fbpx
হোম আন্তর্জাতিক তবে কি শান্তি ফিরেছে কাশ্মীরে !
তবে কি শান্তি ফিরেছে কাশ্মীরে !

তবে কি শান্তি ফিরেছে কাশ্মীরে !

0

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করা হয়েছে টাইম ম্যাগাজিনে। গত এক বছরে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর বাস্তব ছবিটাই তো পাল্টে গিয়েছে। কাশ্মীরিরা পাচ্ছেন, বলিষ্ঠ সরকারি পদক্ষেপের সুফল। কথা রেখেছেন মোদি, পাহাড়ের মানুষ খুঁজে পেয়েছেন বেঁচে থাকার সঠিক দিশা।

শ্রীনগরের বিখ্যাত ডাল লেকের পাশে বসে মুহা. ইউসুফ শোনালেন তাঁর নিজের অভিজ্ঞতার কথা। বললেন, ডাল লেকের এই মায়াবী চেহারাই তো ভুলতে বসেছিলাম। গত এক বছরে অনেক শান্ত হয়েছে কাশ্মীর। এখানকার যুবকরা এখন ৫০০ টাকার জন্য ফৌজিদের পাথর ছুঁড়তে যাওয়ার বদলে চাকরির ধান্দা শুরু করেছে।

কারা ছুঁড়তেন পাথর? ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ বলছে, পাকিস্তানিদের পয়সায় কিছু বেকার যুবক এই কাজে নিযুক্ত ছিল। ২০১৬ সালে ২ হাজার ৬৫৩টি পাথর বৃষ্টির ঘটনার সাক্ষী কাশ্মীরের মানুষ। অথচ, গত বছর ৫ আগস্ট কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা লোপ করে দুটি কেন্দ্রশাসিত রাজ্য গঠনের পর অশান্তি বন্ধ।

স্থানীয় সাংবাদিক তারিক ভাট বললেন, জন্মের পর থেকেই তো শুনে এসেছি হরতাল আর হরতালই। গত এক বছরে সেই বন্ধ্যা রাজনীতির বদলে মানুষ এখন উন্নয়নের পথে হাঁটতে পারছেন। এটাই বড় প্রাপ্তি।

অতি সম্প্রতি মোদি সরকার কাশ্মীরের জন্য ‘স্টার্স প্রকল্প’ (Strengthening Teaching-Learning and Results for States (STARS) project) ঘোষণা করেছে। ৫২০ কোটি রুপির এই প্রকল্প রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করবে। ছেলেমেয়েদের করে তুলবে রোজগারমুখী। জম্মু কাশ্মীর ও লাদাখ কেন্দ্রীয় শাসিত রাজ্য দুটির মানুষদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের পাশাপাশি যুবকদের স্বাবলম্বী করে তুলবে স্টার্স।

সম্প্রতি ৪৯ কোটি ৭৮ কোটি টাকার ক্রীড়া পরিকাঠামোর উদ্বোধন করেছেন জম্মু-কাশ্মীরের উপ-রাজ্যপাল মনোজ সিনহা। একইসঙ্গে তিনি ১০ কোটি ৫০ লাখ রুপি খরচ করে আরও একটি ক্রীড়া পরিকাঠামোর শিলান্যাস করেন।

শ্রীনগরে বহুদিন ধরেই ফুটবলার ও কোচদের দাবি ছিল একটি আধুনিক ফুটবল স্টেডিয়ামের। কাশ্মীরি ফুটবলাররা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সুনামের সঙ্গে খেলে বেড়ালেও নিজেদের রাজ্যে তেমন পরিকাঠামো না থাকায় সমস্যায় পড়তেন।

শ্রীনগরের জেলাশাসক শহিদ চৌধুরী জানিয়েছেন, ২৫ কোটি রুপি খরচ করে গড়ে তোলা হয়েছে আধুনিক ফুটবল স্টেডিয়াম। ফলে উঠতি ফুটবলাররাও খুশি। আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য না নেওয়ায় ধুঁকছিল বিশ্ববন্দিত কাশ্মীরি সিল্ক। এক বছর আগে কেন্দ্রীয় সরকার কাশ্মীরের উন্নয়নের দায়িত্ব সরাসরি কাঁধে তুলে নিতেই সেই শিল্পও আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

মহাত্মা গান্ধি জাতীয় গ্রামীণ রোজগার নিশ্চিত যোজনা বা এমজিএনরেগা প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামের মানুষের কর্মসংস্থান আজ নিশ্চিত হয়েছে। গড়ে উঠছে একাধিক পরিকাঠামোও। রাজৌরিসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্রামের মানুষরাই গড়ে তুলছেন রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে ফৌজি বাঙ্কারও। তাদের যেমন রোজগার হচ্ছে, তেমনি উন্নয়ন হচ্ছে পরিকাঠামোরও।

রাজনৈতিক স্বার্থে অনেকেই কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিলের বিরোধিতা করছেন। স্বাভাবিক। কারণ তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে ঘা লেগেছে। কিন্তু কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ মোদি-সরকারকে বাহবা দিচ্ছেন। কারণ তারা উপকৃত হয়েছেন। জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখের পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় দিকটি হল ভারতীয় সংবিধান মেনে এখানকার বাসিন্দারা উন্নয়নের রাস্তাকে মন থেকে মেনে নিয়েছেন। সরকারও দেশের অন্যান্য প্রান্তের মতো অনগ্রসর শ্রেণিদের শিক্ষা, চাকরিতে সংরক্ষণ, সামাজিক বিভিন্ন বিষয়ে সুবিধার ব্যবস্থা করেছে।

কাশ্মীরিরা বুঝেছেন, গত একবছরে তাদের জনকল্যাণে বহু কাজ হয়েছে উপত্যকায়। স্থানীয় সরকারের ১০ হাজার চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তফসিলি উপজাতি, ওবিসি এবং অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণীর মানুষরা এখন পাচ্ছেন চাকরির ক্ষেত্রে সংরক্ষণের সুবিধা। ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ার পরই কাশ্মীর উঠে এসে উন্নয়নের মহাসড়কে।

উন্নয়নের কারণেই জেগে উঠেছে ভারতীয়বোধ। স্থানীয় মানুষ আজ প্রাণ খুলে ওড়াচ্ছেন দেশের ত্রিবর্ণ জাতীয় পতাকা। কাশ্মীরে বসবাসকারী মুসলমান নারীও আজ খুশি। তিন তিলাকা নিয়ে মোদি সরকারের সিদ্ধান্ত তাদের আত্মমর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছে।

এখন রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে খাদ্যশস্য। কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা লোপ এবং বর্তমান কর্মযজ্ঞ প্রসঙ্গে ভারতের দূরদর্শন ও আকাশবাণীর নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রসার ভারতীর প্রাক্তন চেয়ারম্যান এ সূর্য প্রকাশ বলেন, সাত দশক ধরে উপত্যকায় যে লজ্জাজনক, বৈষম্যমূলক এবং অগণতান্ত্রিক নীতি চলেছে তার অবসান হয়েছে।

৩৭০ ধারা বিলোপের ফলে কাশ্মীরে ফিরে আসছে বহু কাঙ্ক্ষিত শান্তি। গত এক বছরে নাশকতামূলক ঘটনা কমেছে ৫৪ শতাংশ। জঙ্গি হানায় নিরাপত্তা বাহিনীর মৃত্যুর হার কমেছে গত এক বছরে ৭৪ শতাংশ।

একদিকে সন্ত্রাস কমেছে। অন্যদিকে বেড়েছে মানুষের জীবনযাত্রার মান। ৩৭০ ধারা বিলোপ করে মোদি সরকার ফিরিয়ে দিয়েছেন কাশ্মীরি মানুষদের আত্মবিশ্বাস। আত্মনির্ভর হওয়ার ডাক দিয়ে ভূ-স্বর্গকে তার পুরনো ছন্দে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে মরিয়া ভারত সরকার। আর তাই উন্নয়নকেই হাতিয়ার করে কাশ্মীরের মানুষের কাছেও পৌঁছে দিতে চাইছে কল্যাণমূলক বিভিন্ন কর্মসূচির সুফল।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *