কে এই ইয়াবার রাজা ফয়সাল ? যার কারণে এলাকা ছাড়া মসজিদের ইমাম !
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বাংলাদেশ এখন অঘোষিত লকডাউন। অদৃশ্য করোনার বিরুদ্ধে চলছে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। তবু থেমে নেই করোনার সর্বনাশা থাবা।
করোনা মহামারির আগে বাংলাদেশ সরকার মাদক, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির উপড় বদ্ধ পরিকর থেকে চালিয়েছিলো অভিযান। কিন্তু অনেকটাই স্থবির হয়েছে করোনা ভাইরাসের করাল থাবায়। এই সুযোগে কক্সবাজারে ইয়াবা সম্রাট নামে খ্যাত ফয়সাল বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। যার নির্যাতনে অতিষ্ট সবাই। এমনকি গ্রাম ছাড়া মসজিদের ইমাম পর্যন্ত।
একের পর এক শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী আটক ও বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলেও এখনো ইয়াবার হাল ধরে বসে আছে ফয়সাল নামের ইয়াবা কারবারী।
অথচ ছোট-বড় ইয়াবা ডনেরা বন্ধুকযুদ্ধে নিহত হয়ে ইয়াবার রাজ্য হিসেবে খ্যাত টেকনাফ শুন্যের কোটায় চলে আসছে। সেই কোটা কালো টাকায় ম্যানেজ করে ইয়াবার রাজা বনে যাওয়া ফয়সাল এখন আবার নতুন আলোচনায় এসেছে মসজিদের ইমামকে নির্যাতন করে। তার নির্যাতনে এক ইমাম মসজিদের চাকরী ছেড়ে দিয়ে নিজ এলাকা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।
জানা গেছে, কক্সবাজার হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার মরিচ্যা ঘোনার মৃত ফজলুল করিমের ছেলে ফয়সাল ও তার পরিবারকে স্থানীয় কিছু অসাধু নেতা ও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা আশ্রয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। মানুষের কৌতুহল, যেখানে ইয়াবা নির্মুল হচ্ছে সেখানে তিনি কেন চালিয়ে যেতে পারছেন। কিভাবে ফয়সাল শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরী করে বহাল তবিয়তে রয়েছে। এলাকার লোকজন এই ইয়াবা ডন অধরা থাকায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
থানা সুত্র জানায়, মরিচ্যা ঘোনার এই সুড়ঙ্গ ভবনের ডন ফয়সালের স্ত্রী পারভীনের বোন জেসমিন ইয়াবা নিয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। তার স্বামী মুফিদ আলমও কয়েকমাস আগে মেরিন ড্রাইভে বন্ধুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। তারপরেও থেমে নেই এই ইয়াবা পরিবার। তার বিরুদ্ধে রয়েছে কক্সবাজার সদর, উখিয়া ও টেকনাফ থানায় একাধিক মামলা ও অভিযোগ। এই ইয়াবা পরিবারের কারনে স্থানীয় মসজিদের ইমাম একই এলাকার নুরুল ইসলামকে চাকরী ছেড়ে এলাকা পর্যন্ত ত্যাগ করতে হয়েছে।
তিনি জানান, গত বছরের মে মাসে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রবিউল হাসানের নির্দেশে মসজিদে নামাজের পর মাদকের বিরুদ্ধে আলোচনা করতে। তখন তিনি সেই নির্দেশনা অনুযায়ী মসজিদে বয়ান করেন। পরক্ষণে, একদিন এশার নামাজের পর ফয়সালসহ তার ভাই মিলে মসজিদে মাদকের বিরুদ্ধে কেন কথা বলেছেন বলে উক্ত ইমামকে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেয়। এরপর ফয়সাল গুলি করে ইমামকে মেরে ফেলার নির্দেশ দেয়। পরে এলাকার লোকজন ও মুসল্লিরা এগিয়ে আসলে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ব্যাপক মারধর করে পালিয়ে যায়। তখন নুরুল ইসলামকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। উক্ত ঘটনায় তাৎক্ষনাত টেকনাফ থানায় অভিযোগ দেয়া হয়।
এই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে আসেন টেকনাফ থানার ওসি তদন্ত এবিএম দোহা। তিনি ফয়সালের বাড়িতে গিয়ে ভাংচুরও চালায় এবং ঘটনার সত্যতা পায়। এরপর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রবিউল হাসান একাধিক বিচার সালিশ করেও ঘটনার সঠিক বিচার করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ইউএনও অসহায় হয়ে ইমামকে মসজিদ থেকে চাকরী ছেড়ে দিতে বলেন।
