সংসদে বিএনপি এমপির বক্তব্যে হইচই !
রোববার সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য সিরাজ সরকারের সমালোচনা করেন। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা এসময় কয়েক দফা প্রতিবাদমুখর হন। এসময় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির সিরাজ তার বক্তব্যে বলেন, “মহামান্য রাষ্ট্রপতি তার ভাষণের শুরুতে বঙ্গবন্ধুসহ মহান আটজন নেতাকে স্মরণ করেছেন। আমিও সশ্রদ্ধ চিত্তে তাদের আত্মার মগফিরাত কামনা করছি।”
তবে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক উল্লেখ করে তার কথা স্মরণ না করায় রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানাতে পারছেন না বলে জানান সিরাজ। এসময় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা তার কথার প্রতিবাদ জানান।
সিরাজ বলেন, “রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্যে ঘুষ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, হত্যা-ধর্ষণ নিয়ে কোনো কথা বলেননি এবং দিকনির্দেশনা দেননি বলে আমি তাকে ধন্যবাদ দিতে পারছি না।”
স্বাস্থ্য ও আর্থিক খাতের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “টাকা পাচারকারীরা অদৃশ্য-অধরা রয়ে গেছে। এদের পৃষ্ঠপোষক কারা? এরা সবাই সরকারের মদদপুষ্ট, সরকারের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। বেসিক ব্যাংকের আব্দুল হাই বাচ্চু থেকে আজকের প্রশান্ত কুমার হালদার পর্যন্ত সরকারের ঘনিষ্ঠ।”
সরকারের ঘনিষ্ঠ লোককে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
অর্থ ও মানবপাচার এবং ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে গত বছর গ্রেপ্তার পাপুলকে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে কুয়েতের ফৌজদারি আদালত। সেই প্রসঙ্গও তোলেন সিরাজ।
“এই সংসদের পাপুল। যাকে ঘুষের দায়ে কুয়েত সরকারের বিচারবিভাগ জেল দিয়েছে। পাপুল শুধু সংসদ নয়, এই দেশকে কলংকিত করেছে। অর্থপাচার মামলায় রায় আরও কঠিন হবে। দুর্নীতির কালোবিড়াল কোথায় নেই ?”
আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “সরকারি দলের সর্বস্তরের নেতারা গ্রাম পর্যায় থেকে, ইউনয়িন থেকে রাজধানী পর্যন্ত সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। বিচারহীন দেশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। চলমান সংসদেও এক ডজন সংসদ সদস্য দুর্নীতি, সরকারি-বেসরকারি জমি দখল, বিদেশে অর্থ পাচার, মানব পাচারে জড়িত। তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই।”
এসময় সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা তার বক্তব্যের প্রতিবাদ করতে শুরু করলে সভাপতির আসনে থাকা ডেপুটি স্পিকার তাদের শান্ত হতে অনুরোধ করে বলেন, “তাকে বলতে দেন। উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন হলে উত্তর দেবেন।”
তিনি বলেন, “মহামান্য রাষ্ট্রপতি শুধু পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ নন, তিনি আমাদের অভিভাবক। তিনি রাষ্ট্র্রের অভিভাবক। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর সফলতা বলেছেন, আমিও বলি। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিতে চাই। গণতন্ত্র আর সুশাসন বাদ দিয়ে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূলের জন্য। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য ধন্যবাদ দিতে চাই। জনগণ রাষ্ট্রপতির মুখে সত্য ভাষণ শুনতে চায়। তার মুখে সত্যের অপলাপ শুনতে চায় না।”
সিরাজের এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করে হইচই করেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা।
সিরাজ বলেন, “আমার সহকর্মীরা অযথা হইচই করছেন। জনগণ আমাদের কথা শুনতে চায়। সংখ্যায় কম হলেও শুনতে চায়। আমি প্রধানমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা রেখে, মাননীয় স্পিকার আপনাকে শ্রদ্ধা রেখে বলতে চাই, এই প্রাকটিস আগে দেখিনি। আমি ৯৬তে এমপি ছিলাম। তখনও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা। তখন এমন ছিল না। এইবার এসে কী দেখলাম! শ্রদ্ধা রেখে বলতে চাই- এটা ব্যাড প্রাকটিস। আওয়ামী লীগের পলিটিক্যাল ক্যারেক্টার চেঞ্জ হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ আবার ফিরে যাক মানুষের কাছে। ফিরে যাক ভালোবাসার কাছে। ভয়ভীতির চর্চা বাদ দিয়ে মানুষের ভালোবাসা অর্জন করুক। আমার নেতা প্রধানমন্ত্রী আছেন সামনে। আসুন আমরা ফিরে যাই জনগণের কাছে।”
এ সময় আওয়ামী লীগের সদস্যরা তার কথার প্রতিবাদ জানান।