fbpx
হোম অন্যান্য হযরত ওসমান (রা.)’র ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এখনো সচল !
হযরত ওসমান (রা.)’র ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এখনো সচল !

হযরত ওসমান (রা.)’র ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এখনো সচল !

0

হযরত ওসমান (রা.) ছিলেন ইসলামের তৃতীয় খলিফা। ৬৪৪ থেকে ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সময়ে খিলাফতে অধিষ্ঠিত ছিলেন তিনি। খলিফা হিসেবে তিনি ৪ জন খুলাফায়ে রাশেদিনের একজন। ওসমান আস-সাবিকুনাল আওয়ালুনের (প্রথম পর্বে ইসলাম গ্রহণকারী) অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও তিনি আশারায়ে মুবাশশেরা’র একজন এবং সেই ৬ জন সাহাবির মধ্যে অন্যতম যাদের ওপর মুহাম্মদ (সা.) এর বিশেষ সন্তুষ্টি ছিলেন। (আসহাবে রাসূলের জীবনকথা – মুহাম্মদ আবদুল মা’বুদ)।

বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, এই খলিফার মৃত্যুর দেড় হাজার বছর পরেও তার সম্পদ মানবতার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। সৌদি আরবে এখনো হজরত ওসমান (রা.)’র নামে দলিল করা প্রপার্টি রয়েছে। রয়েছে ব্যাংক অ্যাকাউন্টও ! আরো বিস্ময়কর বিষয় হলো- মাস ফুরালে তার নামেই আসে গ্যাস ও বিদ্যুতের বিল। সম্প্রতি শুরু হয়েছে ওসমানের (রা.) মালিকানাধীন বিলাসবহুল হোটেল নির্মাণের কাজ !

অবাক করা এ ঘটনার বিস্তারিত জানতে ইতিহাসের পথ ধরে আপনাকে একটু পিছিয়ে নিয়ে যেতে চাই মহানবী (সা.) এর যুগে। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর নবুওয়াত প্রাপ্তির ১৩ তম বছর। মুসলমানরা মাত্র মক্কা ছেড়ে মদিনায় এসেছেন। অচেনা পরিবেশে দেখা দেয় সুপেয় পানির তীব্র সংকট। মদিনায় ‘বিরেরুমা’ বা রুমার কূপ নামে এক ইহুদির একটি কূপ ছিল। সেই ইহুদি এ সুযোগে কূপের পানি মুসলমানদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করতে শুরু করল। সাহাবারা রাসূলকে (সা.) এ বিষয়ে অবগত করলে তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে আছো, যে এই কূপ মুসলমানদের জন্য ক্রয় করে দেবে। মুসলমানদের এই কূপ যে খরিদ করে দেবে আল্লাহ তাকে জান্নাতে ঝর্ণা দান করবেন।’ রাসূল (সা.) এর কথায় হজরত ওসমান (রা.) সেই ইহুদির কাছে এই কূপ ক্রয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। ইহুদি তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে তিনি বললেন, পুরো কূপ বিক্রি না করলে অর্ধেক বিক্রি করুন। এতে একদিন কূপের মালিক হব আমি আর আরেক দিন হবেন আপনি। ওসমান (রা.) অর্ধেক কূপ ক্রয় করে বিনামূল্যে পানি বিতরণ করতে লাগলেন। লোকজন ওসমানের (রা.) ক্রয় করা নির্ধারিত দিনে পানি সংগ্রহ করত এবং পরের দিনের জন্যও পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি মজুদ করে রাখত। ইহুদির মালিকানাধীন দিনে কেউ পানি সংগ্রহ করতে যেত না। ফলে তার পানির ব্যবসা মন্দা হওয়ায় নিজেই পুরো কূপ বিক্রির জন্য ওসমানের (রা.) কাছে প্রস্তাব পেশ করে। ওসমান (রা.) ৩৫ হাজার রৌপ্য মুদ্রায় কূপটি কিনে মুসলমানদের জন্য ওয়াকফ করে দেন। এ সময় এক ধনী লোক ওসমান (রা.) থেকে কূপটি দ্বিগুণ দামে খরিদ করতে চাইলে তিনি বলেন, আমার চাহিদা এর চেয়ে আরো অনেক বেশি। লোকটি মূল্য বাড়িয়ে বলতে লাগল। ওসমান (রা.) জবাবে আমার চাহিদা এর চেয়ে আরো বেশি বলতে লাগলেন। শেষে ধনী লোকটি বলল, এমন কেউ আছে যে আপনাকে কূপটির মূল্য ১০ গুণ বলেছে? ওসমান (রা.) জবাবে বলেন, আমার আল্লাহ আমাকে প্রতি নেকিতে ১০ গুণ বাড়িয়ে দেয়ার কথা বলেছেন। হজরত ওসমান (রা.)’র শাসনামলে এই কূপের চারপাশে খেজুর বাগান তৈরি হয়। সময়ের চাকা ঘুরে বহু উত্থান-পতনের পর সৌদি রাজপরিবার সৌদি আরবের রাজসিংহাসনে বসার সময় এই বাগানে খেজুর গাছের সংখ্যা ১৫৫০টিতে পৌঁছায়। সরকার বাগানের চারদিকে দেয়াল তৈরি করে দেয়। এই ভূসম্পত্তি ওসমানের (রা.) নামে দলিল করে দেয় এবং তার নামে খুলে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট।

সৌদির কৃষি মন্ত্রণালয় এই বাগানের খেজুর বিক্রি করে অর্জিত অর্থ ওসমানের (রা.) অ্যাকাউন্টে জমা রাখে। সঞ্চিত অর্থ দিয়ে মদিনায় একটি বড় প্রপার্টি ক্রয় করা হয়েছে। যেখানে ‘হোটেল ওসমান বিন আফফান’ নামে একটি আবাসিক হোটেল নির্মাণের কাজ চলছে। এই হোটেল থেকে প্রতি বছর ৫০ মিলিয়ন রিয়াল আয় হবে বলে আশা করছে সৌদি সরকার। এই অর্থের অর্ধেক অসহায়-দুস্থদের মানবতার সেবায় ব্যয় করা হবে আর অর্ধেক হজরত ওসমানের (রা.) ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হবে। হযরত ওসমানের (রা.) এ দান আল্লাহ এমনভাবে গ্রহণ করে নিয়েছেন যে, কেয়ামত পর্যন্ত তা চালু থাকবে। ওসমানের (রা.) আখেরাতের অ্যাকাউন্টে তো সওয়াব জমা হচ্ছেই দুনিয়ার অ্যাকাউন্টের ব্যলেন্সও ফুরাবার নয়।

 

 

লেখক: পরিচালক, আল কোরআন ইন্সটিটিউট

 

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *