শঙ্কামুক্ত ওবায়দুল কাদের
শারীরিকভাবে অসুস্থবোধ করায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কেবিন ব্লকে তাকে ভর্তি করা হয়। মন্ত্রীর চিকিৎসায় ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি (মন্ত্রী) শঙ্কামুক্ত। তবে কয়েকদিন হাসপাতালে ভর্তি থেকে বিশ্রাম ও চিকিৎসা নিতে হবে।
ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, তিনি কয়েকদিন ধরে কিছুটা শ্বাসকষ্টের সঙ্গে বুকে ব্যথাও অনুভব করছিলেন। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী জানার পর সকালে ওনাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেন। এরপর বিএসএমএমইউ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ওবায়দুল কাদেরকে। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে ৩১২ নম্বর কেবিনে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে ওবায়দুল কাদেরের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার বিকালে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক শরফুদ্দিন আহমেদ। এ সময় তিনি জানান, মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শঙ্কামুক্ত। শরফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কিছুদিন আগে (মার্চ ২০১৯) অসুস্থ হওয়ার পর থেকে আমাদের এখানে প্রায়ই ফলোআপ চেকআপে আসেন তিনি। আজও এসেছিলেন। এ সময় আমাদের ১০ জনের বিশেষজ্ঞ একটি চিকিৎসক দল ওনার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। তারা বলেছেন, উনি বেশি পরিশ্রম করেছেন, তাই ওনার একটু বিশ্রাম নেওয়া দরকার। তাই চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে ৩১২ নম্বর কেবিনে ভর্তি করা হয়েছে।’
৭৩। তার মানে সবকিছু স্বাভাবিক।’ বয়সের কারণে ওবায়দুল কাদেরের ডায়াবেটিসসহ উচ্চরক্তচাপ রয়েছে বলেও জানান শরফুদ্দিন। ওষুধের মাধ্যমেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন এই চিকিৎসক।
বিএসএমএমইউ উপাচার্য আরও বলেন, ‘উনি শঙ্কামুক্ত। ওনার জন্য সবাই দোয়া করবেন। চিকিৎসার জন্য উনি দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য একটুও লালায়িত নন। এ বিষয়টি আমাদের বিস্মিত করেছে। বিশেষজ্ঞ হিসাবে আমরা যে সবাইকে চিকিৎসা দিতে সক্ষম, তার প্রমাণও উনি রাখলেন। বুধবার সকাল ১০টায় মেডিকেল বোর্ড ওবায়দুল কাদেরকে আবার দেখবে জানিয়ে তিনি বলেন, পরবর্তী আপডেট জানানো হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা ওনার করোনাজনিত কোনো সমস্যা পাইনি। তবে করোনা যেহেতু আছে, তাই ওনার কাছে কেউ যাতে না আসে, তাই আমরা সব সংরক্ষিত করে দিয়েছি।’
ওবায়দুল কাদেরের শ্বাসকষ্ট আছে কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বয়সে হাঁটলে অনেকের এমন হয়। তবে সেটা বিশ্রাম নিলে ঠিক হয়ে যাবে। ফুসফুসে সংক্রমণ আছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে শরফুদ্দিন বলেন, ‘এজাতীয় কিছু থাকলেও থাকতে পারে। সেটার জন্য আমরা সংক্রমণের ওষুধ দেব। এটা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে, দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আমরা নরমাল মনিটরিং করে দেখেছি। এখন উনি শঙ্কামুক্ত, ভালো আছেন।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওনার ফুসফুসে পানি আছে কি না, সেটা আগামীকাল (আজ) বোর্ডের পর্যবেক্ষণ করে জানতে পারব। এখনো আমরা এ বিষয়টি জানতে পারেনি। এক্স-রে ও সিটিস্ক্যান করে জানতে পারব।’ উল্লেখ্য, উপাচার্য নিজেই ওবায়দুল কাদেরের মেডিকেল বোর্ডের নেতৃত্বে আছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি হাসপাতালে গিয়ে ‘অহেতুক ভিড়’ না করতে নেতাকর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
৬৯ বছর বয়সি ওবায়দুল কাদের দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ ও ফুসফুসের ক্রনিক সমস্যায় ভুগছেন। ২০১৯ সালে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তার হৃৎপিণ্ডের রক্তনালিতে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটি ব্লক স্টেন্টিংয়ের মাধ্যমে অপসারণ করেন চিকিৎসকরা। পরে তাকে সিঙ্গাপুরে থেকে বেশ কিছুদিন চিকিৎসা নিতে হয়।