ভাগ্নের মৃত্যু: স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রবাসী চিকিৎসক
ভাগ্নেকে নিয়ে প্রবাসী মামার আবেগঘন স্ট্যাটাস। কামরুজ্জামান নাবিল চেঞ্জ টিভি.প্রেসের ইরান প্রতিনিধি, ইরানে অধ্যায়নরত মেডিকেল শিক্ষার্থী।
‘দু’মাস আগের কথা আম্মা কল দিয়ে জানালো বাবুর শরীরে Petechiae (মেডিকেল টার্ম) এমন কিছু দেখা যাচ্ছে। হাসপাতালে নিয়ে যেতে বললাম, সে সময় চিকিৎসক জানিয়েছিল এলার্জির কারণে এমন সমস্যা হতে পারে। সেভাবেই ট্রিটমেন্ট চলছিল।
হঠাৎ করে কিছুদিন আগে বাবু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, চিকিৎসা শেষে অনেকটা সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরেছিল। কিন্তু এর পরে বাবুর সারা শরীরে আবারো সেই Petechiae বাড়তে থাকে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে এক সপ্তাহ আগে এক চিকিৎসক জানান বাবুকে দ্রুত ঢাকায় নিয়ে যেতে।
এরপরে বাবুকে ভর্তি করা হয় ঢাকা শিশু হাসপাতালে, বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে ডাক্তাররা জানান বাবুর Von Willebrand Disease হয়েছে। তাঁরপর ট্রিটমেন্ট হিসেবে Fresh Frozen Plasma (FFP) দেয়া শুরু হয়। কিন্তু হঠাৎ এফএফপি দেয়ার সময় ২৪ তারিখ রাতের বেলা বাবুর চোখ ফুলে উঠে। অতঃপর সে সময় শিশু হাসপাতালে পর্যাপ্ত পিআইসিইউ (PICU) না থাকায় বেসরকারী হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়। এক পর্যায়ে বাবুকে রেনেসাঁ নামের একটি হাসপাতালে ৪৮ ঘন্টা গভীর পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। দেয়া হয় ফেক্টর ৯ ইনজেকশান। কিন্তু বাবুর শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তীত থাকায় আজ (২৭ নভেম্বর) সকালে এ্যাম্বুলেন্স করে রাজশাহী নিয়ে যাওয়া হয়।
রাজশাহী সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা জানান, আজ (২৭ নভেম্বর) বিকেল আড়াইটার দিকে বাবু আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।
নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে এজন্য যে, Petechiae দেখা গিয়েছিল ছবিও চেয়েছিলাম আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকদের দেখাবো বলে। কিন্তু তা কেন যেন আর হয়ে উঠেনি।
জানিনা দেশে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার স্থানগুলো কবে উপযুক্ত হবে। বিশেষ করে শিশুরা অসুস্থ হলে তাদের ভালো করে চিকিৎসক দেখান, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান, তাঁরা যে বলতে পারেনা তাঁদের ভেতরের কথা। জেনেটিক্স রোগ এড়াতে বিয়ের আগে ছেলে-মেয়ের রক্ত পরীক্ষা করুন।
ফ্যামিলিতে কারো জেনিটিক্যলি কোন রোগ থাকলে জন্মের পূর্ব থেকে নতুন যে আসছে তাঁর জন্য চিকিৎসকের স্বরনাপন্ন হন। বাবুকে সর্বশেষ ১৫ দিন আগে ভিডিও কলে দেখছিলাম, বিদায়ের সময় যখন তাকে খোদা হাফেজ বলে হাত নাড়া দিলাম সেও হাত নাড়া দিয়ে বিদায় জানালো। সেজ বোন বাবুর মা বলছিল কিভাবে সে হাত নাড়া দিচ্ছে ! কে জানতো এটাই তার শেষ বিদায়…
আল্লাহ রহম করুন, আমিন।’