fbpx
হোম বাণিজ্য ডিমও নিম্ন-মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে, ডজন ১৫০ টাকা
ডিমও নিম্ন-মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে, ডজন ১৫০ টাকা

ডিমও নিম্ন-মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে, ডজন ১৫০ টাকা

0

ডিমের দাম ঈদুল ফিতরের আগে কিছুটা কমেছিল। সেসময় ডজনপ্রতি ডিম বিক্রি হচ্ছিল ১৩০ টাকায়। ঈদের পরই পাল্টে যায় পরিস্থিতি। বাড়তে থাকে দামও। সর্বশেষ তিন-চারদিনের ব্যবধানে ডজনপ্রতি ৫ টাকা বেড়েছে। এতে খুচরা বাজারে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি হালি ৫০ টাকা। ডজনপ্রতি এ ডিমের দাম ঠেকেছে ১৫০ টাকায়। মাছ-মাংসের চড়া দামের পর ডিমের বাজারেও এখন চরম অস্বস্তি। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে সহজলভ্য বলে পরিচিতি এ খাদ্যপণ্যও। মঙ্গলবার (১৬ মে) রাজধানীর বেশ কিছু এলাকার দোকান ও বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
ডিম উৎপাদনকারী সমিতির নেতারা বলছেন, খামারে ডিমের দাম বাড়েনি, উৎপাদনও কমেনি। করপোরেট কোম্পানি সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় ডিমের দাম বাড়ছে। আড়তদার ও করপোরেট কোম্পানির সিন্ডিকেটে ডিমের বাজার অস্থিতিশীল বলে অভিযোগ উৎপাদনকারীদের।
আড়তদাররা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, ডিমের সরবরাহ কম। তবে চাহিদা এখন বেশি। সরবরাহ ও চাহিদার এ পার্থক্যের কারণেই দাম বাড়ছে। গ্রামের অনেক খামার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তারা লোকসানে পড়েছেন। এজন্য গ্রামের মোকাম থেকেও ডিম কম আসছে।

সরেজমিন দোকান ও বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরায় প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দরে। এক ডজন নিলে গুনতে হচ্ছে ১৫০ টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি ডিমের দাম পড়ছে সাড়ে ১২ টাকা। যদিও কিছু বাজারে ডজনে ৫ টাকা কম নিতেও দেখা গেছে। তবে সেই সংখ্যা কম।
অন্যদিকে ঢাকার পাইকারি বাজারে ১০০টি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১২০ টাকা থেকে ১১৫০ টাকা দরে। অর্থাৎ প্রতিটি ডিমের দাম পড়ছে সর্বোচ্চ সাড়ে ১১ টাকা। ১০০টি ডিমের দাম তিনদিন আগেও ৫০-৬০ টাকা কম ছিল বলে জানান পাইকারি ব্যবসায়ীরা।বিক্রেতারা বলছেন, রোজার আগে বাজারে ডিমের দাম একদফা অস্থিতিশীল হয়েছিল। সেসময় ডজন ১৫০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। সর্বশেষ এক বছরে ডিমের দাম কয়েক দফায় অস্থিতিশীল হয়েছে। ডজনপ্রতি ডিমের দাম উঠেছিল ১৬০ টাকা। তার আগে কখনো ডিমের দামের এতটা বাড়তে দেখা যায়নি। দামও এতটা ওঠেনি। ডিমের বাজার আবারও একই পথে হাঁটছে বলে মনে করছেন বিক্রেতারা।
ডিমের দাম বাড়ার বিষয়টি উঠে এসেছে ট্রেডিং করপোরেশন ব বাংলাদেশ-টিসিবির তথ্যেও। সংস্থাটি বলছে, বাজারে এক মাসের ব্যবধানে ডিমের দাম ১১ শতাংশ বেড়েছে। বছরের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। গত বছর এসময়ে প্রতি ডজন ডিম ৩৫-৪২ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে, যা এখন ৪৭-৫০ টাকা।
রাজধানীর রামপুরার ভাই ভাই স্টোরের মালিক সফি উদ্দিন বলেন, ‘নির্ধারিত একজন আড়তদারের কাছ থেকে ডিম কিনি। প্রতিদিন তারা ডিম দিয়ে যান। কয়েকদিন ধরে তারা প্রতিদিনই দাম বাড়াচ্ছেন। বেশি দামে কেনায় বাধ্য হয়ে আমাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। সরবরাহকারী তিনদিন আগেও প্রতি ডজন ডিম ১৩৬ টাকায় দিয়েছেন। এখন ডজনপ্রতি দাম নিচ্ছেন ১৪২ টাকা।’

ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরও তারা প্রতি ডজন ডিম ১০০ টাকার মধ্যে কিনেছেন। বর্তমান দামে তাদের জন্য খরচের বাড়তি চাপ তৈরি করছে। বেশি বেকায়দায় পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকজন। বাধ্য হয়ে তারা ডিম খাওয়াও কমিয়ে দিচ্ছেন। তাতে চাপ পড়ছে পরিবারের পুষ্টির যোগানে, যা উদ্বেকজনক।
বাড্ডা এলাকার দোকানে ডিম কিনতে আসা হাসানুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন তো মাছ-মাংসে হাত দেওয়া যায় না। আগে সস্তায় অন্তত ডিম খাওয়া যেতো। পকেটে টান থাকলেই ডিম কিনতাম। এখন সেটাও হচ্ছে না। ফার্মের ডিমও গরিব মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।’
তেজগাঁও আড়তের ডিম ব্যবসায়ী হায়দার আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘রোববার (১৪ মে) দিনগত রাত থেকে ডিমের দাম হুট করে বেড়েছে। তার আগেও দুদিন দাম বেড়েছে। তবে সেটা প্রতি ১০০টি ডিমে ১০-২০ টাকা বেড়েছিল। এভাবে টুকটাক দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। শেষে এখন পাইকারিতে দাম ঠেকেছে ১১৫০ টাকায়।’
তিনি বলেন, ‘এখন ডিমের সরবরাহ কম। সেজন্য দাম বেড়েছে। তবে কি কারণে সরবরাহ কম সেটা স্পষ্ট কেউই জানেন না। শুনেছি- অনেক খামার নাকি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, লোকসান হচ্ছে… এজন্য ডিমও কম।’ ওই আড়তে ডিমের আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘গ্রামের মোকাম থেকে ডিম আসছে কম। সেজন্য দাম বাড়ছে।’
এদিকে, ‘খামারে ডিমের দাম বাড়েনি, উৎপাদনও কমেনি। করপোরেট কোম্পানিগুলো সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এজন্য দাম বাড়ছে’
তিনি বলেন, ‘আমরা ডিম উৎপাদন করলেও দাম নির্ধারণ করতে পারি না। আমরা তো ডিমে ১ টাকাও বাড়তি পাচ্ছি না। আড়তদার এবং করপোরেট কোম্পানি সিন্ডিকেট করছে। তারা দিনে পাঁচ লাখ ডিম উৎপাদন করে থাকেন। যদি ডিমপ্রতি ২ টাকাও দাম বাড়াতে পারেন, তাহলে দিনে ১০ লাখ টাকা বেশি লাভ করতে পারেন। তারাই দাম বাড়িয়েছেন।’
ঢাকার ডিমের আড়তদারদের বড় সংগঠন তেজগাঁও বহুমুখী সমবায় সমিতি। এ সমিতির একজন প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে করপোরেট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা দাম নির্ধারণ করে দেন। সেই দাম আমলে নিয়ে পাইকারি বাজারে দাম ঠিক করা হয়ে থাকে। আগে বিভিন্ন সময়ে যারা ডিমের বাজার অস্থিতিশীল করেছিলেন, তারাই এখনও একই কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন ডিমের দাম কম থাকায় ক্ষতির মুখে পড়ে ছোট ছোট অনেক হ্যাচারি বন্ধ হয়ে গেছে। মুরগির উৎপাদনও কমে গেছে। সেই জায়গা দখলে নিচ্ছে করপোরেট কোম্পানিগুলো। তারা সহজে ডিমের দাম বাড়িয়ে দিতে পারেন। তাদের জন্যই ডিমের বাজারে এমন অস্থিরতা।’

 

 

 

 

 

সূত্র  :  জাগো নিউজ

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *