করোনা: বিশ্বময় বদলে যাচ্ছে আইন ও বাজেট
আমিনুল ইসলাম শান্ত
করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী বদলে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক আইন। সেসঙ্গে পাশ করা হচ্ছে নতুন, সংশোধিত ও সংযোজিত বাজেট। কারাবন্দী ও রাজবন্দীদের মুক্তি দেওয়া হচ্ছে নতুন আইনের আওতায় অথবা আইনের বিশেষ ব্যাখ্যায়।
জাতিসংঘের প্রধান অ্যান্টোনিও গুতেরেস দরিদ্র দেশগুলোকে করোনা ভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় সহায়তা করতে ২ বিলিয়ন ডলার আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তায় আবেদন করেছেন।
মার্কিন বিচার বিভাগের নথিতে বলা হয়েছে কেউ ইচ্ছা করে করোনা ভাইরাস ছড়ালে তিনি সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন! ভারতে এক নারীকে করোনা বলে টিজ করায় প্রেপ্তার করা হয়েছে একজনকে।
এভাবে করোনার প্রভাবে আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ বিভিন্ন দেশের বাজেট ও আইনে আসছে নতুনত্ব।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২ ট্রিলিয়ন ডলার বরাদ্দ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র করোনা মোকাবিলায় ২ ট্রিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করছে। এ অর্থ ব্যয় হবে শ্রমিকদের বেতন, ব্যবসায় সহায়তা এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে সহায়তার জন্য। বুধবার দেশটির সিনেট পাস করেছে এই বাজেট।
অস্ট্রেলিয়ায় বেকার ভাতা দ্বিগুণ
৮ হাজার ৩৬০ কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলারের প্রণোদনা বাজেটের আওতায় বেকার ভাতা দ্বিগুণ করা হয়েছে। সাধারণত একজন অস্ট্রেলিয়ান বেকার নাগরিক প্রতি দুই সপ্তাহে সরকার থেকে সাড়ে ৫০০ ডলারের মতো ভাতা পান। এ টাকা দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রেক্ষাপটে একজন বেকার নাগরিক খুবই সাধারণ জীবন যাপন করতে পারেন। এখন এই দুর্যোগের সময় আগামী ছয় মাসের জন্য বেকার ভাতা দ্বিগুণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সোল ট্রেডার ও কাজ্যুয়াল কর্মী, যাঁরা বর্তমানে প্রতি ১৫ দিনে ১ হাজার ৭৫ ডলারের কম উপার্জন করেন, তাঁরাও এই সুবিধা পাবেন। এ ছাড়া বয়স্ক, শারীরিক প্রতিবন্ধী, নিম্ন আয়ের যেসব অভিভাবক শিশু অথবা স্কুলপড়ুয়া বাচ্চাদের লালন পালন করেন, তাঁদের নিয়মিত ভাতার সঙ্গে অতিরিক্ত ভাতা হিসেবে এককালীন ৭৫০ ডলার দেওয়া হবে। এ ছাড়া ২০২০ ও ২০২১ এই দুই বছর নিজের সুপারএ্যানুয়েশন ফান্ড থেকে ১০ হাজার ডলার করে তুলতে পারবেন তাঁরা।
ভাতা পাওয়ার জন্য রাষ্ট্রীয় ভাতা প্রদান সংস্থা সেন্টার লিংকে যাঁরা ইতিমধ্যে তালিকাবদ্ধ আছেন, তাঁদের নতুন করে আর তালিকাবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন নেই। অন্যরা ব্যক্তিগতভাবে অথবা অনলাইনে তালিকাবদ্ধ হতে পারবেন। এ ছাড়া বিদেশি কর্মী যাঁরা অস্ট্রেলিয়ায় কাজ করছেন, তাঁদেরও এককালীন কিছু ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা বিবেচনা করছে সরকার। তা ছাড়া প্রায় ৭ লাখ ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীর ব্যবসা চালু রাখতে কর্মচারীদের বেতন দিতে কিছু ট্যাক্স ফ্রি নগদ প্রণোদনা ও সহজ ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
বাংলাদেশে রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ
বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘করোনা ভাইরাসের কারণে অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছেন। তাদের পাশে আমাদের দাঁড়াতে হবে। নিম্ন আয়ের ব্যক্তিদের ‘ঘরে ফেরা’ কর্মসূচির আওতায় নিজ নিজ গ্রামে সহায়তা প্রদান করা হবে। গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য বিনা মূল্যে ঘর, ছয় মাসের খাদ্য এবং নগদ অর্থ প্রদান করা হবে। জেলা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভাষানচরে ১ লাখ মানুষের থাকার ও কর্মসংস্থানের উপযোগী আবাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে কেউ যেতে চাইলে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বিনা মূল্যে ভিজিডি, ভিজিএফ এবং ১০ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। একইভাবে বিনা মূল্যে ওষুধ ও চিকিত্সাসেবাও দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি নিম্ন-আয়ের মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের শিল্প উত্পাদন ও রপ্তানি বাণিজ্যে আঘাত আসতে পারে। এই আঘাত মোকাবিলায় আমরা কিছু আপত্কালীন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য আমি ৫ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করছি। এ তহবিলের অর্থ দ্বারা কেবল শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাবে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে ব্যবসাবান্ধব বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।’
কানাডায় ৮২ বিলিয়ন ডলারের ‘কোভিড-১৯’ এইড প্যাকেজ
অবশেষে সকল দলের সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হলো ৮২ বিলিয়ন ডলারের করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত বিল । গত মঙ্গলবার দিনভর আলোচনা শেষে বুধবার ভোর রাতে হাউজ অব কমন্সের বিশেষ অধিবেশনে অনুমোদন পেল দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর প্রস্তাবিত ৮২ বিলিয়ন ডলারের ‘কোভিড-১৯’ এইড প্যাকেজ।