পঙ্গপাল কি ? কিভাবে দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি করে ?
ইংরেজি “locust” বা পঙ্গপাল শব্দটি এসেছে Vulgar Latin শব্দ locusta (লোকাস্টা) থেকে, যার অর্থ লবস্টার (lobster) বা লোকাস্ট।
পঙ্গপাল হলো ছোট শিংয়ের বিশেষ প্রজাতি যাদের জীবন চক্রে দল বা ঝাঁক বাধার পর্যায় থাকে। পঙ্গপাল এবং ঘাস ফড়িংয়ের মধ্যে কোন পার্থক্যগত শ্রেণীভাগ নেই।
এই পতঙ্গগুলো সাধারণত একাই থাকে কিন্তু বিশেষ অবস্থায় তারা একত্রে জড়ো হয়। তখন তাদের আচরণ ও অভ্যাস পরিবর্তিত হয়ে সঙ্গলিপ্সু হয়ে পড়ে।বিশেষ অবস্থায় তাদের প্রজাতিরা একত্র হওয়ার যে প্রবণতা দেখায় সেটাই মূল পার্থক্য।
এই ঘাস ফড়িংগুলো অনপকারী, তারা সংখ্যায় থাকে কম এবং কৃষির জন্য বিরাট কোন আর্থিক ক্ষতি করে না। তবে অনাবৃষ্টির পর দ্রুত ফসলের বর্ধন হলে এদের আচরণগত পরিবর্তন হয়। ফলে তারা প্রচুর পরিমানে ও দ্রুত জন্মদান শুরু করে।
তখন তারা একত্রে থাকে, যখন তাদের সংখ্যা বেশি হয় তারা যাযাবর হয়ে পড়ে। এতে থাকে পাখাবিহীন ছোট পঙ্গপাল যেটা পরে পাখা জন্মে দলে যোগ দেয়। এই পাখাবিহীন এবং পাখনাসহ পঙ্গপালের দল একসাথে চলাচল করে এবং দ্রুত ফসলের মাঠের ক্ষতি করে। পূর্নবয়স্ক পঙ্গপাল শক্তিশালী এবং তারা অনেক দূর পর্যন্ত উড়তে পারে আর পথে যেখানেই থামে সেখান থেকে ফসল খেয়ে শক্তি অর্জন করে।
তবে আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও পঙ্গপাল অনুকূল অবস্থায় যে কোন সময় দল গড়তে পারে যার ফলে দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা রয়েছে। পঙ্গপাল বড় প্রাণী এবং সহজেই গবেষণা বা জীব বিদ্যায় পরীক্ষা করার কাজে শ্রেণীকক্ষে ব্যবহৃত হতে পারে। এদের খাওয়াও যায়; ইতিহাসে তাই দেখা যায়। কিছু কিছু দেশে এদের খাদ্য হিসেবে অত্যন্ত উপাদেয় বিবেচনা করা হয়।
এক গবেষণায় দেখা যায়, পঙ্গপালের এই মরক তৈরি করার ইতিহাস বহু পুরনো। পুরনো মিশরীয়রা তাদের কবরে এদের এঁকেছিল বলে জানা যায়।
কোরআন ও ইলিয়ড বাইবেলসহ ইত্যাদি গ্রন্থে পঙ্গপালের উল্লেখ রয়েছে। ১০ লাখ পতঙ্গের একটি ঝাঁক দিনে ৩৫ হাজার মানুষের খাবার খেয়ে ফেলতে পারে। পঙ্গপালের দল ফসল ধ্বংস করে দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি করেছে যার ফলে মানুষ প্রচরণশীল হয়েছে। আরো সাম্প্রতিক সময়ে, কৃষিক্ষেত্রে নীতি পরিবর্তনের ফলে যেখানে এই দল উৎপন্ন হতে পারে তা বের করে শুরুতেই নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা করা যায়। পুরনো নিয়মের মধ্যে রয়েছে বাতাসে বা মাটিতে কীটনাশক ব্যবহার।