fbpx
হোম আন্তর্জাতিক ভারতের বিরুদ্ধে হোয়াটসঅ্যাপের মামলা
ভারতের বিরুদ্ধে হোয়াটসঅ্যাপের মামলা

ভারতের বিরুদ্ধে হোয়াটসঅ্যাপের মামলা

0

ভারতে সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোকে সরকার যে নতুন শর্তাবলী মানার নির্দেশনা দিয়েছে, তার বিরুদ্ধে হোয়াটসঅ্যাপ দিল্লিতে মামলা করেছে। দিল্লি হাইকোর্টে দায়র করা ওই মামলায় হোয়াটসঅ্যাপ বলেছে, ভারতীয় সংবিধানে নাগরিকদের যে প্রাইভেসি বা গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার দেওয়া হয়েছে সরকারের নির্দেশ তার পরিপন্থী।

অন্যদিকে, ভারতের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় যুক্তি দিচ্ছে, সামাজিক মাধ্যমে “ফেক নিউজ” কারা ছড়াচ্ছে বা কোন উৎস থেকে তা সৃষ্টি হচ্ছে সেটা জানার পূর্ণ অধিকার তাদের আছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই বিতর্কে দুপক্ষের কথাতেই কিছু যুক্তি আছে এবং সম্ভবত মাঝামাঝি একটা জায়গাতেই তাদের রফা করতে হবে।

হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, টুইটার বা গুগলের পেরেন্ট সংস্থা অ্যালফাবেটের মতো টেক জায়ান্টগুলোকে ভারতে কিছু নতুন বিধিনিষেধ মেনেই চলতে হবে- সরকার তা জানিয়ে দিয়েছিল প্রায় মাস তিনেক আগেই। দেশের আইনমন্ত্রী ও তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত রবিশঙ্কর প্রসাদ পার্লামেন্টেই ঘোষণা করেছিলেন, ভারতের আইনকে পাশ কাটিয়ে সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলো এদেশে ব্যবসা করতে পারবে না।

গত ফেব্রুয়ারিতেই তিনি পার্লামেন্টে বলেন, আমরা এই প্ল্যাটফর্মগুলোকে সমালোচনা করার অধিকারও দিয়েছি – প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের যে কাউকে আপনি সেখানে আক্রমণ করতে পারেন, ভারতের সংবিধানও সেই অধিকার দেয়। কিন্তু যদি সামাজিক মাধ্যম অপব্যবহার করে কেউ হিংসা ছড়ায়, ফেক নিউজ প্রচার করে বা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষে উসকানি দেয় তাহলে আমাদের তার তদন্ত করতেই হবে। আপনারা ভারতে ব্যবসা করুন কোনও সমস্যা নেই, এখানে আপনাদের কোটি কোটি ফলোয়ার আছে, যত খুশি টাকাও কামান – কিন্তু দেশের সংবিধান ও আইনকেও আপনাদের মেনে চলতে হবে।

এই নতুন বিধিনিষেধের কারনে হোয়াটসঅ্যাপ দিল্লি হাইকোর্টে এর বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিয়েছে। তারা যুক্তি দিচ্ছে, সরকারের দাবি অনুসারে যদি কোনও মেসেজের ”অরিজিনিটের” কে, অর্থাৎ কার হাতে সেটির সৃষ্টি তা জানাতে হয় – তাহলে তাদের এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ভাঙতে হবে এবং গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে আপষ করতে হবে।

ভারতে নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে কোনও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মামলা রুজু করার ঘটনা এই প্রথম। তবে বিতর্কটাও যে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক, তা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই ইন্ডিয়ান স্কুল অব এথিক্যাল হ্যাকিংয়ের অধিকর্তা সন্দীপ সেনগুপ্তর।

তিনি বলছিলেন, আসলে দুতরফেই কিছু বৈধ যুক্তি আছে। সরকারকে যেমন ফেক নিউজ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে, এটা ভারতে একটা মারাত্মক সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। ফেক নিউজ থেকে দেশে দাঙ্গা শুরু হতে পারে, অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা তৈরি হতে পারে, এমন কী বিদেশি শত্রুরাও এটাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ভারতে গন্ডগোল বাঁধিয়ে দিতে পারে। এই জন্যই সরকার সামাজিক মাধ্যমগুলোকে দুতিনটে শর্ত দিচ্ছে – যেমন, কোনও পোস্টকে সরকার ফেক নিউজ বলে চিহ্নিত করা মাত্র সেটাকে সরিয়ে নিতে হবে। আর সেই সঙ্গেই জানাতে হবে কে প্রথম সেটি আপলোড করেছিল, অর্থাৎ ওই পোস্টের অরিজিনেটর কে!

বিজেপির ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও সিনিয়র এমপি বিনয় সহস্রবুদ্ধে আবার পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন, সামাজিক মাধ্যমে যে কেউ নিজের ইচ্ছেমতো স্বাধীনভাবে নিজের মত প্রকাশ করতে পারেন- প্রথাগত মিডিয়ার সঙ্গে তাদের এটাই মূল পার্থক্য। কিন্তু সামাজিক মাধ্যম সংস্থাগুলো যদি শুধু প্ল্যাটফর্ম দেওয়ার বদলে কে কী বলছেন, কেন বলছেন তার খবরদারি করতে বসে তাহলে তারাও একরকম প্রথাগত মিডিয়াই হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে প্রেস কাউন্সিলের নিয়মকানুন বা বিদেশি বিনিয়োগের শর্ত কেন তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না?”, প্রশ্ন তুলছেন তিনি।

ভারতের আগে চীন-সহ বিভিন্ন দেশেই এই ধরনের শর্ত আরোপ নিয়ে সামাজিক মাধ্যম জায়ান্টরা সরকারের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছে। কোনও দেশে তারা পাট গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে, কোথাও বা ব্যবসা করছে কিছুটা আপস করেই।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *