জম্মু-কাশ্মীরে ভারত গণহত্যা চালাতে পারে: পাকিস্তান
জম্মু-কাশ্মীরে ভারত ‘গণহত্যা’ চালাতে পারে বলে সতর্ক করেছে পাকিস্তান। জাতিসংঘে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, নয়াদিল্লির সঙ্গে এখন আর দ্বিপক্ষীয় আলোচনা সম্ভব নয়, বরং দেশটির সঙ্গে যে কোনো সময় যুদ্ধ বেধে যেতে পারে।
পাকিস্তানের এ অভিযোগের মধ্যেই কাশ্মীরে ফের ভারতীয় সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতনের খবর প্রকাশ পেয়েছে। তবে এ ইস্যুতে ইসলামাবাদের অভিযোগ ‘মনগড়া কাহিনি’ বলে আখ্যা দিয়েছে নয়াদিল্লি।
গত ৫ আগস্ট কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিলের পর অঞ্চলটি কার্যত অবরুদ্ধ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ মঙ্গলবার পবিত্র আশুরাও পালন করতে পারেননি তারা।
স্থানীয়রা বলছেন, তাজিয়া মিছিল করতে দিলে কী এমন ক্ষতি হতো বুঝতে পারছি না। এটা ধর্মীয় আচার। কিন্তু ভারতীয় বাহিনী আমাদের সে সুযোগও দেয়নি।
কাশ্মীর উপত্যকায় ভারতীয় সেনাবাহিনী সাধারণ বাসিন্দাদের অমানবিক নির্যাতন করছে, এমন খবর ফের গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। বিবিসির পর এবার আল-জাজিরা এ খবর প্রকাশ করেছে।
বার্তা সংস্থা এপির বরাতে তারা জানায়, গত এক মাসেরও বেশি সময়ে ভারতীয় সেনারা হাজার হাজার কাশ্মীরি যুবককে আটক করেছে। বাড়ি বাড়ি অভিযান চালিয়ে তাদের ধরা হয়। এরপর তাদের নির্জন সেলে নিয়ে পেটানো হয়, দেয়া হয় বৈদ্যুতিক শক।
যদিও এমন সংবাদ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। তারা বলছে, যাদের ধরা হয়েছে তাদের জঙ্গি সন্দেহেই ধরা হয়েছে।
এ অবস্থায় কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে পাকিস্তান। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের সভায় পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি বলেন, কাশ্মীরকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কারাগারে পরিণত করেছে ভারত। অঞ্চলটি থেকে কারফিউ প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কাশ্মীর নিয়ে মধ্যস্থতার আগ্রহ দেখিয়েছেন, আমরা তাতে রাজি কিন্তু ভারত রাজি নয়। কাশ্মীর এখন আর দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে সীমাবদ্ধ নেই। ভারতের আচরণের কারণেই এমনটা হয়েছে। তারা দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করে যাচ্ছে। যুদ্ধ ডেকে আনছে। কবে যে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে যুদ্ধ লেগে যায় বলা যাচ্ছে না। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সোচ্চার হতে হবে। জাতিসংঘকে কার্যকরী ভূমিকা নিতে হবে।
কুরেশির এ বক্তব্যকে ‘বানোয়াট’ বলে মন্তব্য করেছে ভারত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী বিজয় ঠাকুর সিং বলেন, নয়াদিল্লির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর অধিকার ইসলামাবাদের নেই।
বিজয় ঠাকুর সিং বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশ কূটনীতির বদলে জঙ্গিনীতি অবলম্বন করেছে। তাদের দেশে জঙ্গি তৈরি হয়, যা ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। তারা যে অভিযোগ তুলেছে তা পুরোপুরি মিথ্যে। বৈষম্য দূর করার জন্যই কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করা হয়েছে। এটা আমাদের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত।
সভা শেষেও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পরে এক টুইট বার্তায় তিনি জানান, কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের অবস্থানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে চীন, তুরস্কসহ অর্ধশতাধিক রাষ্ট্র।
অন্যদিকে, ভারতের দাবি, কাশ্মীর ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র একপাক্ষিক চিন্তা করছে। বিশেষ করে দেশটির গণমাধ্যমের খবরের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এদিকে, ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির দাবি, কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বাতিলের পর এবার আজাদ কাশ্মীর দখলে নেয়া নয়াদিল্লির লক্ষ্য।