ফাঁদে পড়ে তরুণীর করুণ মৃত্যু; চাচা-ভাতিজা আটক !
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারীগামী মহাসড়কের পাশে আলাউদ্দিননগর মমিনপুর এলাকায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা উদ্ধারকৃত সেই তরুণীর পরিচয় মিলেছে।
প্রেম ঘটিত কারণে পূর্ব পরিকল্পনায় ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলা থেকে সুকৌশলে ডেকে এনে অষ্টাদশী সেই তরুণীকে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
হত্যার মোটিভসহ পুরো ঘটনা উন্মোচনসহ প্রায় ৫ মাস পর ধর্ষক ট্রাক চালক চাচা ও আপন ভাতিজাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে চাচা আছেন লালমনিরহাট জেল হাজতে এবং ভাতিজাকে পাঠানো হয়েছে যশোহর শিশু শোধনাগারে। হত্যার কাজে ব্যবহারকৃত ট্রাকটিও জব্দ করে ত্রিশাল থেকে লালমনিরহাটে আনার কথা জানান পুলিশ।
আজ সোমবার লালমনিরহাটের বি-সার্কেল এএসপি’র কার্যালয়ে হাতীবান্ধায় নয়তো পাটগ্রাম থানায় সাংবাদিকদের নিয়ে “মিট দ্যা প্রেস” একটি বিবৃতিমূলক সাক্ষাতকার আয়োজন করতে পারেন এমন আভাস পাওয়া গেছে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার জনৈক ট্রাক চালকের প্রেমে পড়েন একই এলাকার অষ্টাদশী এক তরুণী। নিজ এলাকায় সেই তরুণীর নাম হামিদা আক্তার। নাম বদলে কলগার্ল হিসেবে তার আলাদা পরিচিতি আছে। কোথাও সুরমা আবার কোথাও নন্দিনী নামে পরিচিত। আগের দুই স্ত্রী ও একাধিক সন্তান থাকায় ট্রাক চালক সুন্দরী হামিদাকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান। তবে তরুণীকে বিয়ে করার চাপ আসে বলে জানান পুলিশ। সেই চাপ সামলাতে না পেরে হামিদাকে অন্য কোথাও নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন ট্রাক চালক।
গত বছর পহেলা ডিসেম্বর ত্রিশাল থেকে রংপুরে আসতে বলা হয় সেই অষ্টাদশী তরুণীকে। ট্রাক চালক ও তার ভাতিজা (১৫) ট্রাক ভাড়ার উসিলায় আগেরদিন আসেন রংপুরে। তার আগে কুটকৌশল অনুযায়ী ১৫ দিন আগের থেকে তরুণীকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে নিষেধ করেন ট্রাক চালক। অন্য একজনের ফোন দিয়ে তাকে যোগাযোগ রক্ষা করতে বলেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বিয়ের কথা বলে রংপুরে আসতে বলা হয় তাকে। ওইদিন বিকেলে রংপুরের দেয়া ঠিকানায় চলে আসেন সেই তরুণী। এরপর রাতের খাবার করে ট্রাকে উঠে বুড়িমারীর উদ্দেশ্যে রওনা দেন ট্রাক চালক, চালকের ভাতিজা ও হামিদা। পথিমধ্যে বড়খাতা বাউরা বাজারের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাঘুরির পর চাচা-ভাতিজা কোন একসময় ধর্ষণ করেন ওই তরুণীকে।
জানা যায়, ওই তরুণী ফাঁদে পড়ার বিষয় টের পেলে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে ট্রাকে থাকা রড দিয়ে তরুণীর মাথায় সজোরে আঘাত করেন ট্রাক চালক। ট্রাকের উপরে মৃত্যু নিশ্চিত হলে পরে বুড়িমারী মহাসড়কের পাশে লাশ ফেলে পালিয়ে যান চাচা-ভাতিজা।
পরে পাটগ্রাম থানার জোংড়া ইউনিয়নের মমিনপুর আলাউদ্দিননগরের নির্জন এলাকার মহাসড়কের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ওই তরুণীর লাশ দেখে ২ ডিসেম্বর সকালে পুলিশকে খবর দেন স্থানীয় লোকজন। উদ্ধারকৃত বিবস্ত্র লাশের পোস্ট মর্টেম শেষে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করেন আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম।
তবে সেই দিনই একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন পুলিশ। ২ ডিসেম্বর দায়েরকৃত সেই ক্লু লেস মামলার মোটিভ উদ্ধারে প্রযুক্তি ব্যবহারের পর প্রথমে বাউরা জমগ্রাম থেকে একজন লোক জানান, এক মেয়ে ও দু’জন পুরুষ লোককে বাউরা বাজারে ঘুরাঘুরি করতে দেখা গেছে এমন তথ্য পায় পুলিশ। এরপর আদিতমারী থেকে আরও একজনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী তিনদিন আগে গত ২২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার পাটগ্রাম থানা পুলিশ বিশেষ টিম বিবস্ত্র সেই তরুণীর মৃত্যুর রহস্য উদ্ধার করতে সক্ষম হন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা চেঞ্জ টিভিকে এসব কথা অবগত করেন।
তিনি আরও বলেন, লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরীর সময় হামীদার গায়ে জামা, কোমর থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত বিবস্ত্র ও পায়ের নীচে পায়জামা, ওড়না পড়ে থাকতে দেখা যায়। মাথায় আঘাতের কারণে মাথা ফেটে রক্ত গড়িয়ে সারা শরীর ভিজে যায়। এছাড়া তার শরীরে অন্য কোথাও আঘাত ছিল না। তবে ধর্ষণের আলামত হিসেবে তার ব্যক্তিগত পার্টসে দুইজনের সিমেন্ট পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে পাটগ্রাম থানা ওসি সুমন কুমার মহন্ত বলেন, পুরো কাহিনী সাংবাদিকদের জানানো হবে। অপেক্ষায় থাকেন জেলা পুলিশের কর্মকর্তাগণ জানাতে আপনাদের ডাকবেন।