fbpx
হোম অন্যান্য ইসলামী আদর্শ সমাজের অন্যতম সোপান নারী শিক্ষা
ইসলামী আদর্শ সমাজের অন্যতম সোপান নারী শিক্ষা

ইসলামী আদর্শ সমাজের অন্যতম সোপান নারী শিক্ষা

0

শিক্ষা সফলতার সোপান। উন্নত জীবনের প্রতিশ্রুতি। মানবজীবনের অপরিহার্য অংশ। নারী-পুরুষ সবাই এই শিক্ষার আওতায়। ইসলামে পুরুষের মতো নারীদেরও শিক্ষা লাভের পূর্ণ অধিকার রয়েছে। নারীদের শিক্ষা বা জ্ঞান অর্জনের জন্য ইসলাম যেভাবে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করেছে, তাকিদ দিয়েছে, পৃথিবীর অন্য কোনও ধর্মে তা পরিলক্ষিত হয় না।

মানবতার প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সা. ‘জ্ঞানার্জনকে প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য ফরজ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। পবিত্র কুরআনে শিক্ষাকে চক্ষুষ্মান ব্যক্তি ও আলোর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে ­ ‘বল, অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান অথবা অন্ধকার ও আলো কি এক ?’ (সূরা রাদ, আয়াত‌: ­ ১৬)  

একটি পরিশীলিত, সুষ্ঠু-সুন্দর ও আদর্শ সমাজ গঠনে শিক্ষার বিকল্প নেই। সুশিক্ষা মানুষকে বিনয়, শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার পথ-নির্দেশ করে। পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ জ্ঞানার্জনের যে নির্দেশ এসেছে, জ্ঞানীদের যে সর্বোচ্চ মর্যাদা বর্ণনা করা হয়েছে, তা শুধু পুরুষদের জন্য নয়। নারী-পুরুষ সবার জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য। ক্ষেত্রবিশেষে নারী তার উৎকর্ষ দ্বারা পুরুষের চেয়ে বেশি অবদান রাূতে পারে।

আদর্শ মানুষ গঠনের মধ্য দিয়ে সমাজ গঠনের রুপ দিতে পারেন বিস্তর অবদান। কেননা ‘মা’-ই তার সন্তানের প্রথম শিক্ষক। সুশিক্ষিতা মা স্বভাবতই জ্ঞানী, নিষ্ঠাবতী, নম্র-ভদ্র ও পরিশ্রমী হয়ে থাকেন। শিক্ষিত মায়ের এসব গুণ আপনা-আপনিই সন্তানের মাঝে সঞ্চারিত হয়। ওই জ্ঞান-গুণ অন্বেষণে প্রত্যেককেই পবিত্র কুরআনের ভাষায় আল্লাহ দরবারে প্রার্থনা করতে হবে। বলতে হবে ­ ‘রাব্বি যিদ্নি ইল্মা’ অর্থাৎ ‘হে পালনকর্তা! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।’ (সূরা ত্ব-হা, আয়াত: ১১৪)

ইসলাম নারীকে সমাজে একজন আদর্শ মা, গৃহিণী ও উত্তম পত্নী হিসেবে দেখতে চায়। দাম্পত্য ও সংসার জীবনে স‍ুখী হওয়া, সন্তানকে স্তন্যদান, প্রতিপালন ও মানসিক বিকাশে সাহায্য করা, আদর্শ মানুষরুপে গড়ে তোলা, পিতৃহীন সন্তানকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করা- এ ধরনের শিক্ষা প্রত্যেক নারীর জন্য অপরিহার্য। এছাড়া শিশুর সুশিক্ষা, চরিত্র ও ব্যক্তিত্ব গঠনে মায়ের ভূমিকাই প্রধান। একজন ঈমানদার মা তার সার্বক্ষণিক সর্বপ্রকার কাজের মধ্য দিয়ে ইসলামের সঠিক ধারণা ও শিক্ষা সন্তানের মাঝে সঞ্চারিত করতে পারেন।

ইসলাম নারী শিক্ষাকে কখনও  ছোট করে দেখেননি। পবিত্র কুরআনে সূরা ‘আলাক’-এর প্রথম আয়াতে শিক্ষার প্রতি তাকিদ ও নির্দেশনা রয়েছে। এ তাকিদ শুধু পুরুষের জন্য নয়, নারীদের জন্যও। বিয়ের পর নারীর জীবনে এ শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি কার্যকর। পারিবারিক জীবনে একজন নারীই পরিপূর্ণ শান্তি-স‍ুখ দিয়ে পারিবারিক জীবনকে সুন্দর, সার্থক ও সমৃদ্ধ করে তুলতে পারে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে ­ ‘তারা তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের পোশাক।’ (সূরা বাকারাহ্, আয়াত ­ ১৮৭)

