fbpx
হোম অন্যান্য বিষাক্ত মেকআপ দিয়ে ৬০০ পুরুষের হত্যা করে ইতিহাসের যে সফল সিরিয়াল কিলার নারী!
বিষাক্ত মেকআপ দিয়ে ৬০০ পুরুষের হত্যা করে ইতিহাসের যে সফল সিরিয়াল কিলার নারী!

বিষাক্ত মেকআপ দিয়ে ৬০০ পুরুষের হত্যা করে ইতিহাসের যে সফল সিরিয়াল কিলার নারী!

0

ইতিহাসের সবচেয়ে সফল সিরিয়াল কিলার (ধারাবাহিক খুনি) যার নাম সবার কাছে অপরিচিত। তিনি হলেন ১৭ শতকে ইতালিতে গিউলিয়া তোফানা। তিনি শত শত পুরুষকে বিষ দিয়ে হত্যা করেছিলেন। বিষকে তিনি মেকআপ প্রসাধনী রূপে বিক্রি করতেন। এতো হত্যার পরেও তাকে হিরো ভাবা হয়!
যারা তার কাজকর্মকে সমর্থন করেছে তারা কোনো না কোনোভাবে তার এই খুনের সঙ্গে জড়িত হওয়া ঘটনাগুলো যুক্তি দিয়ে মেনে নিয়েছে।

গিউলিয়া তোফানা আনুমানিক ১৬২০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন ১৬৫৯ সালে। যার তৈরিকৃত বিষে মারা গেছেন অন্তত ৬০০ জনের মতো পুরুষ। তিনি বিষ প্রয়োগে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে একটি নিদিষ্ট শ্রেণীর মানুষকে হত্যা করতেন। তিনি তাদেরই হত্যা করতেন যাদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই মনে করতেন। তার এই হত্যাকান্ডের জন্য তার নাম রাশিয়ান সিরিয়াল কিলার দারিয়া সাল্টিকোভা ও হাঙ্গেরিয়ান সিরিয়াল কিলার এলিজাবেথ ব্যাথোরির পাশাপাশি রাখা হয়।

দারিয়া সাল্টিকোভা করেছিলেন ১০০ এর অধিক খুন আর এলিজাবেথ ব্যাথরি করেছিলেন ৬৫০ এর অধিক! দারিয়া সাল্টিকোভা ও এলিজাবেথ বাথরির খুনের জন্য সম্পদ ও ক্ষমতার প্রয়োজন হলেও গিউলিয়া তোফানা এর কোনোটি ছাড়াই এতোগুলা হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন।

গিউলিয়া তোফানা মূলত সেসব নারীদের বিষ প্রস্তুত করে দিতেন যাদের স্বামীরা স্ত্রীদের উপর নির্যাতন চালাতো এবং সেই সব নারীরা একটি অসুখী জীবনযাপন করতো। যেহেতু রোমে তখন বিবাহ বিচ্ছেদের প্রচলন ও ছিল না, এই নরকীয় জীবন থেকে মুক্তির একমাত্র পথ ছিল মৃত্যু, সেটা হোক নিজের বা স্বামীর।

যে বিখ্যাত বিষ এর প্রস্তুতকারক হিসেবে গিউলিয়া তোফানার এতো পরিচিত সেই বিষের নাম হলো ‘একুয়া তোয়াফানা’। গিউলিয়া তোফানার নামেই যার নামকরণ। এই বিষ এতোটাই ভয়ংকর ছিল যে মৃত্যুর পর মৃতদেহের ময়নাতদন্তেও সেই বিষের উপস্থিতি ধরা পড়তো না।

গিউলিয়া তোফানাকে মনে করা হয় ইতিহাসের অন্যতম ভয়ংকর নারী সিরিয়াল কিলার। তবে ইতিহাসের এই খুনী সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি এবং তার কোনো প্রতিকৃতি ও পাওয়া যায় নি। যতটুকু জানা যায় তোফানা ১৬২০ সালে ইটালির দক্ষিণাঞ্চলের পালেরমো শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার একটি মেয়ে আছে জানা যায় যদিও এর বেশি সেই মেয়ে সম্পর্কে আর কিছু জানা যায়নি। সেই সময়ে বিভিন্ন বিষ এবং বিষজাতীয় দ্রব্যের প্রয়োগ ছিল খুব সাধারণ ঘটনা। এবং অনেকেই ছিলেন যারা একে পেশা হিসেবে নিতেন। গিউলিয়া তোফানা তার পরিবারের একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন না যিনি বিষ তৈরি করে মানুষ হত্যা করতেন। তার মাও বিষ প্রস্তুত করতে পারতেন। তার মা থোফানিয়া ডি’আদামো কে ১৬৩৩ সালে ইতালির সিসিলির পালের্মোতে তার স্বামীকে হত্যার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

সেসময় যে বিষগুলো সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত এবং জনপ্রিয় ছিল সেগুলো হলো- কান্তারেলা, স্ট্রিকিনিন, হেমলক, বেলাডোনা, ফক্সগ্লোভ, একুয়া তোফানা এবং আর্সেনিক। গিউলিয়া তোফানার মার্কেটিং কৌশল ভিন্ন ধরণের ছিল। তোফানা বিষ বিক্রি করতেন একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর নারীদের কাছে। যারা জীবনে অসুখী ছিলেন। সেই সময়ে বিবাহ পদ্ধতি ছিল আগে থেকেই ঠিক করে রাখা এবং কেউ বিবাহিত জীবনে অসুখী হলে কিংবা শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের শিকার হলেও ডিভোর্স এর কোনো কার্যকরী পদ্ধতি ছিল না। অনেক নারীই ছিলেন যারা স্বামীর হাত থেকে মুক্তি চাইতেন। অনেক নারীই তোফানার কাছে আসতেন এবং দারিদ্র্যতাসহ বিভিন্ন ভয়ংকর নির্যাতনের কথা বর্ণনা করতেন যা ঘরের ভেতর তাদের উপর করা হত।

তোফানা তাদের সাহায্য করতে চাইতেন এবং স্বামীসহ পারিবারিক এসব নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বিধবা হওয়ার মাধ্যমে তাদের মুক্ত করতে চাইতেন। তিনি ইতালির দক্ষিণের দিকে বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্রীর ব্যবসা শুরু করলেন। তার সবচেয়ে জনপ্রিয় দ্রব্য ছিল একুয়া তোফানা নামক বিষ। যা তিনি পাউডার মেকআপ হিসেবে বিক্রি করতেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে একুয়া তোফানা কোনো মেকাপ সামগ্রী ছিল না। এটি ছিল আর্সেনিক, লেড এবং বেলাডোনার এক মিশ্রণ। আলাদাভাবে এই তিনটিই এক একটি ভয়ানক বিষ। তবে এই তিন বিষের মিশ্রণে তৈরি নতুন বিষ এর ধারণা তোফানার মাথায় এসেছিল নাকি তার মা থোফানিয়া ডি আদেমো এর মাথায় এসেছিল তা জানা যায় না। একুয়া তোফানা এতটাই ভয়ংকর বিষ ছিল যে এর চার ফোটাই যথেষ্ট ছিল একজন মানুষ এর মৃত্যুর জন্য।

আর্সেনিক, লেড এবং বেলাডোনার মিশ্রণে তৈরি হতো একুয়া তোফানা। তোফানার পরিকল্পনায় ছিল দরিদ্র নারীরাও যেন এই বিষ ক্রয় করতে পারে সেইভাবে তৈরি এবং বাজারজাত করা। যেন সব শ্রেণির নারীরাই এটা কিনতে পারেন এবং এতে ব্যবসা ও হবে লাভজনক। একুয়া তোফানা ছিল বর্ণহীন, স্বাদহীন এবং গন্ধহীন বিষ। একটি ছোট বোতলে করে একুয়া তোফানা বিক্রি হত। এবং বোতলের গায়ে সেন্ট নিকোলাস এর ছবি থাকতো। এই বোতল শোভা পেত অনেক নারীর ড্রেসিং টেবিলে অন্যান্য প্রসাধনী সামগ্রীর সঙ্গেই। এর বোতলের ডিজাইনই এমন ছিল যে ভুলেও কেউ সন্দেহ করতে পারতো না। তোফানার বিষের ব্যবসা এভাবে ভালোই চলছিল।

তবে সমস্যা বাঁধল ১৬৫০ সালের দিকে। তোফানার এক নারী গ্রাহক এক অঘটন বাঁধিয়ে বসলেন। সেই নারীর সঙ্গে তার স্বামীর সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। একদিন সেই নারী তোফানার কাছ থেকে একুয়া তোফানার একটি বোতল নিয়ে যান এবং স্বামীর জন্য তৈরিকৃত সুপ এ মিশিয়ে দেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ঐ নারীর মন পাল্টে যায় এবং সে তার স্বামীর হাত থেকে সুপ এর বাটি কেড়ে নেয়। ঐ নারীর স্বামীর এতে সন্দেহ হয় এবং সে তাকে জেরা করতে শুরু করে। এক পর্যায়ে সেই নারী তোফানা এবং তার বিষ এর কথা সব বলে দেয় এবং পরে তার স্বামী এই খবর কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে। তবে সুন্দরী তোফানা ছিলেন অনেক জনপ্রিয়। তার জনপ্রিয়তার কারণে তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

এরপর তোফানা এক চার্চের কাছে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেন এবং চার্চ তার আবেদন মঞ্জুর করে। এরই মধ্যে এক গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, তোফানা রোম এবং এর আশেপাশের এলাকার পানিতে তার তৈরিকৃত একুয়া তোফানা বিষ মিশিয়ে দিয়েছেন। এই গুজবের পর পুলিশ আবার নড়েচড়ে বসে এবং জোর করে চার্চ থেকে তোফানা কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ধরে নিয়ে যায়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ এবং বিভিন্ন টর্চারের পর তোফানা স্বীকার করে তার তৈরিকৃত বিষে শুধু রোমেই ১৬৩৩ থেকে ১৬৫১ সালের মাঝে প্রায় ৬০০ জন মানুষ মারা গিয়েছিল। ১৬৫৯ সালে তোফানাকে তার মেয়ে এবং তাদের তিনজন গৃহ পরিচারিকাসহ দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেয়া হয়। সে বছরই তোফানাসহ তার মেয়ে এবং সাহায্যকারীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এভাবেই শেষ হয় গিউলিয়া তোফানা নামক এক নীরব ঘাতকের গল্প।

 

 

সূত্র: মিডিয়ামডটকম

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *