সাহেদ ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) লাইসেন্স নবায়নবিহীন রিজেন্ট হাসপাতালকে ডেডিকেট কোভিড হাসপাতালে রূপান্তর, মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং (এমওইউ) করতে অনিয়ম, কিংবা সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করেও অবৈধভাবে অর্থ হাতিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন ঘটনার প্রমাণ পেয়েছে। অনুসন্ধান পর্যায়ে নথিপত্র ও সাহেদ কিংবা স্বাস্থ্যের সাবেক মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদসহ সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য যাচাই-বাছাই পর্যায়ে প্রমাণ পেতে শুরু করেছে সংস্থাটি।
এরইমধ্যে প্রমাণ পাওয়া গেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান নিপসমের ল্যাবে প্রায় ৪ হাজার কোভিড রোগীর নমুনা বিনামূল্যে পরীক্ষা করার পরও, পারিতোষিক হিসাবে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা আত্মসাতের। যে কারণে রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক ডিজিসহ অর্ধ ডজনের বেশি ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করতে যাচ্ছে দুদকের অনুসন্ধান টিম।
অনুসন্ধান পর্যায়ে বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর হাসপাতাল ও প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরির লাইসেন্সের জন্য মোহাম্মদ সাহেদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেন। এরপর ৮ ডিসেম্বর ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের উত্তরা শাখার ও প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটররির লাইসেন্স ইস্যু হয়। যার মেয়াদ ২০১৪ সালের ৩০ জুন শেষ হয়। ২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিদর্শন কমিটি সরেজমিন হাসপাতালে পরিদর্শনে যায়। পরিদর্শনে তারা দেখতে পায় হাসপাতালের ম্যানেজারের সিদ্ধান্ত নিতেন কোন রোগী আইসিইউ ইউনিটে যাবে। প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরির ফ্রিজে মেয়াদোত্তীর্ণ বিভিন্ন ওষুধ ও প্যাথলজিস্টের পক্ষে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের স্বাক্ষর করা অনেক রিপোর্ট পাওয়া যায়। বিভিন্ন কারণে পরিদর্শন কমিটি আইসিইউ ইউনিট ও প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরির কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য পরিদর্শন কমিটি সুপারিশ করেছিল। লাইসেন্সের মেয়াদ ছিল না মোহাম্মদ সাহেদের মালিকানাধীন মিরপুর শাখার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ও প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরির। যার মেয়াদ শেষ হয় ২০১৭ সালের ৩০ জুন। যা আর নবায়ন হয়নি বলে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তে প্রমাণিত হয়েছে। অথচ লাইসেন্স নবায়নবিহীন বন্ধ রিজেন্ট হাসপাতালকে ডেডিকেট কোভিড হাসপাতাল রূপান্তরের অনুমতি পায়। সই হয় মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং (এমওইউ)। এর মধ্যে চলতি বছরের ২১ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক ডিজি আবুল কালাম আজাদ ও রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. সাহেদের স্বাক্ষরে এমওইউ সই হয়। সার্বিক বিষয়ে অনেক অসঙ্গতি পেয়েছে দুদক। যার সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তার যোগসাজশ ছিল।
এ বিষয়ে দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত বলেন, রিজেন্ট দুর্নীতির অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। অনুসন্ধান কর্মকর্তা নথি-পত্র সংগ্রহ করছে। এরইমধ্যে সাহেদসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অনুসন্ধান চলমান। পরে টিমের সুপারিশের ভিত্তিতে কমিশন থেকে সিদ্ধান্ত আসবে।
অভিযোগ অনুসন্ধানে এরইমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদকে ১২ ও ১৩ আগস্ট বিভিন্ন ইস্যুতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুর্নীতি করেননি উল্লেখ করে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমি দায়িত্বপালনের সময় কোনো দুর্নীতি করিনি, আমি সৎ, দক্ষ, সজ্জন ও মেধাবী হিসাবে কাজ করেছি। করোনাকালীন সময় মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছি। আমার করোনা পজেটিভ হওয়া সত্ত্বেও সুস্থ হয়ে আবার কাজে যোগদান করি। সবসময় দেশের স্বার্থে কাজ করে গেছি।’
জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় রিজেন্টের সাহেদকেও। ফারমার্স ব্যাংক থেকে ঋণ আত্মসাতের মামলায় সাত দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আদালতের অনুমতি নিয়ে রিজেন্টের দুর্নীতির বিষয়ে তার বক্তব্য নেয় দুদক টিম।