fbpx
হোম অনুসন্ধান অপরাধবার্তা যৌন দাসত্বে বাধ্য করা সেক্স কাল্টের ১২০ বছরের কারাদণ্ড
যৌন দাসত্বে বাধ্য করা সেক্স কাল্টের ১২০ বছরের কারাদণ্ড

যৌন দাসত্বে বাধ্য করা সেক্স কাল্টের ১২০ বছরের কারাদণ্ড

0

যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের যৌন দাসত্বে বাধ্য করা সেক্স কাল্ট গুরু কিথ রনিয়্যারিকে ১২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির আদালত।

জালিয়াতি, যৌনকর্মের জন্য মানব পাচার, শিশু পর্নোগ্রাফিসহ অন্যান্য অপরাধে নেক্সিয়াম সেক্স কাল্টের প্রতিষ্ঠাতা কিথ রনিয়্যারিকে গত বছর অভিযুক্ত করা হয়। নেতা হিসেবে তিনি নারীদের দলে অন্তর্ভূক্ত করেছিলেন এবং তাদের জোর করে বাধ্য করতেন তার সাথে যৌন সম্পর্ক করার জন্য।

কাল্টে থাকা ভুক্তভোগীদের ‘অপরিসীম ক্ষতি’ করার দায়ে ৬০ বছর বয়সী রনিয়্যারির বাকি জীবন কারাগারে থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন মামলার কৌঁসুলিরা।মঙ্গলবার ব্রুকলিনের আদালতে রনিয়্যারিকে প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ ডলার জরিমানাও করা হয়।

গত বছর মামলার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে রনিয়্যারি কোনো বক্তব্য দেননি। কাল্টের অন্যান্য নেতৃস্থানীয় সদস্যরা দোষ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।রনিয়্যারির আইনজীবীরা প্রথম থেকেই তাকে নির্দোষ দাবি করে এসেছেন এবং তাকে অভিযুক্ত করার কারণ হিসেবে ‘মিথ্যা বক্তব্য দেয়ার জন্য অনুপ্রাণিত স্বাক্ষীদের ভিত্তিতে হওয়া মিডিয়া প্রচারণা’কে দায়ী করেন।

২০১৭ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ নেক্সিয়ামের বিপক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরু করে।

১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা পাওয়া নিউ ইয়র্কের অ্যালবানি ভিত্তিক গ্রুপটি নিজেদের ‘মানুষের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে মানবিক মূলনীতির ভিত্তিতে তৈরি সম্প্রদায়’ হিসেবে পরিচিয় দিত। প্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক মূলনীতি অনুযায়ী, তারা ‘উন্নত পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে।’

তাদের দাবি, তারা যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডা, মেক্সিকো ও মধ্য আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ১৬ হাজারের বেশি মানুষের সাথে কাজ করেছে। কিন্তু আসলে প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ নেতা রনিয়ের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর শীর্ষস্থানে অবস্থান করে নারী কর্মীদের সাথে দাস ও প্রভুর মত সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন।

অনেক সময় গ্রুপের নারীদের তলপেটের একটি অংশ পুড়িয়ে রনিয়্যারির নামাঙ্কিত চিহ্ন বসিয়ে দেয়া হতো এবং সেগুলোর ভিডিও করা হতো। এই গোষ্ঠীর সাবেক একজন সদস্য অভিযোগ করেছেন যে, তার ১৮ বছর বয়স হওয়ার পর্যন্ত কয়েক সপ্তাহ ধরে তাকে নানাভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে যাতে রনিয়্যারি তার কুমারিত্ব নিতে পারে।

ড্যানিয়েলা নামে পরিচয় করিয়ে দেয়া ঐ নারী আদালতকে বলেছেন যে, তিনি ও তার অপ্রাপ্তবয়স্ক বোনকে রনিয়্যারি একাধিকবার যৌন মিলনে বাধ্য করে। এরপর তারা গর্ভবতী হলে তাদের গর্ভপাত করাতেও বাধ্য করা হয়। হলিউডের অভিনেত্রী থেকে শুরু করে মেক্সিকোর সাবেক এক প্রেসিডেন্টের ছেলেও ঐ কাল্টের সদস্য ছিলেন। তাদের অনেকে রনিয়্যারির বিরুদ্ধে আদালতে স্বাক্ষ্যও দিয়েছেন।

আলবেনি ভিত্তিক এই গ্রুপটি নিজেদের পরিচয় সম্পর্কে লিখেছে, ‘ মানবিক নীতিমালায় পরিচালিত একটি কম্যুনিটি, যারা মানুষকে ক্ষমতাবান করতে চায়।’ ১৬ হাজারের বেশি ব্যক্তির সঙ্গে তারা কাজ করছে এবং যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো এবং মধ্য আমেরিকায় তাদের কর্মকাণ্ড রয়েছে।

১৯৯৮ সালে নিউইয়র্কের আলব্যানিতে প্রথম গ্রুপটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্যক্তিগত উন্নয়ন কোম্পানি হিসাবে এর যাত্রা শুরু। এই গ্রুপের সদস্য হিসাবে রয়েছেন সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত অনেক নারী ও হলিউডের অভিনেত্রীও।

তবে তদন্তকারীরা বলছে, মেনটরিং গ্রুপের আদলে প্রতিষ্ঠিত হলেও আসলে যৌন পাচারকারীদের একটি সংগঠন, যেখানে নারীদের ওপর যৌন নির্যাতন, পর্নোগ্রাফি আর সংঘবদ্ধ অপরাধ ঘটানো হতো।

এই গোষ্ঠীর সাবেক একজন সদস্য, যাকে আইনজীবীরা ড্যানিয়েলা বলে বর্ণনা করেছেন, তিনি অভিযোগ করেছেন যে, তার ১৮ বছর বয়স হওয়ার পর্যন্ত কয়েক সপ্তাহ ধরে তাকে নানাভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে যাতে, রনিয়্যারি তার কুমারিত্ব নিতে পারে।

১৮ বছর হওয়ার পরে রনিয়্যারি তাকে বলেন, ”এখন সময় হয়েছে।” যৌন মিলন করার জন্য রনিয়্যারি তাকে অফিসের একটি গুদাম ঘরে নিয়ে যান। ড্যানিয়েলার আরেকজন বোনও এই গোষ্ঠীর নেতার যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। তিনি অভিযোগ করেছেন, তাদের দুই বোনকেই কাল্ট নেতা রনিয়্যারি গ্রুপ সেক্সে বাধ্য করতেন।

”আমরা পুরো সময়টা ধরে কাঁদতাম,” আদালতে বলেছেন ড্যানিয়েলা। এক পর্যায়ে তারা দুই বোনই গর্ভবতী হয়ে পড়েন, তবে রনিয়্যারি তাদের গর্ভপাতে বাধ্য করেন।নেক্সিয়ামের সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন স্মলভিলের অভিনেত্রী অ্যালিসন ম্যাক

 

দুই বছর ধরে বেডরুমে আটকে রাখা

লরা সলজম্যান নামের ৪২ বয়সী একজন নারী সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, মোটা হয়ে যাওয়া আর আরেকজন পুরুষের সঙ্গে দেখা করতে চাওয়ায় ড্যানিয়েলাকে একটি বেডরুমে দুই বছর ধরে আটকে রাখা হয়েছিল। ড্যানিয়েলাকে বলা হয়েছিল, তাকে মেক্সিকোয় ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হবে, যদি সে রনিয়্যারি আর মিজ সলজম্যানকে সন্তুষ্ট করতে না পারে।

তখন একই বাড়িতে থাকা সত্ত্বেও পুরো সময়টা জুড়ে পরিবারের কোন সদস্যের সঙ্গে ড্যানিয়েলাকে দেখা করতে দেয়া হয়নি। এই বন্দীদশা থেকে বাঁচতে তার পরিবার আমেরিকায় থাকলেও একপর্যায়ে মেক্সিকো ফেরত যেতে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন ড্যানিয়েলা।

দাসী ও প্রভু

আদালতে উপস্থাপিত তথ্যে জানা যাচ্ছে, নেক্সিয়ামের ভেতর ‘ডস’ বা ‘ভোউ’ নামের আরেকটি গোপন চক্র ছিল। সেখানে অনেকটা পিরামিডের আদলে ‘দাসী’ আর ‘প্রভু’ ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছিল। এই চক্রের সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিলেন রনিয়্যারি, পুরো গ্রুপের একমাত্র পুরুষ সদস্য।

 

‘দাসী’দের দায়িত্ব ছিল তাদের নিজেদের জন্য আরো ‘দাসীর’ নিয়োগ করা, যারা সবাই আসলে রনিয়্যারির সেবায় কাজ করতো। এখানে যোগ দিতে হলে নারীদের এমন সব স্পর্শকাতর তথ্য দিতে হতো, যা তারা প্রকাশ করতে চান না। যার মধ্যে রয়েছে, নিজের বা পরিবারের সদস্যদের গোপন ছবি বা ভিডিও।

এই নারীদের নির্দিষ্ট ডায়েট মেনে চলতে হতো, যাতে তারা শুকনো থাকতে পারেন। তাদের বাড়ির কাজ থেকে রনিয়্যারির যৌন চাহিদা মেটাতে নারীদের প্রস্তুত করার মতো কাজ করতে হতো।

গুরুর চিহ্ন দিয়ে নারীদের ব্রান্ডিং করা

 

অনেক সময় গ্রুপের নারীদের তলপেটের একটি অংশ পুড়িয়ে রনিয়্যারির নামাঙ্কিত চিহ্ন বসিয়ে দেয়া হতো এবং সেগুলোর ভিডিও করা হতো। আদালতে উপস্থাপিত তথ্য অনুসারে, নেক্সিয়ামের সদস্যদের বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নগ্ন করে এভাবে ব্রান্ডিং করে দেয়া হতো।

আদালতে কয়েকজন সাক্ষ্য দিয়েছেন, ওই অনুষ্ঠানে চারটি অনুষঙ্গ থাকতো। বাতাস, মাটি আর পানি, পোড়ানোর কলমটি আগুন হিসাবে বিবেচনা করা হতো।তবে রনিয়্যারির আইনজীবী দাবি করেছেন, নারীরা স্বেচ্ছায় ওই অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন।

সূত্র: বিবিসি 

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *