পুলিশের দাবি আত্মহত্যা, মা বলছে হত্যা…
চট্টগ্রাম ডবলমুরিং থানার বাদামতলীর বড় মসজিদ গলিতে এক তরুণের রহস্যময় মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গতকাল রাত থেকে চলছে ক্ষোভ। পুলিশের নির্যাতনে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তবে পুলিশ বলেছে এই যুবক আত্মহত্যা করেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭ টার দিকে এ ঘটনা ঘটলেও এলাকাবাসীর বিক্ষোভ চলতে থাকে মধ্যরাত পর্যন্ত। পুলিশ বলছে, নিহত তরুণ সন্দেহভাজন মাদক বিক্রেতা। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশের পাশাপাশি র্যাবের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। নিহত মো. মারুফ (১৯) আগ্রাবাদের টি এন্ড টি স্কুলের দশম শ্রেনীর ছাত্র ছিলেন বলে তার মা রুবি আক্তার জানিয়েছেন।
অন্যদিকে এলাকাবাসী দাবি করেন, মারুফের বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসার কোনো অভিযোগ তারা কখনো শুনেননি। এ ঘটনায় গতকাল রাতে এসআই হেলালকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সিএমপির উপকমিশনার (পশ্চিম) ফারুক উল হক বলেন, সন্দেহভাজন মাদক বিক্রেতার মা ও বোন অজ্ঞান হওয়ার অভিনয় করেন। তারপরও তাদের পুলিশ সদস্যরা আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু এর মধ্যে ওই মাদক বিক্রেতা বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করে।
তিনি জানান, খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধারে গেলে এলাকার লোকজনের বিক্ষোভের মুখে পড়ে। এসময় কয়েকশ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।
নিহত মারুফের মা রুবি আক্তার বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে ডবলমুরিং থানার এক সোর্স এসে তাদের বাসার পেছনে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। তিন দিন আগে ওই বাসা থেকে মারুফের ব্যবহৃত একটি ল্যাপটব, সাইকেল ও মোবাইল চুরি হয়। মারুফ তাই এই সোর্সকে দেখার সাথে সাথে জাপটে ধরে। এসময় দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়। কিছুক্ষণ পরে সিভিল ড্রেসে এস.আই হেলাল ও চারজন সহযোগী এসে উপস্থিত হয়। তারা আমার ছেলে মারুফকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে চায়। এসময় আমি ও আমার মেয়েরা বাধা দিই। তারা আমাদের শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করে।
এর মধ্যে এস.আই হেলাল নিজেকে ডিবির লোক পরিচয় দিয়ে বলে , তোর ছেলে ইয়াবা ব্যবসা করে। এক লাখ টাকা দিতে নাহলে তোদের সবাইকে চালান করে দেবো। এই সময় আশপাশের মানুষ জড়ো হয়ে তার এ কথার প্রতিবাদ করে। হেলাল সহ তার সহযোগীরা জোর করে ঘরে ঢুকে ইয়াবা আছে কিনা তল্লাশির নামে জিনিসপত্র ভাঙ্চুর করে। এর মধ্যে আমি আমার ছেলেকে সরিয়ে দেই। এতে আরো ক্ষেপে যায় এসআই হেলাল। সে আমাকে ও আমার মেয়েদের থানায় নিয়ে যেতে টানতে টানতে গাড়িতে তুলে। এরই ফাঁকে খবর পাই আমার ছেলের লাশ ফ্যানের সাথে ঝুলছে।
এলাকাবাসীর বিক্ষোভের মুখে তারা আমাদের ছেড়ে দেয। বাসায় এসে আমার ছেলের লাশ দেখি। আমি আমার ছেলেকে ফেরত চাই। নয়তো এসআই হেলাল সহ তার সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। মারুফের বোনের দাবি, তার ভাইকে এস.আই হেলাল মারধর করেছে। এছাড়া তাদের কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেছে। পুরো ঘটনা এবং এলাকাবাসীর সব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা ফারুক উল হক।