fbpx
হোম অন্যান্য মহামারীতে মহানবী (সা.) এর পরামর্শ
মহামারীতে মহানবী (সা.) এর পরামর্শ

মহামারীতে মহানবী (সা.) এর পরামর্শ

0

বিশ্ব আজ করোনা ভাইরাসের জ্বরে কাঁপছে । চারিদিকে শুধু হাহাকার আর ক্রন্দন । প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিল মানুষের হৃদয়কে অশান্ত করে তুলেছে । করোনা ভাইরাস নামক এই মহামারী পৃথিবীতে নতুন বটে তবে যুগে যুগে বিভিন্ন মহামারী এর আগেও এসেছিল । এ নিয়ে নবী (সা.) ও সাহাবীদের মাঝেও হয়েছে নানা আলোচনা ।

মহামারী প্রসঙ্গে আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে প্লেগ রোগ (মহামারী) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। আল্লাহর নবী (সা.) তাকে জানান, এটি হচ্ছে এক ধরনের শাস্তি। আল্লাহ যার ওপর তা পাঠাতে ইচ্ছা করেন, পাঠান। কিন্তু আল্লাহ এটিকে মুমিনের জন্য রহমত বানিয়েছেন। অতএব, প্লেগ রোগে কোনো বান্দা যদি ধৈর্য্য ধরে এবং এ বিশ্বাস নিয়ে নিজ শহরে অবস্থান করতে থাকে যে, আল্লাহ তার জন্য যা নির্ধারিত করে রেখেছেন, তা ব্যতীত আর কোনো বিপদ তার ওপর আসবে না, তাহলে সেই বান্দা শহীদের মর্যাদা লাভ করবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৭৩৪)।

এ প্রসঙ্গে নবী (সা.) সহিহ মুসলিমে বলেন, ‘মুমিনের অবস্থা বিস্ময়কর! সবকিছুই তার জন্য কল্যাণকর। আর এ বৈশিষ্ট্য কেবল মুমিনের। তারা সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে শুকর আদায় করে। আর অসচ্ছলতা বা দুঃখ-মুসিবতে আক্রান্ত হলে ধৈর্যধারণ করে। সবকিছু তার জন্য কল্যাণকর।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৯৯৯)।

নবীর এই বাণী বর্তমান সময়ে করোনা ভাইরাসের প্রকোপে বিপর্যস্ত পৃথিবীতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । যে কোনো মহামারী রোগই মুসলিম-অমুসলিম সবার মনেই ভীতির সঞ্চার ঘটায়। মহামারীতে জনপদের পর জনপদ উজাড় হয়ে যাওয়ার নজির অতীতে বহু রয়েছে। অমুসলিমের জন্য মৃত্যু মানে সবকিছু হারিয়ে ফেলা। আর একজন মুমিন মুসলিমের কাছে মৃত্যু মানে সবকিছু হারানো তো নয়-ই, বরং তাতে তার মর্যাদা বৃদ্ধি ও চিরকল্যাণকর জান্নাত লাভের প্রশ্ন জড়িত। মুলত এ প্রসঙ্গেই নবী (সা.) এই বাণী তুলে ধরেন । সুখ-দুঃখ দুটিই মুমিনের জন্য কল্যাণের, বিষয়টি স্পষ্ট এ থেকেই।

অপরদিকে অমুসলিম কাফেররা যেহেতু মৃত্যু-পরবর্তী জীবনে আল্লাহর তরফ থেকে কোনো কল্যাণপ্রাপ্ত হবে না। এ মৃত্যু তাদের জন্য ভয়ের। আল্লাহ বলেন, ‘তারা (কাফেররা) যাদের জন্য আখেরাতে রয়েছে কেবলই জাহান্নামের অগ্নি…।’ (সূরা হুদ, আয়াত : ১৬)।

আল্লাহ মহামারীর কারণ হিসেবে বলেন, ‘মানুষের কৃতকর্মের কারণে জলে ও স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে তাদের কোনো কোনো কর্মের শাস্তি তিনি তাদের আস্বাদন করান, যাতে তারা (তাদের কৃতকর্ম থেকে) ফিরে আসে।’ (সূরা রুম, আয়াত : ৪১)।
নবীজি (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারী আকারে প্লেগ রোগের (মহামারীর) প্রাদুর্ভাব ঘটে। তা ছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে কখনও দেখা যায়নি।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০১৯)।

নবীর বাণী অনুসারে যে কোনো বিপদে বান্দা তার পাপের জন্য মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ও শেষ আশ্রয় হিসেবে তাঁরই দিকে ফিরে আসুক, এটাই মহান প্রতিপালকের প্রত্যাশা। পবিত্র কোরআনের একাধিক স্থানে বিপদে আল্লাহমুখী হওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। তাই মহামারী দেখা দিলে মুমিনের প্রধান কাজ হল নিজের ভুলত্রুটির জন্য আল্লাহর কাছে বিনীত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাদের শাস্তি দিয়ে পাকড়াও করলাম; কিন্তু তারা তাদের প্রতিপালকের প্রতি বিনয়াবনত হল না এবং কাতর প্রার্থনাও করল না।’ (সূরা মুমিনুন, আয়াত : ৭৬)। বেশিরভাগ মহামারীই সংক্রামক। তাই রাসূলুল্লাহ (সা.) মহামারীর সংক্রমণ রোধে আক্রান্ত অঞ্চলে যাতায়াত নিষিদ্ধ করেছেন। মুমিন, ইমান ও আন্তরিকতার সঙ্গে ধৈর্য্য ধারণ করবে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘কোথাও মহামারী দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা থেকে চলে এসো না। অন্যদিকে কোনো এলাকায় এটি দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে জায়গায় যেয়ো না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১০৬৫)।

তাই রোগ-ব্যাধি থেকে বাঁচার জন্য নবী (সা.) পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযু বিকা মিনাল বারাছি ওয়াল জুনুনি ওয়াল জুযামি ওয়া মিন সাইয়্যিল আছকা-ম’। অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শ্বেত, উন্মাদনা, কুষ্ঠ এবং সব দুরারোগ্য ব্যাধি হতে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৫৫৪)।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry
8

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *