শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে বাড়ছে চুরির ঘটনা, হতাশ আড়ৎদাররা
গত প্রায় ২ মাসে উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ দেশীয় তাঁতবস্ত্র বিক্রয়ের স্থান শাহজাদপুর কাপড়ের হাটের ৫/৬ টি কাপড়ের আড়ৎ ও তাঁতবস্ত্র বিক্রয়ের দোকানে বেশক’টি চুরির ঘটনা ঘটেছে।
এসব প্রতিষ্ঠানের সার্টার ও তালা অক্ষত থাকলেও রাতের আধারে কেবল গায়েব হয়ে গেছে পেটি পেটি, থান থান তাঁতবস্ত্র। এসব ঘটনায় আড়ৎদার ও তাঁতীদের প্রায় ৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকার তাঁতবস্ত্র খোয়া যাওয়ায় তারা জীবন-জীবিকার প্রশ্নে রীতিমতো চোখেমুখে সর্ষের ফুল দেখছেন। সেইসাথে ঐতিহ্যবাহী এ কাপড়ের হাটের বিভিন্ন আড়ৎদার ও প্রান্তিক তাঁতীদের মাঝে অজানা এক আতংক নতুন করে দানা বাঁধছে।
তাঁতীরা জানায়, গত প্রায় ২ মাসে প্রথমে হাটের জামাত আলী কাপড়ের আড়ৎ থেকে ১১’শ ৫০ টাকা থানপ্রতি রেটের ৪০ থান লুঙ্গী রাতের আঁধারে গায়েব হয়ে যায়। একইভাবে কাশিনাথপুরের সাথিয়াখোলার তাঁতী মুনছুর মেম্বরের দোকান থেকে ৮’শ টাকা থানপ্রতি রেটের ৬৫ থান লুঙ্গি, রাবেয়া আড়ৎ এর পাশের লুঙ্গির দোকান থেকে প্রায় ৯০ হাজার টাকা মূল্যের (৮৬ থান) লুঙ্গি, জামিরতার তাঁতী হাজী শাহাদতের দোকান থেকে প্রায় ৩ লাখ টাকার তাঁতবস্ত্র ও সর্বশেষ গত শুক্রবার আনিছের আমার দেশ কাপড়ের আড়ৎ থেকে প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকার তাঁতবস্ত্রসহ সর্বমোট প্রায় ৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকার তাঁতবস্ত্র রাতের আঁধারে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে যে’কটি বিষ্ময়কর চুরির ঘটনা ঘটেছে যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা। তালাও ঠিক থাকে আবার কাপড়ও উধাও হয়ে যায়- হিসাব মেলানো দায়।
উপজেলা তাঁত মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বিষ্ময়কর চুরি রোধে খুব দ্রুত সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসন, পুলিশ সুপার সিরাজগঞ্জ ও শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে বলে জানা গেছে। অপরদিকে, এসব বিষয়ে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড পাওয়ারলুম এন্ড টেক্মটাইল মিলস ওনার্স এসোসিয়েশনের উত্তরাঞ্চলের ডাইরেক্টর, উত্তরবঙ্গের তাঁতী নেতা, সিরাজগঞ্জ জেলা তাঁত মালিক সমিতির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব হায়দার আলী বলেন, তাঁতবস্ত্রের বাজার এমনিতেই খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। তার পরেও মরার ওপর খারার ঘা’ এর মতোই তীব্র শীত পড়তে থাকায় তাঁতবস্ত্র উৎপাদনের হারও বহুলাংশে কমে যাওয়ায় তাঁতীদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। এত কিছুর পরেও শাহজাদপুর কাপড়ের হাটের সুরক্ষিত স্থান থেকে এভাবে দিনের পর দিন যদি তাঁতবস্ত্র হাওয়া হয়ে যায়, সেটি সত্যই কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
এভাবে চুরি হতে থাকলে শাহাজাদপুরের ঐতিহ্য ও বাংলাদেশের স্বনামধন্য, অন্যতম বৃহৎ এ হাটটি ধংসের পথে চলে যাবে বলে সচেতন মহল মনে করছেন। শাহাজাদপুরের হাজারো মানুষের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম প্রধান মাধ্যম এ হাটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এলাকাবাসী অতি দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন।