fbpx
হোম বিনোদন ‘ধর তক্তা, মার পেরেক’ পদ্ধতিতে নাটক নির্মাণ হচ্ছে
‘ধর তক্তা, মার পেরেক’ পদ্ধতিতে নাটক নির্মাণ হচ্ছে

‘ধর তক্তা, মার পেরেক’ পদ্ধতিতে নাটক নির্মাণ হচ্ছে

0

বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে টেলিভিশন ও অনলাইন প্লাটফর্মের বিষয়ে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। সেখানে তিনি ভালো নাটক বা সিনেমার অভাব এবং দর্শক বিমুখতার কারণ তুলে ধরেন। নিচে চেঞ্জ টিভি পাঠকদের জন্য পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো।

‘‘টেলিভিশনের অসুখ
এবং একাল সেকাল….
……………………………………..
আর ১টা বছর পার হলে,টেলিভিশনে আমার মুখ দেখানো ২৫ বছর পূর্ণ হবে।

এই লাইনটি পড়ার সাথে সাথে অনেকেই আমার বয়স বা শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে কিছু কথা বলতে পারেন। যেমন অনেকই আমাকে ইদানিং প্রায়ই বলে থাকেন,আমার শরীরটা একটু ভারী হয়ে গেছে, মাথার চুল পাতলা হয়ে গেছে,দেখতে আগের মত নেই….
মোট কথা আমার ভেতর সেই কঁচি (!) ভাবটা নেই।

এটাই বাস্তবতা।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে এরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক।

অনেকে আবার হলিউড বলিউডের অনেক অভিনেতাদের সাথেও তুলনা করতে কুন্ঠা বোধ করেন না। তাঁরা যদি দীর্ঘ বয়স পর্যন্ত নিজেদেরকে সুন্দর ও সুঠাম দেহী রাখতে পারেন, আমি বা আমরা কেন পারছিনা ?? এই দীর্ঘ লেখাটি পুরোটা পড়লে,অনেক প্রশ্নেরই জবাব মিলতে পারে। বোঝা যাবে আমরা কোথায়, কিভাবে কাজ করছি।

তবে এই লেখাটি আমার টেলিভিশন/সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষগুলোকে উদ্দেশ্যে করে লেখা। এর বাইরে যারা পড়বেন,টেলিভিশন সম্পর্কে তাঁদের কিছু নতুন ধারনা হতে পারে।

কারন এটা দর্শকের প্রতিদিনের প্রশ্ন……‘‘আগের মত সুস্থ, সুন্দর, রুচিশীল, জনপ্রিয় নাটক এখন কেন নির্মিত হচ্ছে না ?” আমাদের সিনেমার এক সময় সোনালী অতীত ছিল।
কিছু অযোগ্য এবং স্বার্থপর লোকের আধিপত্যে আমরা সে অতীত হারিয়েছি।

পরবর্তীতে টেলিভিশন নাটক দেশের অধিকাংশ মানুষের সুস্থ বিনোদনের মূল ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় এবং আস্হা অর্জন করে। বিভিন্ন সময়ে নানান সংকট পার করে টেলিভিশন শিল্প একটা শক্ত অবস্হান তৈরী করতে পারলেও পূর্ণাঙ্গ পেশাদ্বারিত্ব কখনই এই মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

ফলে টেলিভিশন নাটকও এক সময় বাংলা সিনেমার মতই, কিছু সুবিধাভোগী অযোগ্য মানুষের দখলে চলে যায়। সুস্হ সুন্দর পরিশীলিত টেলিভিশন নাটকের ধারাটি নানান চক্রে পড়ে, নিজস্ব শিল্প ও সৌন্দর্য হারাতে থাকে। সেগুলো আমাদের চোখের সামনেই।

দিনের পর দিন, বছরের পর বছর ধরে, শিল্পের খোলস থেকে টেনে বের করে নাটককে শুধুই ব্যবসার উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়। অধিকাংশ চ্যানেল, এজেন্সী,প্রডিউসার, ডিরেক্টর, কলাকুশলী, শুধু নিজেদের স্বার্থ আর ব্যাবসা দেখতে গিয়ে, প্রকৃত ভালো আর মন্দের পার্থক্য গুলিয়ে, টেলিভিশন নাটককে অখাদ্যে পরিনত করেছে।

আস্তে আস্তে টেলিভিশন নাটককে,শিল্পের মাপ কাঠি থেকে বের করে এনে, ভিউ এর মাপ কাঠিতে মাপা শুরু হয়েছে। ভিউ আর টি আর পির দোহাই দিয়ে, এর চক্করে পড়ে আমরা আমাদের নাটকের মান কোথায় নামিয়ে ফেলেছি, সেটাও মনে রাখা দরকার।

ইদানিং ভালো টেলিভিশন নাটকের সংখ্যা এতটাই কমে গেছে যে, তা দিয়ে এত বড় একটা ইন্ডাস্ট্রি চলতে পারে না। এক্ষেত্রে সকলেরই সমান দায় রয়েছে।
শুধু ভিউ না দেখে, সংশ্লিষ্ট সকলেরই নাটকের মান টা দেখা অনেক বেশী জরুরী বলে আমি মনে করি।

