fbpx
হোম অন্যান্য শীতে সুস্থ থাকতে করণীয়
শীতে সুস্থ থাকতে করণীয়

শীতে সুস্থ থাকতে করণীয়

0

নাতিশীতোষ্ণ বাংলাদেশে শীতের আগমন জানান দিচ্ছে। প্রকৃতিতে শীত যেন একটু একটু করে আসছে। শীতের আগমনে শরীরের যত্ন আর খাদ্যভ্যাস নিয়ে চেঞ্জ টিভির বিশেষ প্রতিবেদন।

শীতে ত্বকের যত্ন

শীতের আগমনে আপনার ত্বকও নিশ্চয় ঠান্ডা, শুষ্কতা এবং বাতাসের প্রভাব অনুভব করতে শুরু করেছে। তা ছাড়া ত্বক যদি হয় প্রকৃতিগতভাবেই শুষ্ক কিংবা আপনি যদি দিনের বেশির ভাগ সময়ই কাটান শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমে, তাহলে এখনই সময় ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা বজায় রাখতে ত্বকের প্রতি যত্নশীল হওয়া। আপনার ত্বক রুক্ষ, শুষ্ক হওয়ার আগেই উপযুক্ত যত্নের মাধ্যমে ত্বককে প্রকৃতির বৈরিতার সঙ্গে মানিয়ে নিন, যাতে আপনার ত্বক থাকে নরম, চাঙা ও মসৃণ।

শীতকালে ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা বজায় রাখতে কিছু বিষয়ের ওপর নজর দিতে হবে। যেমন—পর্যাপ্ত পানি পান করা, শীতকালে প্রচুর পানি পান করতে ভুলবেন না। আপনার শরীর ভেতর থেকে আর্দ্র না হলে সেটার প্রভাব পড়বে আপনার ত্বকের ওপর। সুগার লেভেল ঠিক থাকলে আপনি ডাবের পানি ও ফলের জুস খেতে পারেন।

খসখসে হাত

শীত এলে অনেকের হাতের ত্বক খুব অমসৃণ এবং খসখসে হয়ে যায়। ত্বককে সুন্দর করার উপায় কী? চমৎকার ফল লাভের জন্য এখানে অল্প কিছু সহজ ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবস্থার উল্লেখ করা হলো-

– গ্লিসারিনের সঙ্গে গোলাপ পানি মিশিয়ে কটন উল সোয়াব দিয়ে তা দুহাতে ঘষে নিন। দেখবেন ত্বক কেমন চমৎকারভাবে পরিষ্কার হয়।

– যদি আপনার ত্বক গরম পানি, সোডা, কাপড়কাচা সাবান বা ডিটারজেন্টের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে ভিনেগারের সঙ্গে পানি মিশিয়ে হাত ধুয়ে নেবেন, এতে ভাল ফল পাবেন।

– যদি আপনার ত্বক খুব শুষ্ক হয় তাহলে ভ্যাসলিনের সঙ্গে কার্বোলিক এসিড মিশিয়ে দুহাতে ঘষে নিন।

খসখসে পা

কারও কারও দুপায়ের তলা খসখসে। মাঝে মধ্যে পায়ের তলা দুটো ফুলে যায়, অবসন্ন লাগে এবং চুলকায়। কিভাবে এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব?

-গরম পানির মধ্যে সামান্য সোডা বাই কার্বোনেট মিশিয়ে খসখসে পায়ের তলা দুটো তার মধ্যে ভিজিয়ে রাখতে পারেন। খসখসে অংশগুলো ও গোড়ালি ঝামাপাথর দিয়ে জোরে জোরে ঘষে পরিষ্কার করবেন। নাজুক অংশ যেমন আঙ্গুলগুলো জোরে জোরে ঘষে পরিষ্কার করবেন একটা নাইলন ব্রাশ দিয়ে। তারপর একটা পরিষ্কার শুকনো তোয়ালে দিয়ে পায়ের পাতা দুটো ভাল করে মুছবেন, এরপর পায়ের তলায় একটা ভাল ট্যালকম পাউডার ছিটিয়ে দেবেন। পায়ের তলা দুটোর প্রচুর ঘামার প্রবণতা থাকে, বিশেষ করে আপনি যদি জুতা ও মোজা পরেন। ওগুলো ত্বকের সঙ্গে লেগে থাকে এবং ঘাম ত্বককে শুষ্ক করে ফেলে। শুষ্ক ত্বকে সর্বদা কোল্ড ক্রিম মাখতে হবে। আপনার আঙ্গুলের ফাঁকগুলোতে কিছু ডিওডোরান্ট ছড়িয়ে দিন। মোজাগুলোকে পরিষ্কার রাখবেন এবং ওগুলো প্রতিবার পরার পরে ধুয়ে দেবেন।

ঠোঁট ফাটা

কারও কারও সব সময় ঠোঁট শুষ্ক থাকে। ঠোঁট ফেটে যায়। কী করণীয়?

– শীতের শুষ্ক  আবহাওয়ার প্রভাব শুধু শরীরের উপরই পড়ে না, ঠোঁটের ওপরও পড়ে ভীষণভাবে। ফলে এ সময়ে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবারই ঠোঁট শুষ্ক থাকে এবং ঠোঁট ফাটতে দেখা যায়। অনেকের আবার শুধু শীতকালই নয়, সারাবছরে ঠোঁট শুষ্ক থাকে ও ঠোঁট ফাটে। এটা খুবই এক বিরক্তিকর সমস্যা।

ঠোঁটের শুষ্কতা ও ঠোঁট ফাটা মোকাবেলা করার জন্য ঠোঁট দুটোতে গ্লিসারিন মেখে হালকা ম্যাসাজ করতে হবে, এতে রক্তসঞ্চালন বাড়বে এবং মৃতকোষগুলো উঠে যেতে সাহায্য করবে। অতিরিক্ত গ্লিসারিন ভেজা কটন উল দিয়ে মুছে ফেলবেন। এবার দুই ঠোঁটে ময়েশ্চারাইজার যেমন ভ্যাসলিন খুব গাঢ় করে মাখবেন এবং দুই ঠোঁটে আগাগোড়া খুব দ্রুত আলতো করে আঙ্গুল বুলাবেন। ঠোঁটের কোনা থেকে মাঝ পর্যন্ত দ্রুত এটা করবেন। এতে ঠোঁট কোমল থাকবে এবং ঠোঁট ফাটার সমস্যা দেখা দেবে না। একটা কথা মনে রাখতে হবে, তাহলো ঠোঁট কখনোই শুকনো রাখা যাবে না। ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়ার আগেই গ্লিসারিন কিংবা ভ্যাসলিন মাখতে হবে। আর ঠোঁটের চামড়া কখনোই টেনে তুলবেন না।

ত্বক ফাটা

শীতকালে অনেকেরই শরীর ও মুখের ত্বক ফেটে যায়। দেখতে খুবই বিশ্রী লাগে। প্রতিকারের উপায় কী?

শীতকালে ত্বকের স্বাভাবিক তৈলাক্তভাব কমে যায় এবং এর ফলে ত্বক শুষ্ক ও খসখসে হয়ে পড়ে, ত্বক ফেটে যায়। এ কারণে শীতকালে ত্বকের বিশেষ যত্ন নেয়ার প্রয়োজন হয়।

ফাটা ত্বকের জন্য বেশ কিছু সহজ ঘরোয়া চিকিৎসা রয়েছে-

– ত্বক ভাল করে ঘষে ঘষে পরিষ্কার করতে হবে। এরপর ত্বক শুকাবেন। ত্বক শুকিয়ে গেলে সেখানে ঘি কিংবা সর্ষের তেল মাখবেন।

– সবচেয়ে ভাল উপায় হলো ত্বকে দুধের সর মাখা। এটা ত্বকে মালিশ করতে হবে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময়। ফাটা ঠোঁটেও আপনি রাতে এই ক্রিম মাখতে পারেন, এতে ঠোঁট নরম ও মসৃণ হবে।

– শীতের সময় ত্বকে সাবান যত কম মাখা যায় তত ভাল, কারণ এতে ত্বক আরও খসখসে হয়ে পড়ে। সাবানের পরিবর্তে ত্বকে ক্লিনজিং ক্রিম লাগিয়ে ত্বক পরিষ্কার করতে পারেন। আর যদি একান্তই সাবান ব্যবহার করতে হয় তাহলে গ্লিসারিন সমৃদ্ধ সাবান ব্যবহার করবেন। মুখ ধোয়া কিংবা গোসলের পরপরই ত্বক মুছে ত্বকে ভেজা ভেজা ভাব থাকা অবস্থায় ময়েশ্চারাইজার মাখবেন। ময়েশ্চারাইজার হিসেবে আপনি গ্লিসারিন ব্যবহার করতে পারেন। যেটুকু গ্লিসারিন প্রয়োজন, তার সঙ্গে দ্বিগুণ পরিমাণ পানি মিশিয়ে সারা শরীরে মাখবেন। যদি পানি না মিশিয়ে শুধু গ্লিসারিন মাখেন তাহলে গ্লিসারিনের আঠায় ময়লা জমে ত্বক আরও বেশি ফেটে যেতে পারে।

-রাতে নিয়মিত শরীরে ক্রিম লাগানোর অভ্যাস করবেন। এতে ত্বকের শুষ্কতা রোধ হবে।

– শীতের শুষ্কতা থেকে ত্বককে রক্ষা করার জন্য অলিভ অয়েল একটি চমৎকার দ্রব্য। শীতে নিয়মিত এটা ত্বকে মালিশ করুন।

– শীতে অনেকে গরম পানিতে গোসল করেন। কিন্তু খুব গরম পানিতে নিয়মিত গোসল করলে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে পড়ে। গরম পানিতে গোসল করতে চাইলে হালকা গরম পানিতে গোসল করুন এবং গোসলের পরে শরীর মুছে নিয়ে ময়েশ্চারাইজার মাখুন।

শীতে যেসব  খাবার অবশ্যই খাবেন

শীতে অনেকেই সর্দি, কাশি, জ্বরে আক্রান্ত হন। এর বাইরে শীতের বৈরী আবহাওয়া ত্বকের জন্য বয়ে আনে নানান ধরনের সমস্যা। পাশাপাশি অনেক সময় ত্বকে হতে পারে বিভিন্ন রোগও। কিছু চর্মরোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় এই সময়। সুস্থ থাকার জন্য ঋতুর এ পরিবর্তনে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে একটু সচেতন হতে হবে। কিন্তু শীতে অসুস্থ হওয়া ঠেকাতে পারে শীতের কিছু সবজি, যা খেলে দিব্যি তরতাজা থাকবেন আপনি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাইরে থেকে যত্নের পাশাপাশি চাই ভেতর থেকে সুস্থতা। শীতে কিছু খাবার আপনাকে সজীবতা ও সুস্থতা দেবে। জেনে নিন এই খাবারগুলো কী:

স্যুপ: শীতে শরীর সুস্থ রাখতে স্যুপ বা ঝোল দারুণ উপকারী। শীতেই মেলে স্যুপের আসল মজা। ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়ায় গরম-গরম চুমুক। শীতের বিকেলে বা রাতের খাবারে ধোঁয়া ওঠা এক বাটি স্যুপ হলে কিন্তু মন্দ হয় না। এতে শরীর থেকে একটু হলেও কাটবে ঠান্ডার রেশ।

মূলজাতীয় সবজি: শীতের রোগবালাই দূর করতে এ মৌসুমের মূলজাতীয় সবজি দারুণ কার্যকর। বিট, মিষ্টি আলু, গাজর, শালগমের মতো নানা সবজি শীতে আপনাকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে। এসব সবজিতে থাকা ভিটামিন ও নানা পুষ্টি উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে। এগুলো ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়াতে এবং খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া এসব সবজি শীতকালে দেহের উষ্ণতা বাড়াতে সাহায্য করে।

টক ফল: শরীরে ফাইবার বা আঁশের ঘাটতি মেটাতে ও ভিটামিন সির জোগান দিতে শীতের সময় বেশি করে টকজাতীয় ফল খেতে পারেন। কমলা, বরই, পেয়ারা হতে পারে ভিটামিন সির দারুণ উৎস। পেয়ারায় আরও অনেক বেশি ভিটামিন সি থাকে, যা অনেক বেশি প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এতে আরও থাকে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম। বারডেম জেনারেল হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ পুষ্টি ও পথ্যবিদ শামছুন্নাহার নাহিদের তথ্য অনুযায়ী, বরইয়ে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামসহ আছে নানা কিছু। রোগ প্রতিরোধে যেমন ভূমিকা রাখে, অন্যদিকে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়। বরই সবার জন্য ভালো হলেও ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য কিন্তু না। পাকা বরইয়ে চিনি থাকে, তাই ডায়াবেটিসের রোগীদের পাকা বরই না খাওয়াই ভালো।

পালং: শীতে বাজারে পালং শাক প্রচুর পাবেন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও শীতে সুস্থ থাকতে পালং শাক খেতে পারেন। পুষ্টিতে ভরপুর পালংয়ের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ক্যানসারপ্রতিরোধী গুণের কারণে এটি ‘সুপারফুড’ হিসেবে পরিচিত। সবুজ পাতার এ শাক দ্রুত পেটের চর্বি কমাতে পারে। পালংয়ে ভিটামিন ও মিনারেল আছে, এতে ক্যালরি থাকে কম। তাই ওজন কমাতে খাবারে বেশি করে পালং রাখতে পারেন।

মাছ ও শিম: শীতে বেশি করে মাছ খান। আমিষের চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন দুই বেলা মাছ খান। খাবারে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন সামুদ্রিক মাছ রাখুন। এ ছাড়া মাছের সঙ্গে শিম যুক্ত করে খেতে পারেন। মাছের ঝোলে শিম মানিয়ে যায়। ভর্তা হিসেবেও অনন্য। শিম শুধু রসনাবিলাসই করে না, তার অন্য গুণও আছে। পথ্যবিদ শামছুন্নাহার নাহিদের তথ্যানুযায়ী, শিম প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন আর মিনারেলে সমৃদ্ধ। যাঁরা সরাসরি প্রোটিন খান না, অর্থাৎ মাছ-মাংস খাওয়া হয় না, তাঁদের জন্য শিমের বিচি শরীরে প্রয়োজনীয় প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে পারে। যাঁদের আমিষ খাওয়ায় সীমাবদ্ধতা আছে, তাঁরা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাবেন। আর এই শীতে নিয়মিত শিম খেলে ত্বকও ভালো থাকবে।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *