দিনে আয়া, রাতে ডিম বিক্রেতা
অনেক সুন্দর সুন্দর শব্দ মিশ্রিত বাক্য উচ্চারণ করে কথা বলেন ৷ কথা বললে মনে হবে আপনি একজন শিক্ষিত মা’য়ের সাথে আছেন৷
দেখে মনেই হবেনা তিনি একজন ডিম বিক্রেতা। কিন্তু সন্ধা হলেই নিয়মিতই দেখা যাবে সিদ্ধ ডিম বিক্রি করছেন কেয়া আক্তার।
কিন্তু কেন তাকে এই পেশা বেছে নিতে হলো? এমন প্রশ্নের উত্তর দিলেন চেঞ্জ টিভিকে।
জানালেন, জীবনের কঠিন মুহুর্তে এসে বাধ্য হয়েই রাজধানীর মহাখালী ওয়ারলেজ এলাকায় ডিম বিক্রি করতে বসেন তিনি। বেশ কয়েক বছর ধরে তার স্বামী রক্ত ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। একটা সময় স্বামী সংসার চালাতেন। কিন্তু আজ স্বামীর দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন তিনি। কিন্তু এই ডিম বিক্রি করে কি সংসার চালানো সম্ভব? সম্ভব ছিলো, যদি শুধু স্বামীকে নিয়ে জীবন ধারণের প্রয়োজন পড়তো।
তার এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে । ছেলে একাদশ শ্রেণীতে পড়ছে। মেয়ের বিয়ে হয়েছে নিজ এলাকা নোয়াখালীতেই । মেয়ে জামাই থাকেন বিদেশে। ছেলে-মেয়ে, আত্মীয়-স্বজন সবাই জানেন কেয়া আক্তার ঢাকাতে চাকরি করেন। কথাটা মিথ্যাও না বলে জানালেন তিনি।
তিনি দিনের বেলা মহাখালীর একটি প্রতিষ্ঠানে আয়া হিসেবে কাজ করেন। আর সন্ধার পর থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত বিক্রি করেন সিদ্ধ ডিম। কারণ তার সংসারের পাশাপাশি ছেলের পড়ালেখার খরচও চালাতে হয়। যা শুধু ডিম বিক্রি করে সম্ভব ছিলোনা। কেননা একদিকে স্বামীর জীবনের শেষ সময়টুকু পর্যন্ত বেঁচে থাকার জন্য যা যা প্রয়োজন তা তিনি নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে যেমন চেষ্টা করে যাচ্ছেন, অন্যদিকে সন্তানের ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ রেখে পড়ালেখার খরচ যোগাচ্ছেন। কিন্তু তবুও টানাপোড়নে দিন কাটে কেয়া আক্তারের।
একসময় এই কষ্টের প্রতিদান সন্তানের কাছে পাবে কিনা তা তিনি জানেন না। তবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন ঠিকি। স্বামীর ওষুধ, ছেলের খরচ, বাড়ী ভাড়া আর তিন বেলা দু’মুঠো ডাল-ভাত খাওয়ার মধ্য দিয়ে কঠিন এক সংগ্রামের দিকে ছুটে চলছেন এই মধ্যবয়সী নারী৷ কারো কাছে হাত পাততে চান না তিনি। যতদিন বেঁচে আছেন ততদিন নিজের কষ্টার্জিত অর্থে বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে চান কেয়া আক্তার৷
তবে তার শেষ ইচ্ছা, যদি একটা ভালো বেতনের কেউ কাজ দেয় যা থেকে স্বামী সন্তানের খরচটা সহজেই মিটিয়ে জীবনের বাকি সময়টুকু কিছুটা হলেও স্বস্তিতে কাটাতে পারেন৷