নবী হযরত মুহাম্মদ সা. শিক্ষা ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষকে সমান মর্যাদা দিয়েছেন। তিনি পুরুষদের যেভাবে তালিম দিতেন, মহিলাদেরও সেভাবে দিতেন। মহিলাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি তাদের জন্য একটি সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েিছলেন। এ সময় কেবল তাদের প্রশিক্ষণ দিতেন। ঈদের ময়দানে দেখা যেত তিনি পুরুষদের জন্য ভাষণ শেষ করে নারীদের সমাবেশে চলে যেতেন, বক্তব্য রাখতেন। এছাড়াও তিনি সপ্তাহের একটি বিশেষ দিনে নারীদের কাছে বয়ান করতেন এবং নানা প্রশ্নের উত্তর দিতেন। এমনকি নারীদের সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য অভিভাবকদের উৎসাহিত করেছেন।

হযরত আবু সাঈদ খ‍ুদরি রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘একবার মহিলারা এসে নবী করীম সা.-কে বলল, আপনার সাহচর্যে পুরুষরা আমাদের ওপর প্রাধান্য পেয়ে গেল। তাই আপনি নিজের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট করে দিন। রাসূলুল্লাহ্ সা. তাদের আবদার রক্ষা করলেন এবং তাদের কাছে উপস্থিত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নির্দেশ ও উপদেশ প্রদান করলেন।’ (বুখারী)

এছাড়াও নবী সা.-এর যুগে যে জ্ঞান চর্চার মজলিস অনুষ্ঠিত হতো মহিলারা অদূরে পর্দার অন্তরালে উপস্থিত থেকে উপকৃত হতেন। ইসলাম সম্পর্কে নির্ভুল জ্ঞান অর্জনই ছিল এসব মজলিসে উপস্থিত হওয়ার ম‍ুখ্য উদ্দেশ্য। অনেক মহিলা রাসূল সা. এর ম‍ুখে পবিত্র কুরআন পাঠ শুনে ম‍ুখস্থ করে ফেলতেন। রাসুলে করীম সা. মহিলাদের দ্বীন ইসলাম শিক্ষা লাভের ব্যাপারে বিশেষ চিন্তা বিবেচনা করতেন ও সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন। কোন সময় যদি তিনি মনে করতেন যে, মহিলারা কথা ঠিকমতো শুনতে পারেনি, তাহলে পুনরাবৃত্তি করতেন।

মহানবী সা. এর সময়ে হযরত আয়েশা রা. ছিলেন একজন বিশিষ্ট শিক্ষিত মহিলা। তিনি পবিত্র কুরআন, হাদীস ও ইসলামী শরিয়াহ্ আইন প্রভৃতি বিষয়ে অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন। শুধু নারীরাই নয়, পুরুষদেরও শিক্ষয়িত্রী ছিলেন এবং বড় বড় সাহাবী তাবেয়ী তাঁর নিকট থেকে হাদীস, তাফসির ফিকাহ শিক্ষা করতেন। সর্বাধিক হাদীস বর্ণনাকারী আটজন সাহাবীর মধ্যে হযরত আয়েশা রা. ছিলেন তৃতীয়া। ‘আসমাউর রিজাল’ নামক গ্রন্থগুলোতে মহানবী সা. এর লক্ষাধিক সাহাবার মধ্যে এক হাজার সাহাবার জীবনবৃত্তান্ত লেখা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১৫০ জনই মহিলা। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, রাসূলুল্লাহ্ সা.-এর যুগে নারীশিক্ষার ব্যাপক মর্যাদা ছিল।

মানবতার অনুশাসন ও শিক্ষা ব্যতীত নারীর প্রকৃত মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত হবে না। মেয়েদের জন্য স্বতন্ত্র আদর্শ স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। মানসম্পন্ন সাধারণ শিক্ষা ও জাগতিক বিষয়সমৃদ্ধ স্বতন্ত্র শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানও প্রতিষ্ঠা করা উচিত।

লেখক: মোমেনাতুল জান্নাত।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *