সংগীত জগতের মহাতারকা সুবীর নন্দী
লম্বা ক্যারিয়ারে অসংখ্য কালজয়ী গান উপহার দিয়ে যিনি জয় করেছিলেন লাখো শ্রোতার হৃদয়। তিনি বাংলাদেশের সংগীত জগতের এক মহাতারকা সুবীর নন্দী।
কিন্তু তাঁর সেই সুমধুর কণ্ঠ থেমে গেছে দুই বছর আগে। কিডনি ও হার্টের অসুখে ভুগে ২০১৯ সালের ৭ মে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি। আজ তার মৃত্যুর দুই বছর পূর্ণ হলো।
২০১৯ সালের ১৪ এপ্রিল রাতে সিলেট থেকে ট্রেনে করে ঢাকায় ফিরছিলেন সুবীর নন্দী ও তাঁর পরিবার। হঠাৎই তিনি ট্রেনের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এদিন রাত ১১টার দিকে তাকে নেয়া হয় রাজধানীর সিএমএইচে। হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে হার্ট অ্যাটাক করেন এই নন্দিত শিল্পী। এরপর তাকে দ্রুত লাইফ সাপোর্ট নেয়া হয়।
এই অবস্থায় সিএমএইচে ১৮ দিন থাকার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল সিঙ্গাপুরে নেয়া হয় ৬৫ বছর বয়সী বরেণ্য সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দীকে। সে দিনই সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে তার চিকিৎসা শুরু হয়।
কিন্তু ক্রমেই সুবীর নন্দীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন তাঁর একাধিক বার হার্ট অ্যাটাক হয়। শেষ পর্যন্ত ৭ মে চলে যান না ফেরার দেশে। এদিন ভোর সাড়ে চারটার দিকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা বাংলাদেশি এই কিংবদন্তিকে মৃত ঘোষণা করেন।
দেশবরেণ্য এই সংগীতশিল্পী তাঁর দীর্ঘ ৪০ বছরের ক্যারিয়ারে গেয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি গান। বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রেও উপহার দিয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান। ১৯৮১ সালে প্রথম একক অ্যালবাম ‘সুবীর নন্দীর গান’ বাজারে আসে ডিসকো রেকর্ডিংয়ের ব্যানারে। সুবীর নন্দী প্রথম গান করেন ১৯৭৬ সালে আবদুস সামাদ পরিচালিত ‘সূর্যগ্রহণ’ চলচ্চিত্রে।
চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করে চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন বাংলা সংগীতের প্রয়াত এই মহাতারকা। এছাড়া সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে বাংলাদেশ সরকার সুবীর নন্দীকে দেয় দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক।
সুবীর নন্দীর জনপ্রিয় কিছু গান হলো ও আমার উড়াল পঙ্খী রে, পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই, দিন যায় কথা থাকে, ও মাস্টার সাব, পাখি রে তুই দূরে থাকলে, আমার এই দুটি চোখ, কত যে তোমাকে বেসেছি ভালো, তুমি এমনই জাল পেতেছ সংসারে, একটা ছিল সোনার কন্যা, বন্ধু হতে চেয়ে তোমার, আয়নাতে ওই মুখ, কেন ভালোবাসা হারিয়ে যায়, পাহারের কান্না দেখে, প্রেমের নাম বেদনা, তোমারি পরশে জীবন, তুমি যে আমার কবিতা, বন্ধু তোর বরাত নিয়া, হাবলঙ্গের বাজারে, আমি পথে পথে ঘুরি, নীড় ছোট ক্ষতি নেই, দিন যায় কথা থাকে, বৃষ্টির কাছ থেকে কাঁদতে, চাঁদে কলঙ্ক আছে, গানেরই খাতায়, আমি সাত সাগর।
চলচ্চিত্রের সঙ্গীতে অবদানের জন্য পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। মহানায়ক (১৯৮৪), শুভদা (১৯৮৬), শ্রাবণ মেঘের দিন (১৯৯৯), মেঘের পরে মেঘ (২০০৪) ও মহুয়া সুন্দরী (২০১৫) চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়ে পাঁচবার এই পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও সঙ্গীতে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার চলতি বছর তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।