fbpx
হোম প্রবাস সৌদি থেকে প্রায় ১২ লাখ শ্রমিক ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত
সৌদি থেকে প্রায় ১২ লাখ শ্রমিক ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত

সৌদি থেকে প্রায় ১২ লাখ শ্রমিক ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত

0

কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাবে বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ব্যাপক মূল্যপতন ঘটেছে। এ অবস্থায় অর্থনৈতিক সংকট লাঘবে বেশকিছু উচ্চাভিলাষী প্রকল্প স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সৌদি আরব।

এরই ধারাবাহিকতায় বিপুলসংখ্যক অভিবাসী শ্রমিককে পর্যায়ক্রমে ফেরত পাঠাবে দেশটি, চলতি বছরের শেষ নাগাদ যার সংখ্যা দাঁড়াবে ১২ লাখ। আর ফেরত পাঠানোর ঝুঁকিতে থাকা শ্রমিকের বড় একটি অংশই প্রবাসি বাংলাদেশি।

রিয়াদভিত্তিক জাদওয়া ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির এক প্রক্ষেপণে বলা হয়েছে, মূলত সৌদি নাগরিকদের জন্য চাকরির বাজার বড় করতে দেশটির সরকারের আগে থেকে নেয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং সাম্প্রতিক সময়ে চলমান করোনা ভাইরাসের মহামারির কারণে বিপুল সংখ্যক বিদেশি শ্রমিককে ফেরত পাঠাবে সৌদি আরব।

জাদওয়ার এই প্রক্ষেপণের ওপর ভিত্তি করে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের কিছু কিছু সেক্টর অদূর ভবিষ্যতে পুরোদমে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে ফিরে আসবে এমন আশা নেই। লকডাউন ব্যবস্থা ধীরে ধীরে শিথিল করার পরও ভ্রমণ, হোটেল, রেস্তোর্রা, পর্যটন ও বিনোদনের সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলো পূর্ণ কার্যক্রমে আসার সম্ভাবনা নেই। এ অবস্থায় সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত যেসব খাত থেকে সবচেয়ে বেশি হারে বিদেশি শ্রমিকদের ফেরত পাঠানোর সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলো হচ্ছে আতিথেয়তা, খাদ্য পরিষেবা, প্রশাসনিক ও সহায়তা কার্যক্রম, ট্রাভেল এজেন্সি, সুরক্ষা ও নির্মাণ খাত। তবে ১২ লাখ বিদেশি শ্রমিক চলে যাওয়ার পরও ২০২০ সালের শেষ নাগাদ সৌদিদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১২ শতাংশেই অপরিবর্তিত থাকবে।

এদিকে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়া এবং চলমান অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণে আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে সৌদি আরব থেকে ১০ লাখ বাংলাদেশি অভিবাসীকে দেশে ফিরে আসতে হতে পারে। দূতাবাসের আশঙ্কা, ২০৩০ সালের মধ্যে নিজ দেশের নাগরিকদের মাধ্যমে ৭০ শতাংশ বিদেশী কর্মী প্রতিস্থাপনের নীতিও এর আরেকটি কারণ হতে পারে। শ্রমিক ফেরত আসার আশঙ্কার বিষয়টি উল্লেখ করে গত মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠিও পাঠিয়েছে দূতাবাস।

গত সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, দেশে ফিরতে আগ্রহী প্রবাসী শ্রমিকদের ফেরত আনার ব্যাপারে মতৈক্যে পৌঁছেছে বাংলাদেশ ও সৌদি আরব। উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ফোনালাপে বাংলাদেশ সৌদি আরব থেকে শ্রমিক ফিরিয়ে আনতে সম্মতি দিয়েছে। আর বাংলাদেশের অনুরোধে পর্যায়ক্রমে এ শ্রমিকদের ফেরত পাঠাতে সম্মত হয়েছে সৌদি আরব। এর আগে গত রোববার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে ফোনালাপ করেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ। ফোনালাপে দুই মন্ত্রী শ্রমিক ফেরানোর বিষয়ে একমত প্রকাশ করেন।

নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কোয়ারেন্টিন সুবিধা নিশ্চিত করতে সৌদি আরব থেকে শ্রমিকদের পর্যায়ক্রমে দেশে আনা হবে। ফেরত আনার ক্ষেত্রে সৌদি আরবে আটকে পড়া ওমরাহ হজ পালনকারী, অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী এবং নারী গৃহকর্মীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। তবে করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে সৌদি আরবের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও মত্স্য চাষে বাংলাদেশের কৃষি শ্রমিকদের কাজে লাগাতে অনুরোধ করেন ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বাংলাদেশের কৃষি শ্রমিক এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষদের কাজে লাগানোর বিষয়ে ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদও উৎসাহ প্রকাশ করেন।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে প্রায় ১ লাখ ২৯ হাজার বাংলাদেশি কাজের জন্য বিভিন্ন দেশে গিয়েছেন। এর মধ্যে ৯৫ হাজার ৩৮৪ জনই গিয়েছিলেন সৌদি আরবে। দেশটিতে প্রায় ২১ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক বিভিন্ন পেশায় কর্মরত।

সৌদি আরব থেকে প্রবাশি শ্রমিকদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য খারাপ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সেক্রেটারি জেনারেল শামীম আহমেদ চৌধুরি নোমান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, করোনা মহামারির কারণে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী যা হচ্ছে তাতে কারো হাত নেই। বর্তমান অবস্থা যদি আরো বেশিদিন চলমান থাকে সেটা সৌদি আরবের অর্থনীতিতে খারাপ প্রভাব ফেলবে। অত্যাবশ্যকীয় নয় এমন প্রকল্পগুলো সব একে একে বন্ধ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে বিপুল প্রবাসি কর্মীকে তো আর সৌদি আরব বসিয়ে রাখবে না। ধীরে ধীরে ফেরত পাঠানো শুরু করবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। সেক্ষেত্রে এত বিপুলসংখ্যক শ্রমিক ফেরত এলে দেশের অর্থনীতিতে আঘাত আসার পাশাপাশি তৈরি হবে বেকারত্ব। আর প্রবাসী আয়ের ওপর নির্ভরশীল থাকা পরিবারগুলোও সংকটে পড়বে।

২০১৫ সাল থেকে সৌদি আরবের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনের কারণে সেখানে থাকা বৈধ ও অবৈধ অন্য দেশের নাগরিকদের বিতাড়নের নীতি নিয়েছে দেশটির সরকার। এখন আর সাধারণ ক্ষমা করে পুনরায় বৈধ হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে না সৌদি আরব সরকার। এ পরিস্থিতিতে গত বছরের শেষ দিক থেকে সৌদিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস পাসপোর্টের মেয়াদ উত্তীর্ণ, হুরুব হয়ে যাওয়া, অবৈধ হয়ে যাওয়া অনিবন্ধিত বাংলাদেশিদের তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করে। দূতাবাসের কর্মকর্তাদের ভাগ করে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বাংলাদেশিদের নিবন্ধনের আহ্বান জানানো হয়। তখন থেকেই সৌদিতে বাংলাদেশ দূতাবাস ও কনসুলেট প্রতিনিয়ত এসব বাংলাদেশির তালিকা প্রণয়নে কাজ করছে।

সৌদি আরব বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে। শুরুতে অবৈধ ও আনডকুমেন্টেড বাংলাদেশীদের নিয়ে আসতে বলছে। তারপর হয়তো বৈধভাবে যেসব বাংলাদেশি রয়েছেন, তাদের বিভিন্ন উপায়ে সৌদিতে ঢোকা কঠিন করে দেবে দেশটি। সৌদি আরবের ২০৩০ ভিশন অনুযায়ী, পুরো সৌদির শ্রমবাজারে ৭০ শতাংশ সৌদি আরবের নাগরিককে নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে দেশটির। এটি বাস্তবায়নে সব দেশের অভিবাসী শ্রমিকদের ক্রমান্বয়ে ছাঁটাই করে নিজ দেশে ফেরত পাঠাবে সৌদি সরকার। এরই মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নেয়া শুরু করেছে সৌদি সরকার। বিশেষ করে করের ক্ষেত্রে।

সৌদিতে বিদেশি কর্মীদের পরিবারের ওপর মাসিক চার্জ আরোপ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ইকামার ফি বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আর আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে টিউশন ফি বাড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি কর বাড়িয়ে দিয়েছে, যার কারণে এরই মধ্যে মিসরের ১১ লাখ নাগরিকসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা সৌদি ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আরো দেশের নাগরিকরা সৌদি ছাড়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছেন। এসব নাগরিকের বেশির ভাগই পেশাজীবী।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *