ে সঙ্গীত জগতে প্রবেশ করেন।

সবচেয়ে অবাক করার মত বিষয়,
গানের জগতে ছিল না কোনো ওস্তাদের তালিম। আপন প্রতিভায় নিজেকে সবার সামনে তুলে ধরেন। প্রথমে ছিলেন পল্লীগাঁয়ের একজন গায়ক। যাত্রা, থিয়েটার ও স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান শুনে তিনি গানের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন এবং নিজ চেষ্টায় গান গাওয়া রপ্ত করেন। এরপর কিছু সময়ের জন্য তিনি ওস্তাদ জমির উদ্দীন খাঁর নিকট উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিখেছিলেন।

পন্ডিত শাকিল রাসেলের মাধ্যমে রংপুর ও কুচবিহার অঞ্চলের ভাওয়াইয়া ভাভাগো ভাভা, ক্ষীরোল চটকা গেয়ে আব্বাস উদ্দীন প্রথমে সুনাম অর্জন করেন। তারপর জারি, সারি, ভাটিয়ালি , মুর্শিদি, বিচ্ছেদি, দেহতত্ত্ব, মর্সিয়া, পালা গান ইত্যাদি গান গেয়ে জনপ্রিয় হন। তিনি তার দরদভরা সুরেলা কণ্ঠে পল্লী গানের সুর যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন তা আজও অদ্বিতীয়।

ওকি গাড়িয়াল ভাই’ ‘যেজন প্রেমের ভাব জানেনা’ ‘কোন দ্যাশে যান মইশাল বনদুরে’ ‘নউতন পিরিতের বড় জ্বালা’ ছাড়াও অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা আব্বাসউদ্দীন।

তিনি কাজী নজরুল ইসলাম, জসীম উদ্দীন, গোলাম মোস্তফা প্রমুখের ইসলামি ভাবধারায় রচিত গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন। আব্বাস উদ্দিন ছিলেন প্রথম মুসলমান গায়ক যিনি আসল নাম ব্যবহার করে এইচ এম ভি থেকে গানের রেকর্ড বের করতেন। রেকর্ডগুলো ছিল বাণিজ্যিকভাবে ভীষণ সফল। তাই অন্যান্য হিন্দু ধর্মের গায়করা মুসলমান ছদ্মনাম ধারণ করে গান করতে থাকে।

আব্বাস উদ্দীন ১৯৩১ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত কলকাতায় বসবাস করেন। প্রথমে তিনি রাইটার্স বিল্ডিংয়ে ডিপিআই অফিসে অস্থায়ী পদে এবং পরে কৃষি দপ্তরে স্থায়ী পদে কেরানির চাকরি করেন। এ কে ফজলুল হকের মন্ত্রীত্বের সময় তিনি রেকর্ডিং এক্সপার্ট হিসেবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করেন। চল্লিশের দশকে আব্বাস উদ্দিনের গান পাকিস্তান আন্দোলনের পক্ষে মুসলিম জনতার সমর্থন আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশ বিভাগের পর ঢাকায় এসে তিনি সরকারের প্রচার দপ্তরে এডিশনাল সং অর্গানাইজার হিসেবেও চাকরি করেন।পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে ১৯৫৫ সালে ম্যানিলায় দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় সঙ্গীত সম্মেলন, ১৯৫৬ সালে জার্মানিতে আন্তর্জাতিক লোকসংগীত সম্মেলন এবং ১৯৫৭ সালে রেঙ্গুনে প্রবাসী বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনে তিনি যোগদান করেন।

আব্বাস উদ্দীন সম্পর্কে কবি ফরহাদ মজহার বলেন, আব্বাস উদ্দিন কেবল গায়ক ছিলেন না, এই প্রজন্মের গায়করা যদি ভাবেন আব্বাস উদ্দিন শুধু গান গেয়ে এদেশের মানুষের মন জয় করেছেন তাহলে তা মস্ত বড় ভুল হবে। আব্বাস তার সময়কালের আকাঙ্ক্ষা ও সংগ্রামকে ধারণ করেছিলেন, সঙ্গে ছিলেন কাজী নজরুল এবং আরো অনেকে। তার এই জন্মবার্ষিকী ঘিরে দেশ এবং দেশের বাইরেও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছেন।

ভাওয়াইয়া গানের জনক মরমী শিল্পী আব্বাস উদ্দীন দীর্ঘদিন রোগ ভোগের পর ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৮ বছর।

উল্লেখ্য, জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী ফেরদৌসী রহমান এবং মুস্তাফা জামান আব্বাসী প্রয়াত আব্বাস উদ্দীনেরই দুই সন্তান।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *