fbpx
হোম অনুসন্ধান অপরাধবার্তা ‘সরকারি-বেসরকারি প্রজেক্টের কাজ পেতে পেশীশক্তি ও অস্ত্রের ভয় দেখাতেন শামীম’
‘সরকারি-বেসরকারি প্রজেক্টের কাজ পেতে পেশীশক্তি ও অস্ত্রের ভয় দেখাতেন শামীম’

‘সরকারি-বেসরকারি প্রজেক্টের কাজ পেতে পেশীশক্তি ও অস্ত্রের ভয় দেখাতেন শামীম’

0

জি কে শামীম ছিলেন অঘোষিত ‘টেন্ডার কিংটেন্ডারবাজির অন্যতম হোতা ছিলেন এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম (জি কে শামীম)। তাকে বাদ দিয়ে অন্য কেউ মতিঝিল-পল্টন এলাকার সরকারি প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার নিতে পারতেন না। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না সেই জি কে শামীমের। অবশেষে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শামীমকে তার নিকেতনের বাসা ও অফিসে অভিযান চালিয়ে আটক করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এ সময় তার বাসা থেকে বিদেশি মদ, নগদ ১ কোটি ৮০ লাখ নগদ টাকা ও ১৬৫ কোটি টাকার এফডিআরের কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। র‌্যাব ও গোয়েন্দা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

র‌্যাব জানায়, শীর্ষ রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গেও ছিল তার ‘বিশেষ খাতির’। ‘সহযোদ্ধা’ হিসেবে পাশে ছিলেন যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গেও লিয়াজোঁ রক্ষা করে চলতেন তিনি। নিজে যেমন একাধিক বডিগার্ড নিয়ে ঘুরতেন, তেমনি অবৈধ অস্ত্রধারী ক্যাডার বাহিনীও ছিল তার।

র‌্যাবের পরিচালক (মিডিয়া) সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সকাল থেকে আমরা শামীমের বাসা ও অফিসে অভিযান শুরু করি। এ সময় শামীম ও তার সাত জন দেহরক্ষীকে আটক করা হয়। অভিযানে শামীমের অফিস থেকে তার একটি অত্যাধুনিক অস্ত্র ও দেহরক্ষীদের সাতটি শটগান এবং নগদ এক কোটি আশি লাখ টাকা, ১৬৫ কোটি টাকার এফডিআরের কাগজ ও বিদেশি মদের বেশ কয়েকটি বোতল উদ্ধার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির অভিযোগ রয়েছে। আমরা সেসব তদন্ত করছি। তবে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই তাকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া, তার বৈধ অস্ত্র বিভিন্ন সময়ে অবৈধ কাজে ব্যবহারেরও অভিযোগ রয়েছে।

র‌্যাব ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জি কে শামীমের প্রতিষ্ঠানের নাম হলো জি কে বিল্ডার্স। তার প্রধান কাজই ছিল টেন্ডারবাজি করা। রাজধানীর সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, মতিঝিলের রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, রেল ভবন, ক্রীড়া পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, যুব ভবন, কৃষি ভবন, মৎস ভবন, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অদিফতরসহ বেশিরভাগ সংস্থার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। কোথাও টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলে শামীমের জি কে বিল্ডার্স সেখানে দরপত্র ফেলতো। প্রতিযোগিতার জন্য তার পছন্দের লোকজনকে দিয়ে কয়েকটি দরপত্র নিজেরাই ফেলতেন। তার সঙ্গে আলোচনা না করে কেউ দরপত্র জমা দিতে পারতেন না। তার ক্যাডার বাহিনী ঘিরে রাখতো দরপত্রের সব বাক্সো। ই-টেন্ডারেও নিয়ন্ত্রণ ছিল তার। অর্থের বিনিময়ে কিংবা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কাজ দিতে বাধ্য করতেন তিনি।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, যুবলীগ নেতা হিসেবে প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজি করতেন জি কে শামীম। এসব করেই হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রজেক্টের কাজ পেতে সবসময় পেশীশক্তি ও অস্ত্রের ভয়ভীতি দেখাতেন। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও অবৈধ সোর্স থেকে এফডিআরের টাকা পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। চাঁদাবাজির জন্য বিভিন্ন প্রভাবশালীদের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখতেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, তার অবৈধ টেন্ডারবাজি থেকে আয়ের একটি অংশ তিনি দেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ ও মধ্যম সারির কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়মিত মাসোহারা হিসেবে দিতেন। এছাড়া, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অর্থ দিয়ে সেসব অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দিতেন। সমাজের গণমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে তোলা ছবি দেখা গেছে, তার অফিস ও বাসায়ও। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এসব ছবি দিয়ে প্রভাবশালীদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলে প্রভাব খাটাতেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একসময় মির্জা আব্বাসের ঘনিষ্ঠ ছিলেন যুবদল করা জি কে শামীম। ওই সময় মির্জা আব্বাসের পরিচয় দিয়ে তিনি টেন্ডারবাজি করতেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে যোগ দেন যুবলীগে। যদিও যুবলীগের পক্ষ থেকে তার কোনও পদবি নেই বলে দাবি করা হয়েছে। তবে জি কে শামীম নিজেকে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক বলে পরিচয় দিতেন।

সূত্র জানায়, দশ বছর আগে আওয়ামী লীগের প্রথম টার্মে জি কে শামীম দুবাইপ্রবাসী শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের হয়ে কাজ করতেন। জিসানকে টেন্ডারবাজির নির্ধারিত কমিশন দিয়ে দিতেন। এরপর ধীরে ধীরে তার সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন যুবলীগের বর্তমান ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়ার সঙ্গে। তাদের সঙ্গে মিলেমিশে পুরো টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেন জি কে শামীম।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সম্মানদী ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত আফসার উদ্দিন মাস্টারের মেজো সন্তান শামীম। তার ভাই গোলাম হাসিব নাসিম জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। গ্রামে জন্ম হলেও তার বেড়ে ওঠা বাসাবো ও সবুজবাগ এলাকায়। বাসাবোর কদমতলা, ডেমরা, দক্ষিণগাঁও এলাকায় তার একাধিক বাড়ি রয়েছে। গুলশান, নিকেতন ও বনানী পুরনো ডিওএইচএস এলাকায় তার একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে। গ্রামের বাড়ি সোনারগাঁও উপজেলা, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় তার কোটি কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর গুলশান থানাধীন নিকেতনের ৫ নম্বর সড়কের ১৪৪ নম্বর ভবন জি কে বিল্ডার্স অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড-এর আলিশান অফিস। চারতলা ভবনের পুরোটাই অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যান জি কে শামীম। নিজের নিরাপত্তার জন্য ৭-৮ জন অস্ত্রধারী দেহরক্ষীও সব সময় তার সঙ্গে চরাচল করতো।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, জি কে শামীমের জি কে বিল্ডার্সের বর্তমানে অন্তত হাজার কোটি টাকার কনস্ট্রাকশনের কাজ চলছে বলে জানা গেছে। বিশেষ সূত্রে পাওয়া একটি নথিতে জানা গেছে, জি কে বিল্ডার্স বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতাল, মিরপুর ৬ এ, মহাখালী ডাইজেস্টিভ, অ্যাজমা সেন্টার, ক্যানসার হাসপাতাল, সেবা মহাবিদ্যালয়, বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রামে কমপ্লেক্স, সচিবালয়, সচিবালয় কেবিনেট ভবন, এনবিআর, নিউরো সায়েন্স, বিজ্ঞান যাদুঘর, পিএসসি, এনজিও ফাউন্ডেশন ও র‌্যাব হেডকোয়ার্টার্সের কনস্ট্রাকশনের কাজ করছে। তবে এসব বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *