হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে একঝোলা আফসোস!
১.
নিন্দুকেরা যাই বলুক বা আমার পছন্দ না হোক, তাতে কোন আসে যায় না, একথা যৌবনবতী ধান গাছের মতো সত্য যে, হুমায়ূন আহমেদ হাজার বছরের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক। খুব সহজ করে আমাদের চারপাশের সাধারণ বিষয়গুলো তিনি অন্যরকমভাবে উপস্থাপন করেছেন। শহুরে উচ্চবিত্ত অনেকের আলমিরাতে হুমায়ূনের বই রাখা একটা ফ্যাশন হলেও, তিনি মূলত মধ্যবিত্তেরই প্রতিনিধি।
তাঁর আজ জন্মপ্রহর। আমার সঙ্গে স্যারের দুটি অসাধারণ স্মৃতি কথা জানানোর লোভ সামলাতে পারছিনা ।
দিন তারিখ মনে নেই। সম্ভবত ২০০৯ কি ২০১০ । হুমায়ূন আহমেদের সহকারী পরিচয় দিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে এলেন একজন । তখন আমি দিগন্ত টেলিভিশনে।
সাক্ষাতের পর জানলাম, আগন্তুক আমার এলাকার মানুষ। তিনি হুমায়ূন স্যারের বেশ ক’টি নাটক এবং একটি সিনেমায় সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। প্রমাণ হিসেবে নাটকের সিডিও নিয়ে এসেছেন।
“এলাকার ছোট ভাই হিসেবে আপনার কাছে এসেছি। প্লিজ আমার জন্য কিছু করেন। আসলে স্যারের সঙ্গে পারটাইম কাজ করি। কিন্তু আমার একটা স্থায়ী চাকরি দরকার।”
আমার সঙ্গে কথা বলতেই বলতেই তিনি মোবাইল ফোনের বাটন টিপে একজনকে কল দিলেন।
“ স্যার, মানিক ভাইয়ের কাছে এসেছি। উনি আমার এলাকার বড় ভাই। দিগন্ত টিভিতে নিউজে কাজ করে। আপনি যদি একটু বলে দেন। আমার জবটা হয়ে যাবে।”
মানিক ভাই, কথা বলেন, হুমায়ূন স্যার…উপরের কথাগুলো বলেই ফোনটা আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন।
– স্যার, স্লামালাইকুম।
– হ্যা, মানিক, ছেলেটা খুব ভালো । সুযোগ থাকলে তোমাদের প্রোগ্রাম বিভাগে নিয়ে নাও। ও আমার সাথে বেশ কিছু কাজ করেছে।
– স্যার, ঠিক আছে, আমি চেষ্টা করবো। আমি আমার কর্তৃপক্ষকে বলবো।
– ভালো থেকো, সময় করে ওর সঙ্গে একদিন এসো।
এতটুকুই কথা। কিন্তু ভালো লাগার একটা আবেশ ছড়িয়ে গেলো বুকের ভেতর।
২.
দ্বিতীয় স্মৃতিটা ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারীর । ওই বছরই মৃত্যুবরণ করেন হুমায়ূন স্যার। সেবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় স্টুপিড শিক্ষক, নামে আমার একটা বই বের হয়। বইটি ব্যাপক আলোচিতও হয়। এমনকি তরুণদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিক্রির তালিকায় চলে আসে।
একদিনের কথা। বইমেলায় শিল্পতরু’র স্টলে বসে আছি। একজন এসে জানালেন তিনি অন্যপ্রকাশ থেকে এসেছেন। স্টুপিড শিক্ষক বইয়ের বিষয়ে কথা বলার জন্য হুমায়ূন স্যার পাঠিয়েছেন। প্রকাশক তখন আমাকে দেখিয়ে বললেন, ওই যে লেখক, কথা বলেন তার সঙ্গে।
– ভাই, হুমায়ূন স্যার আপনার বইটা পড়েছেন। আপনি স্যারকে নিয়ে বেশ কিছু কথা বইয়ে লিখেছেন, সেটা স্যার দেখেছেন।
– হ্যা, তো কি হয়েছে, বলুন তো ?
– না, স্যার বললেন, ছেলেটার সাহস তো কমনা ! আমার ব্যক্তিজীবন নিয়ে ল্যাখে, ওকে একটু দেখা করতে বইলো ।
– ও আচ্ছা, ঠিক আছে ।
– ভাই, আপনি কিন্তু জরুরী ভিত্তিতে দেখা কইরেন।
লোকটা চলে গেল। আমি ভাবতে লাগলাম, স্যারের সঙ্গে কি দেখা করবো ? অবশেষে চিন্তা করলাম, না, করবো না ।
৩.
ওই বছরের ১৯ শে জুলাইয়ে মারা গেলেন স্যার। তখন খুব কষ্ট এবং আফসোসের দহন হলো বুকের ভেতর। এখনও সেই উসখুস নিজের মধ্যে। ইস্, কেন যে দেখা করলাম না। কি বলতেন তিনি ? গালি দিতেন, উৎসাহ দিতেন, না অন্যকিছু করতেন। যা-ই বলতেন, তা-ই তো আমার অভিজ্ঞতাকে দৈর্ঘ্য-প্রস্থে বড় করতো !