ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্রিজের নাম পরিবর্তনে সমালোচনার ঝড়
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের টি.এ. রোড এলাকার টাউন খালের ওপর থাকা ‘থানা ব্রিজ’ সেতুটি ‘ফকিরাপুল বা ঘোড়াপট্রি পুল‘ হিসেবেই মানুষের কাছে পরিচিত।
হঠাৎ করে গত ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে জেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও সমাজসেবা অধিদফতরের পক্ষ থেকে সেতুতে বসা ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধের লক্ষে ভিক্ষুকদের নগদ ২৫ হাজার টাকা ও ২০ কেজি করে চাল দিয়ে সেতুর উপরে সাইনবোর্ড লাগিয়ে নাম পরিবর্তন করে থানা ব্রিজ দেওয়া হয়।
যেটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিংহভাগ মানুষের হৃদয়ে আঘাত হেনেছে বলে এলাকার বিশিষ্টজনেরা মন্তব্য করেছেন। এই নামের সাথে জড়িত আছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ঐতিহ্য। এদিকে ভিক্ষুকদের সরিয়ে ‘ফকিরাপুল’ থেকে ‘থানা ব্রিজ’ নামকরণ করার পর থেকেই গেলো কয়েকদিন ধরে চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।
‘থানা ব্রিজ’ নামকরণের প্রতিবাদ জানিয়ে সেতুটিকে আগের প্রচলিত নাম ‘ফকিরাপুল’ অথবা ‘ঘোড়াপট্টির পুল’ রাখার দাবি জানিয়েছেন অনেকেই। বিশেষ করে সোস্যাল মিডিয়া ফেসবুক সংগঠন “আমরাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া’র” উইশ ফর ব্যাটার ব্রাহ্মণ্যবাড়িয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ন্যাটিব ল্যাংগুয়েজ ইত্যাদি গ্রুপগুলোতে উঠেছে প্রতিবাদের ঝড়।
বিবর্ধন রায় নামে একজন ফেসবুক পেজে লিখেছেন, সেতুটির নাম ঐতিহ্যবাহী এই পুলের আদি নামকরণের সঙ্গে আমাদের আবেগ জড়িত তাই ‘ঘোড়াপট্টি পুল’ রাখার দাবি জানাই। হাসান হাশমী নামে আরেকজন লিখেছেন, কোনদিন যেনো শহরের নামটাও বদলে যায় ! পরিবর্তন আমরা সবাই চাই, কিন্তু যদি বাপের নাম পরিবর্তন আনা হয়, তা মেনে নেওয়া যায় না । মেহেদী হাসান লেনিন লিখেছেন, পৌরসভা মেয়র মহোদয়া অনুগ্রহ করে এসব ঐতিহাসিক স্থাপনার নতুন নতুন নামকরণ বাদ দিয়ে পৌরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে উদ্যোগী হোন।
উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সভাপতি জহিরুল ইসলাম স্বপন লিখেছেন, ফকিরদেরকে কেন্দ্র করে এ নাম হওয়ায় সেটা পরিবর্তন করার বিষয়টি মানতে পারি না। কারণ ফকিররাও তো মানুষ। জেলা নাগরিক ফোরামের সভাপতি পিযূষ কান্তি আচার্য্য তার দেওয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ঘোড়াপট্টি ব্রিজেরই নামকরণের দাবি জানাচ্ছি, থানা ব্রিজ নয়। কারণ ঘোড়াপট্টির সাথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতিহাস জড়িত।
কবি মো. মনির হোসেন এক কমেন্টস এ লিখেছেন, সেতুটির নামকরণ শহরের কোনো সমাদৃত-খ্যাতিমান মানুষের নামেও হতে পারে। নারী নেত্রী নন্দিতা গুহ লিখেছেন, ‘ঘোড়াপট্টির পুল নামটির সাথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্য জড়িত, হিরন্ময় ইতিহাস আছে। এটা পরিবর্তন করা ঠিক হবে না।
উক্ত পুলটির নামের ইতিহাস জানতে গিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাহিত্য একাডেমির সভাপতি জয়দুল হোসেন কাছ থেকে জানা যায়, সেতুটি যেখানে আছে, এর কাছেই যাতায়াতের ঘোড়া এসে দাঁড়াত। এজন্য এলাকাটি ঘোড়াপট্টি হিসেবে পরিচিতি পায়। পরে সেখানে সেতু নির্মাণ হলে সবাই সেতুটিকে ঘোড়াপট্টির পুল হিসেবেই চিনত। পরবর্তীকালে এ সেতুতে ভিক্ষুকরা বসে ভিক্ষাবৃত্তি করার কারণে ফকিরাপুল নামে পরিচিতি পায়।
এইদিকে আজ ৩রা অক্টোবর “আমরাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া” গ্রুপের পক্ষ থেকে পৌরসভা মেয়র এর নিকট ঘোড়াপট্রি নাম পুনর্বহাল রাখার প্রসঙ্গে আবেদন পত্র দেওয়া হয় এবং নাম পুনর্বহাল থাকার পক্ষে শহরে সাক্ষর অভিযানে নেমেছে গ্রুপের সদস্যরা।
এ ব্যাপারে পৌরসভা মেয়র মিসেস নায়ার কবির বলেন, ভিক্ষুকরা বসে ভিক্ষাবৃত্তি করতেন বলে মানুষ ব্রিজটিকে ফকিরাপুল নামে ডাকত। কিন্তু ব্রিজের কোনো নামকরণ ছিল না। ফকিরাপুল শুধু মানুষের মুখে মুখেই ছিল। তাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে এবং ফরিকরাপুল নাম ঘুচানোর জন্যই ব্রিজটির নামকরণ করা হয়েছে।