মসজিদের ইমাম নুরুল ইসলাম বলেন, প্রথমে পুলিশ তার পক্ষে কথা বললেও পরে টাকার বিনিময়ে ফয়সালের পক্ষ হয়ে যায়। এরপর থানা থেকে সরাসরি বলে দেন আমাকে থানায় না যেতে। ইমাম অসহায় হয়ে মসজিদের চাকরী ছেড়ে দিয়ে নিজ মরিচ্যা ঘোনা এলাকা থেকে এখন লেদায় গিয়ে মসজিদে চাকরী করছেন। ইয়াবা ব্যবসায়ী ফয়সাল, এভাবে আরও অনেক মানুষকে নির্যাতন করেছে বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কোন বাধা বিপত্তি আসলে তারা টাকার বিনিময়ে সব নিয়ন্ত্রণ করে ফেলে। তাই এলাকায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথাও বলতে পারেনা।
এদিকে জানা যায়, হ্নীলা মরিচ্যা ঘোনার ইয়াবা ডন ফয়সালের বিলাসবহুল বাড়ি। তার ঘরের বাথ রুমের সাথে বিশাল সুড়ঙ্গ প্রকাশ পেয়েছে। এরপর আইন শৃংখলা বাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সত্যতাও পায়। তারপরেও কি অদৃশ্য কারণে ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ তা ভাবিয়ে তুলেছে এলাকাবাসীকে। এই ফয়সালের রয়েছে গাড়ি-বাড়ি, কক্সবাজার শহরের আপন টাওয়ারের সামনে হোটেল প্রিন্স নামে হোটেল, চট্টগ্রামে হরেক ব্যবসা ও এলাকায় রয়েছে এদের বিপুল জায়গা-জমিসহ নামে বেনামে সম্পত্তি।
এছাড়া কক্সবাজার লিংক রোডসহ আরও কয়েকটি এলাকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি ভবন। মরিচ্যা ঘোনার ফয়সাল ভবন, যেখানে রয়েছে সুড়ঙ্গ। এত বছর ধরে ইয়াবার টাকায় নির্মিত সুড়ঙ্গ ভবনটি পুলিশের চোখ এড়িয়ে গেলো কিভাবে ? বর্তমানে এসব সুড়ঙ্গ ও ইয়াবা কাহিনী ধামাচাপা দিতে মাঠে নেমেছে ফয়সাল ডনের লোকজন কোটি টাকার মিশন নিয়ে। আবার এসব অভিযোগ ধামাচাপা দিতে তার স্ত্রী পারভিন হ্নীলা কমিউনিটি পুলিশিং এর সাধারণ সম্পাদক চাঁদা দাবী করেছে বলে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ীতে একটি অভিযোগ দিয়েছে।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ জানান, এসব চিহ্নিত মাদক কারবারীদের আটকে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেলেও পুলিশের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার কোন সুযোগ নেই।
ইয়াবা পাচারের মামলা থেকে রক্ষা এবং ইয়াবার তকমা লুকাতে কোটি টাকার মিশন নিয়ে পুলিশের নিকট না গেলেও দালাল ফড়িয়ার দ্বারস্থ হয়েছে। ফলে ফয়সাল কিছুদিন আত্মগোপনে গেলেও তার স্ত্রী সামাল দেয় বিভিন্নভাবে। স্থানীয়রা জানান, ইয়াবা ডন ফয়সালের ঘরের বাথরুমের সাথে যে সুড়ঙ্গটি রয়েছে সেটি প্রতিবেশী রহমত উল্লাহর ঘরে গিয়ে আরেক প্রবেশ মূখ রেখেছে।
এলাকাবাসীর দাবি, হয়ত এসব ইয়াবা ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করা হোক, না হয় পরিবেশ পরিস্থিতি অনেক খারাপ হয়ে যাবে। সচেতন মহল জানিয়েছেন, কিছু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনের সঙ্গে ইয়াবা সিন্ডিকেটের আঁতাত ও সম্পৃক্ততার কারণে মাদকবিরোধী এই কঠিন অভিযানেও ফয়সালদের মতো ডন বেঁচে আছে। এসব ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা না হলে হাজারও মাদক বিরোধী অভিযানে সফলতা আসবে না। কারণ, এসব ইয়াবা ব্যবসায়ীর রয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি এবং তাদের সঙ্গে রয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানের রাঘববোয়াল ইয়াবা সিন্ডিকেট ব্যাবসায়ীরা।
স্থানীয়রা এই আলোচিত ইয়াবা সিন্ডিকেট এর কবল থেকে এলাকাকে রক্ষা ও দ্রুত গ্রেপ্তার করতে আইনশৃংখলা বাহিনী ও সরকারের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানান। তা নাহলে মাদক বিরোধী অভিযান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে এবং সরকারের ভাবমূর্তী ক্ষুন্ন হতে পারে।