পৃথিবীর ‘কানের পাশ দিয়ে’ গেল নতুন গ্রহাণুটি
‘ট্রাক’ আকৃতির একটি নতুন গ্রহাণু শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে পৃথিবীকে পাশ কাটিয়ে চলে গেছে বলে জানিয়েছেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা। গ্রহাণুটি উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে কাছ দিয়ে পৃথিবীর ৩,৬০০ কিলোমিটার অতিক্রম করেছে। গ্রহাণুটি নাম দেওয়া হয়েছে ‘২০২৩ বিইউ’।
ক্রিমিয়ায় সম্প্রতি জ্যোতির্বিজ্ঞানী গেন্নাদি বোরিসভের টেলিস্কোপে গ্রহাণুটি ধরা পড়ে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ‘২০২৩ বিইউ’ পৃথিবীকে আঘাত করবে না। এটির আকাশে থাকা কোনো স্যাটেলাইটকে আঘাত করার সম্ভাবনাও তেমন ছিল না। এমনকি সরাসরি পৃথিবীর সঙ্গে সংঘর্ষের পথে এলেও তেমন কোনো ক্ষতি করার সক্ষমতা নেই এটির। বিজ্ঞানীরা গ্রহাণুটির যাত্রাপথকে পৃথিবীর জন্য ‘কানের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
আনুমানিক মাত্র সাড়ে ৩ মিটার থেকে সাড়ে ৮ মিটার আকারের শিলাটি পৃথিবীর দিকে চলে এলেও অনেক উঁচুতে থাকতেই বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে ঘর্ষণে খণ্ডবিখণ্ড হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। তবে এর ফলে একটি চোখে পড়ার মতো উজ্জ্বল আগুনের গোলাও তৈরি হতে পারতো।
চেলিয়াবিনস্ক উল্কা ২০১৩ সালে দক্ষিণ রাশিয়ার ওপরের আকাশে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পড়েছিল। সেটির বিস্তার ছিল ২০ মিটার। উল্কাপিণ্ডটি বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করায় তীব্র শব্দতরঙ্গ সৃষ্টি হয়েছিল, যাতে নিচে পৃথিবীর বুকে কিছু বাড়িঘরের জানালার কাচ ভেঙে যায়।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, গ্রহাণু ‘২০২৩ বিইউ’ পৃথিবীর কাছে চলে আসার কারণে সূর্যের চারপাশে এর কক্ষপথ কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে। আমাদের গ্রহের মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবই তার কারণ।
বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর কাছের বেশি বড় গ্রহাণুগুলো খুঁজে বের করার জন্য সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যে গ্রহাণুগুলো পৃথিবীকে আঘাত করলে ক্ষতি হতে পারে। যেমন ছয় কোটি বছর আগে ১২ কিলোমিটার প্রশস্ত একটি শিলার আঘাতেই পৃথিবী থেকে অতিকায় প্রাণী ডাইনোসররা নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। এইসব বড় গ্রহাণুর মধ্যে সম্ভবত সবগুলোই শনাক্ত করা হয়েছে। এ কারণে তা উদ্বেগের কারণ নয়। তবে আকারে অনেক ছোট (যেমন ১৫০ মিটার) গ্রহাণুর ক্ষেত্রে মাত্র ৪০% এর মতো শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ওয়ারউইক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডন পোলাকো বলেছেন, এখনো পৃথিবীর কক্ষপথ অতিক্রমকারী এমন কিছু গ্রহাণু আছে, যেগুলো আবিষ্কৃত হয়নি। ‘২০২৩ বিইউ’ অতি সাম্প্রতিক আবিষ্কৃত। এটি অবশ্যই পৃথিবীর কক্ষপথ আগেও হাজার হাজারবার অতিক্রম করেছে। তবে ঘুরতে ঘুরতে এবারই এত কাছে এলো। অতিক্রমের সময় চাঁদের তুলনায় মাত্র ১% দূরত্বে থাকবে এটি।