fbpx
হোম জাতীয় মায়ের-ডাক’-এর সমাবেশ ‘আমারও ইচ্ছা করে, বাবার সঙ্গে স্কুলে যাই, বাবাকে ফিরিয়ে দিন’
মায়ের-ডাক’-এর সমাবেশ ‘আমারও ইচ্ছা করে, বাবার সঙ্গে স্কুলে যাই, বাবাকে ফিরিয়ে দিন’

মায়ের-ডাক’-এর সমাবেশ ‘আমারও ইচ্ছা করে, বাবার সঙ্গে স্কুলে যাই, বাবাকে ফিরিয়ে দিন’

0

গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের ফিরে পেতে রাস্তায় দাঁড়িয়েছে তাঁদের সন্তানেরা ,লামিয়া এখন শিশু থেকে কৈশোরে। কিন্তু বাবাকে দেখে না ১০ বছর। বাবার খোঁজের দাবি জানিয়ে অনেকের সঙ্গে সে-ও বেশ কয়েকবার দাঁড়িয়েছে রাস্তায়। আজ শনিবারও তেমনি দাঁড়িয়েছে। বাবার ছবি হাতে নিয়ে অঝোরে কাঁদছিল কিশোরী লামিয়া ইসলাম। অন্য বন্ধুদের মতো তাঁরও ইচ্ছা করে বাবার হাত ধরে হাঁটতে, স্কুলে যেতে। কিন্তু বাবা কোথায়, বাবাকে ফিরিয়ে দিতে অনুরোধ জানিয়েছে সে।
লামিয়া কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘আমার বাবার নাম কাউছার। ১০ বছর হয়ে গেল, আমি আমার বাবাকে খুঁজছি। আমার খুব ইচ্ছা করে, বাবার হাত ধরে হাঁটব। আমার বন্ধুরা তাদের বাবার সঙ্গে স্কুলে যায়। আমারও ইচ্ছা করে, বাবার সঙ্গে স্কুলে যাই। আমি কেন পারি না? আমি কি আমার বাবার সঙ্গে স্কুলে যেতে পারব না?’

লামিয়ার মতো গুমের শিকার মো. সোহেলের ছোট্ট মেয়ে সাফা কাঁদতে কাঁদতে বলছিল, ‘আর কত দিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমার বাবাকে ফেরত চাইব? বাবাকে ছাড়া আমার একদম ভালো লাগে না। আমার একটাই দাবি, আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন। আমি আর কিছু চাই না। আমি শুধু বাবাকে চাই।’
গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আজ শনিবার প্রতিবাদী সমাবেশ করেছে। সেখানে শিশু সাফা কিংবা লামিয়া নয়, তাদের মতো আরও ৩৫টি গুম হওয়া পরিবারের স্বজনেরা অংশ নিয়েছেন। গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ পালন উপলক্ষে এ সমাবেশ হয়।
গুমের শিকার ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না
গুমের শিকার ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাছবি: প্রথম আলো
গুম হওয়া সন্তানের ছবি হাতে মা-বাবা, গুমের শিকার ভাইয়ের ছবি হাতে ভাইদের একটাই দাবি, অবিলম্বে তাঁদের স্বজনদের মুক্তি দিতে হবে।
অবশ্য মায়ের ডাকের সমাবেশে যোগ দিয়েছেন রাজনৈতিক নেতা, মানবাধিকারকর্মীসহ দেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরাও। তাঁদের ভাষ্য, ২০০৯ সালের পর বাংলাদেশে গুমের ঘটনা ব্যাপক রূপ নিয়েছে। এ সময়ে সাধারণ মানুষ, বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ও ভিন্নমতের ব্যক্তিরা গুমের শিকার হয়েছেন, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য পরিচয় দিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর অনেকেরই কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না।
বক্তারা আরও বলেন, এক যুগের বেশি সময় ধরে গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানালেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যেসব সদস্য গুমের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান তাঁরা।
আর কত দিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমার বাবাকে ফেরত চাইব? বাবাকে ছাড়া আমার একদম ভালো লাগে না। আমার একটাই দাবি, আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন।
সাফা, গুমের শিকার মো. সোহেলের ছোট্ট মেয়ে
গুমের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার জন্য তদন্ত কমিশন গঠন করার দাবি জানান মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক নূর খান। তিনি বলেন, ‘কেউ কিন্তু আইনের ঊর্ধ্বে থাকবেন না। বারবার বলেছি, কারা গুমের ঘটনার জন্য দায়ী, তাদের চিহ্নিত করেন। কিন্তু বছরের পর বছর দাবি জানানোর পরও তদন্ত কমিশন হয়নি।
গুমের শিকার ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই সরকার এখন বেশ বিপদে আছে। সরকারের প্রতি দেশের মানুষের কোনো সমর্থন নেই। বিদেশেও তাদের সব সমর্থন চলে গেছে। এই ১৪-১৫ বছর ধরে গুম, খুন অপহরণ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করেও ব্যর্থ সরকার টিকতে পারছে না।
গুম হয়েছেন এমন ৩৫টি পরিবারের স্বজনেরা প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেন
গুম হয়েছেন এমন ৩৫টি পরিবারের স্বজনেরা প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেনছবি: প্রথম আলো
স্বাধীনতা আপনাআপনি আসে না মন্তব্য করে প্রখ্যাত আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, ‘আমাকেও গুম করা হয়েছিল। পরে বলা হয়, আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু গ্রেপ্তার করার নিয়ম আছে। সেগুলোর কোনো কিছু মানা হয়নি। রাতের অন্ধকারে এসে আমাকে মাঝরাতে জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়া হয়। আমার চোখ বেঁধে ফেলা হয়েছিল। এটা আমাদের বাংলাদেশ। আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে হবে। স্বাধীনতা আদায় করে নিতে হয়। যে নিপীড়ক, সে স্বেচ্ছায় ক্ষমতা হস্তান্তর করে না।’
মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা আক্তার বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে গুম ও খুন ব্যাপকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। তখন সব বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন করা হয়। যারা গুমের সঙ্গে জড়িত, তাদের প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনা হবে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন নারীনেত্রী ফরিদা আক্তার, বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের পরিচালক নাসির উদ্দিন এলান, মায়ের ডাকের মঞ্জুর হোসেন ঈসা, আফরোজা ইসলাম প্রমুখ।

 

 

 

 

 

 

প্রথম আলো

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *