যে কারণে আপনাকে ঘরে থাকতেই হবে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা ভাইরাস বিস্তার রোধে শুরু থেকেই তাগিদ দিয়ে এসেছে বিশ্বের সকল দেশের জনসাধারণদের ঘরে থাকতে এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশিত সতর্কতা অবলম্বন করতে।
যেভাবে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে তাতে করে সচেতনতা বৃদ্ধি করা না হলে ভবিষ্যতে পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ মারা যাবে বলে স্বাস্থ্য সংস্থা ও গবেষকেরা পর্যবেক্ষণে তুলে ধরেন। বিশেষ করে গোটা বিশ্বে যেভাবে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে তাতে করে বাংলাদেশ যে নিরাপদ তা কোনোভাবেই বলা যায় না।
একটি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে , ইতালিতে যেখানে শুরুতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ৩ জন ছিলো, তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে লাখেরও কাছাকাছি। সর্ব প্রথম ৩ জন, পরের দিন ৩ জন , এভাবে চারদিন পর্যন্ত ৩ জন এবং তারপরের দিন ৪ থেকে লাফিয়ে ২১ জন আক্রান্ত হন। এরপর ৭৯ জন ,পরের দিন ১৫৭ জন থেকে বেড়ে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন দিনে ২২৯, ৮৮৯, ১১২৪, ৩০৫৮, ১৫১১৩, ১৭৬৬০, ২১১৫৭, ২৭৯৮০, ৩৫৭১৩, ৬৩৯২৭, ৬৯১৭৬, ৮০১২২ থেকে বেড়ে ধীরে ধীরে ৩৮ দিনে তা ৯০ হাজার ছাড়িয়েছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। ইতালিতে এগুলো ছিলো ৩৮ দিনে দৈনিক মোট আক্রান্তের সংখ্যা। যেখানে আক্রান্ত ছিলো মাত্র ৩ জন, সেই ইতালি ৩৮ দিনের ব্যবধানে প্রায় লন্ডভন্ড।
অন্যদিকে আমেরিকাতেও ৩৮ দিনের চিত্র দেখলে দেখা যায় যে, প্রথমে ছিলো মাত্র ১৫ জন করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। তারপরের দিন থেকে টানা ৫ দিন ১৫ জন থেকে লাফিয়ে ৩৫জন , পর্যাক্রমে ৫৩, ৫৭, ৬০ থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে ১০০, ২২১, ৫৪১, ১৬৩০, ৬৩৪৪, ৩৩৫৯২, ৮৫৭১২ থেকে আজ পর্যন্ত ১ লাখ ২৩ হাজারেরও বেশি মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। একিভাবে স্পেনের অবস্থাও ভয়াবহ।
পৃথিবীর এইসকল দেশে শুধু আক্রান্তের চিত্র দেখলে বোঝা যায় কত ভয়ঙ্কর অবস্থায় পার করছে সে সব রাষ্ট্র। আর পর্যায়ক্রমে একিভাবে বেড়েছে মৃত্যু সংখ্যাও। যা হিসেব করলে স্পষ্ট হয় যে , পৃথিবীর ইতিহাসে এই মহামারীর চেয়ে ইতোপূর্বে কোনো মহামারীতে এত মানুষ আক্রান্ত হয়নি।
করোনার ভয়াবহতা বিশ্লেষণ করলে স্বভাবতই বাংলাদেশের বেলায় আতঙ্ক অনেকখানি বেড়ে যায়। কেনোনা অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ততোটা উন্নত নয় এবং অর্থনীতিতে বেশ পিছিয়ে। এছাড়া সচেতনতার পর্যাপ্ত অভাবের পাশাপাশি রয়েছে জনসংখ্যা সমস্যা। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে , বাংলাদেশ কতটা নিরাপদ ?
বাংলাদেশে গত কয়েকদিনের চিত্র দেখলে বোঝা যায়, একি অবস্থা তৈরী হতে সময়ের প্রয়োজন হবেনা যদি সচেতনতাবোধ মানুষের মধ্যে তৈরী না হয়। গত কয়েকদিনের শুরুর দিকে বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো ১ জন , দ্বিতীয় দিন ৩ জন , তৃতীয় দিন ৩ জন , চতুর্থ দিন ৩ জন থেকে বেড়ে গিয়ে পর্যায়ক্রমে ৬, ৮, ১১, ১৪, ২৪, ২৭, ৩৩, ৩৯, ৪৪, ৪৮ জন । মারা গেছেন ৫ জন। এটি ছিলো শুধু ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হওয়া করোনা আক্রান্তদের তথ্য। যার মধ্যে অনেকে সুস্থ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আইইডিসিআর। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত করোনা সন্দেহে ভর্তি হয়েছেন অনেকে। যাদের অনেকে পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাচ্ছেন না শুধুমাত্র দেশের চিকিৎসা সেবার ঘাটতি এবং করোনা প্রতিরোধে চিকিৎসা সামগ্রীর অভাবে। এছাড়াও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের মধ্যে এনিয়ে নেই কোনো ধরনের সচেতনতা। চলছে অবাধে চলাফেরা এবং মেলামেশা। নেই স্থানীয়ভাবে এটি প্রতিরোধের কোনো জনসচেতনতামুলক কার্যক্রম।
যদি অন্য দেশগুলোর সাথে মিলিয়ে দেখি, তাহলে বাংলাদেশও একই পথে হাঁটছে যা বলার অপেক্ষা রাখেনা। অপেক্ষা শুধু সময়ের ব্যবধান। কারণ, ৩৮ দিন পর আমাদের অবস্থাও ইতালি, আমেরিকা বা স্পেনের মতো হবেনা একথা কোনোভাবেই বলা যায়না। বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশের অবস্থা তখন আরও ভয়াবহ হতে পারে। কারন জনসংখ্যার ঘনত্ব আর মানুষের মধ্যে সতর্কতা ও সচেতনতাবোধ কাজ না করায় এর ফলাফল অতি মহামারী এবং চরম বিপর্যস্ত অবস্থায় পৌঁছাবে।
সুতরাং বাংলাদেশের মানুষের ভাবার সময় শেষ, এখন শুধুই দরকার ঘরে থাকা। অর্থাৎ হোম কোয়ারেন্টাইন একমাত্র নিরাপদ ব্যবস্থা। তা না হলে নিরাপত্তাহীনতায় পড়তে খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে না। তখন হয়ত ঘুরে দাঁড়ানোর বৃথা চেষ্টায় মরিয়া হবে বাংলাদেশ।
সুতরাং বাঁচার উপায়, ঘরে থাকুন, ঘরে থাকুন এবং ঘরে থাকুন। অতি জরুরি ছাড়া জীবনের প্রয়োজনে করোনা উপেক্ষা করে ঘর থেকে বের হবেন না। আপনি এখন সাময়িক কষ্ট ও ক্ষতির মুখে পড়ে এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে পারেন সচেতনতার কারণে। পরবর্তীতে এর চেয়ে ভালো সময় আপনার আমার মাধ্যমে মঙ্গলময় সম্ভাবনার বাংলাদেশ উপহার দিতে পারবো ইনশাআল্লাহ।