প্রত্যেকটি টেলিভিশন চ্যানেল নাটক বা বিভিন্ন কন্টেন্ট দিয়ে আয়ের নতুন পথ খুঁজে পেতে ইউটিউব চ্যানেল খুলে বসেছে। সেখানে ভিউ ব্যাবসা বেশ জমেও উঠেছে।
ব্যবসার কায়দা যেমন বেড়ে চলেছে নানা ভাবে,সেই সাথে নাটকের বাজেটও কমেছে অবিশ্বাস্য গতিতে।

কেউ হয়তো বিশ্বাসই করবেন না,১০ বছর আগে নাটকের যে বাজেট ছিল, এখন তা চার ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে,যে বাজেট টুকু বরাদ্দ হচ্ছে চ্যানেল থেকে, কন্ট্রাক্ট প্রথার প্যাঁচে পড়ে, অর্ধেক চলে যাচ্ছে এজেন্সী,প্রডিউসার ও ডিরেক্টরদের পকেটে। কোন মত বাকী টাকা টুকু দিয়ে, ‘ধর তক্তা, মার পেরেক’ পদ্ধতিতে নাটক নির্মাণ হচ্ছে।

সম্মানিত অধিকাংশ ডিরেক্টরগন এখন নাটক নির্মাণের কন্ট্রাক্টর হয়ে গেছেন।
যে কারনে বাজেট স্বল্পতার জন্য, তিনদিনের কাজ একদিনে করতে গিয়ে কলাকুশলী সহ সকলের প্রাণ ওষ্ঠাগত। নাটকের গুনগত মান রক্ষা, এই কার্য ধারাবাহিকতায় সম্পূর্নই অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

হাতে গোনা কিছু অভিনয় শিল্পীর ভিউ আর টি আর পি কে পুঁজি করে চলছে এই নাটক ব্যবসা। তাতে করে অনেক যোগ্য অভিনেতা অভিনেত্রী, ডিরেক্টর, প্রডিউসাররা হচ্ছেন বঞ্চিত।

আর যোগ্য নাট্যকাররা তো অপ্রয়োজনীয় বস্তুতে পরিনত হয়ে গেছেন।কারন তথাকথিত নাটক নির্মান করতে কোন স্ক্রীপ্ট লাগে না। সে কারনেই ভালো নাট্যকারের সংখ্যা বাড়েনি। হাতে গোনা কয়েকজন নাট্যকারকে আমরা যাদুঘরে সাজিয়ে রেখেছি।

পেশাগত যোগ্যতা বিচার করে খুবই কম কাজ হচ্ছে। ব্যক্তিগত লেনদেন,অধিকাংশ ক্ষেত্রে নাটককে প্রভাবিত করছে। যার যার সুবিধা বুঝে অধিকাংশ মানুষ চুপ করে আছে, মুখ খোলারও প্রয়োজন বোধ করছে না।

টেলিভিশন নাটকের বিভিন্ন সংগঠনগুলো নানান কার্যক্রম নিয়ে,নানান ব্যাপারে সচেতন থাকলেও, নাটকের বাজেট ও সার্বিক মান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে করনীয় পথ এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি। টেলিভিশন নাটকের দেয়ালে আসলে অনেক আগেই শেষ পেরেক ঠোকা হয়ে গেছে।

দেশী বিদেশী OTT প্লাটফর্ম বা ওয়েব চ্যানেল গুলো আমাদের টেলিভিশনের দুর্বল জায়গা মানে অসুখটা বুঝতে পেরেছে। সেভাবেই তারা আগাচ্ছে।

কে টিকে থাকবে?
টেলিভিশন নাকি OTT প্লাটফর্ম ?? যারা দর্শককে ভালো কিছু দেবে,তাঁরাই টিকে যাবে।

আমাদের দেশে কিন্তু ওয়েব চ্যানেলের দর্শক নেহাতই কম নয়।
আগামী দুই বছরে সব হিসেব কিন্তু গড়মিল হয়ে যাবে। নিশ্চয়ই টেলিভিশন ইন্ড্রাস্ট্রির সাথে সংশ্লিষ্ট সকল মানুষ এবং দর্শক, কেউই চান না, আমাদের টেলিভিশনও সিনেমার মত তলিয়ে যাক।

আমাদের টেলিভিশন গুলো যদি ওয়েব চ্যানেল গুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে আগাতে চায়,টিকে থাকতে চায়,তাহলে বোধ হয় নতুন করে ভাবা খুবই দরকার। টেলিভিশন নাটকের সেই গ্রহন যোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে, নতুন সময়ে টিকে থাকতে, এখন আশু প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা, যোগ্য মানুষ, যোগ্য বাজেট।

যেহেতু দীর্ঘদিন টেলিভিশনে কাজ করছি, টেলিভিশনকে ভালোবাসি,
এই কথা গুলো বলা আমি আমার দ্বায়িত্ব মনে করছি। আমার কথায় কেউ কষ্ট পেলে, আমি ক্ষমাপ্রার্থী।

সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠন,টেলিভিশন চ্যানেল গুলোর সাথে
আলোচনা করে, তার অসুখ সারিয়ে তুললেই, বেঁচে যাবে আমাদের টেলিভিশন নাটক, বাঁচবে টেলিভিশন ।

চঞ্চল চৌধুরী
অভিনেতা
১৩/১১/২০’’

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *