fbpx
হোম জাতীয় ডেঙ্গু চিকিৎসায় বাংলাদেশি গবেষক দলের সাফল্যের সম্ভাবনা
ডেঙ্গু চিকিৎসায় বাংলাদেশি গবেষক দলের সাফল্যের সম্ভাবনা

ডেঙ্গু চিকিৎসায় বাংলাদেশি গবেষক দলের সাফল্যের সম্ভাবনা

0

ডেঙ্গু চিকিৎসায় অ্যালট্রোমবোপাগ নামের একটি ওষুধ প্রয়োগ করে সাফল্যের সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছেন বাংলাদেশের একদল গবেষক। মূলত মানুষের রক্তে প্লেটলেট (রক্তের অণুচক্রিকা) কমে গেলে এ ওষুধটি ব্যবহার করা হতো। তবে কখনো ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় ওষুধটি ব্যবহার করা হয়নি।

গত ২১ নভেম্বর চিকিৎসা বিষয়ক সাময়িকী দ্যা ল্যানসেট জার্নাল-এর ইক্লিনিক্যাল মেডিসিন-এ ডেঙ্গু চিকিৎসায় অ্যালট্রোমবোপাগ ওষুধটির গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়। ওই গবেষণা দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশের ১২ জন গবেষক ও চিকিৎসক। তারা ১০১ জন ডেঙ্গু রোগীর ওপর ২৫ মিলিগ্রাম অ্যালট্রোমবোপাগ ওষুধ প্রয়োগ করেন। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওষুধটির সাফল্যের চিত্র দেখতে পান।

গবেষকদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সজীব চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগের একটি অন্যতম উপসর্গ হলো রক্তের প্লেটলেট কমে যায়। কিন্তু অ্যালট্রোমবোপ্যাগ নামের একটা ওষুধ রয়েছে যা রক্তের প্লেটলেট বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু ডেঙ্গু রোগে এটি কখনোই ব্যবহার করা হয়নি। ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় সেটা কতটা কাজ করতে পারে তা নিয়ে আমরা গবেষণা শুরু করি।

আন্তর্জাতিক ওষুধ কোম্পানি নোভার্টিস ২০০৮ সালে অ্যালট্রোমবোপ্যাগ নামের এই ওষুধ তৈরি করে। পরে ২০১৪ সালে ওষুধটি আমেরিকার ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (FDA) অনুমোদন লাভ করে। মূলত লিভারের রোগে যখন প্লেটলেট কমে যায়, তখন এই ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া অন্যান্য ব্যাধিতে ওষুধটি প্রয়োগ করা হয়।

ড. সজীব চক্রবর্তী বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের যেহেতু প্লেটলেটের সংখ্যা কমে যায়, তাই এই ওষুধটি রোগীদের প্লেটলেটের সংখ্যা বাড়াতে কাজ করতে পারে বলে আমরা ধারণা করেছি। তবে আমরা শতভাগ নিশ্চিত ছিলাম না। তখন এটা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে শুরু করি।

তিনি আরো বলেন, ওষুধ নিয়ে গবেষণা করে আমরা ভালো ফলাফল দেখতে পেয়েছি। যেসব ডেঙ্গু রোগীরা অ্যালট্রোমবোপাগ নামের ওষুধটি খেয়েছেন, আট দিনের মাথায় তাদের প্রায় ৯২ শতাংশ রোগীর প্লেটলেটের সংখ্যা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিলো। আর যাদের ওষুধটি দেয়া হয়নি, তাদের মধ্যে মাত্র ৫৫ শতাংশের সেটা ঠিক হয়েছিল। ফলে এই ওষুধটি সেবনের পর বেশিরভাগ রোগী সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন।

ওষুধটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ড. সজীব চক্রবর্তী বলেন, অ্যালট্রোমবোপাগ নামের ওষুধের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে কি-না, সেটাও আমরা দেখেছি। কারণ অনেকের প্লেটলেট বেড়ে গেলে সেটা ক্ষতির কারণ হতে পারে। অনেক সময় রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। কিন্তু রোগীদের ক্ষেত্রে (এই ওষুধে) এ রকম কিছু পাইনি। শুধু তিন শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে ডায়রিয়ার মতো কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পেয়েছি।

ড. চক্রবর্তী জানান, এটি ছিল দ্বিতীয় পর্যায়ের একটি পরীক্ষা। তবে ডেঙ্গু রোগের ওপর এই ওষুধের সাফল্যের বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত করতে হলে একাধিক দেশে কয়েক হাজার মানুষের ওপর তৃতীয় ধাপে মানব পর্যায়ের পরীক্ষা করা জরুরি।

তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইনে ওষুধটি প্রয়োগের অনুমতি এখনো আসেনি। কিন্তু আমাদের মতো আরো বৃহৎ পরিসরে পরীক্ষা করে সফলতা পাওয়া গেলে তখন নিশ্চয়ই এটা ডেঙ্গুর চিকিৎসার গাইডলাইনে অন্তর্ভুক্ত হবে।

ড. চক্রবর্তী জানান, ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই গবেষণাটি করা হয়। বাংলাদেশের ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালস নামের একটি ওষুধ কোম্পানির অর্থায়নে এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে।

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ অনেক বেশি। ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় কার্যকর ও সফল ওষুধ শনাক্ত করা গেলে এই অঞ্চলের অনেক মানুষ উপকার পাবেন।

 

 

 

সূত্র- বিবিসি বাংলা

 

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *