fbpx
হোম অন্যান্য চাপে পড়ে স্বামীকে ডিভোর্স; একঘরে অঞ্জলি’র আশ্রয় এখন মন্দিরে
চাপে পড়ে স্বামীকে ডিভোর্স; একঘরে অঞ্জলি’র আশ্রয় এখন মন্দিরে

চাপে পড়ে স্বামীকে ডিভোর্স; একঘরে অঞ্জলি’র আশ্রয় এখন মন্দিরে

0
লালমনিরহাটের পাটগ্রামে বেদনাদায়ক ঘটনায় মর্মাহত এলাকাবাসী। উপজেলার জোংড়া সরকারের হাট সেনপাড়া এলাকায় সংখ্যালঘু  এক পরিবারে প্রায় ৩০ বছরের সংসার জীবনে জ্বলছে আগুন।
ঘটনার মূল কারণ,  স্ত্রীকে নিয়ে স্বামীর পরকীয়া সন্দেহ ও অবিশ্বাস। যে অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২১ মে স্ত্রী অঞ্জলিকে মারধর করেন তার স্বামী ব্রাহ্মণ ঠাকুর কার্তিক চক্রবর্তী। এই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে এক কাপড়ে ঘর ছাড়েন অঞ্জলি। এ সময় উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ুয়া তৃতীয় মেয়ে রংপুর বেতারের রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী শিখা চক্রবর্তীও বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যান তার মায়ের সঙ্গে। নিরুপায় অঞ্জলি ও তার যুবতী কন্যা আশ্রয় নেন সৎসঙ্গ প্রার্থনালয় নামে বাড়ির পাশের মন্দিরে।
৪৫ বছর বয়স্কা নারী অঞ্জলিকে জড়িয়ে এমন অভিযোগে লজ্জিত পরিবারটি। ফলে উপজেলার বড় বড় হিন্দু নেতাদের কাছে বিচার প্রার্থী হয়েছিলেন কার্তিক চক্রবর্তী। স্বামী-স্ত্রীকে এক করার উদ্যোগ নিয়ে কয়েক দফায় ব্যর্থ হয়ে হিন্দু নেতারা অঞ্জলিকে  বলেন, আগামী দু’দিনের মধ্যে স্বামীর ঘরে ফিরে যেতে হবে নয়তো স্বামীকে ডিভোর্স দিতে হবে। এক পর্যায়ে অভিমানী অঞ্জলি চাপের মুখে স্বামীকে ডিভোর্স দিতে বাধ্য হোন।
লালমনিরহাট আদালতের মাধ্যমে ডিভোর্স এর কাজটি করে দেন আদিতমারী উপজেলার বাসিন্দা এডভোকেট মধু। তিনিও হিন্দু বলে তাঁর কাছে পরামর্শ ও আইনী সাহায্য নেন অঞ্জলি। হিন্দু ধর্মে স্বামীকে ডিভোর্স দেয়ার বিধান নেই বলে স্বামী ঠাকুর পুরোহিত ব্রাহ্মণ কার্তিক চক্রবর্তী’র দাবী। ডিভোর্স দেয়ার পর থেকে সৎসঙ্গ প্রার্থনালয় আশ্রমে এক রকম বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন অঞ্জলি ও তার মেয়ে।
জানা যায়, সেখানকার হিন্দু সমাজ এক হয়ে তাদেরকে এক ঘরে করেছেন। এমনকি তাদের সঙ্গে কথা বলা, কোন কিছু আদান-প্রদান করা যাবে না মর্মে হিন্দু নেতারা হুঁশিয়ারী করে গেছেন। তবে মা ও মেয়ের জীবন বাঁচাতে মন্দিরের জমিদাতা মৃত হরিকান্ত সেনের ছেলে কমল সেন ও সরকারের হাট এলাকার মৃত খিয় নাথ রায়ের ছেলে মন্দির কমিটির সভাপতি বিষ্ণু প্রসাদ রায় সাহায্য করছেন বলে জানা যায়।
ঘটনার রহস্য খুঁজতে গিয়ে অভিযোগ উঠেছে যে, সৎসঙ্গ প্রার্থনালয় ও আশ্রম মন্দির কমিটির সভাপতি, উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ছাত্র ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক, জোংড়া মমিনপুর বাঁশ কাটা ১১৯ নং ছিটমহল হাই স্কুলের কৃষি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক, জোংড়া হিন্দু ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক বিষ্ণু প্রসাদ রায় হচ্ছেন কার্তিক -দম্পতির সংসার ভাঙ্গার মূল কারণ। ঠাকুর কার্তিক পরিবারের অভিযোগ বারবার নিষেধ করার পরও বিষ্ণু প্রসাদ তার বাড়িতে আসেন। রাত-বিরাতে অঞ্জলি’র সাথে গল্প করেন। এতে প্রতিবেশীরা সমালোচনা করলে পরকীয়া সন্দেহ করে প্রায় সময় স্বামী – স্ত্রীর ঝগড়া বাঁধে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কথা হয় অঞ্জলি ও তার কন্যা শিখা চক্রবর্তী’র সাথে। ৪৫ বছর বয়স্কা কীর্তনগান সুবক্তা অঞ্জলি চক্রবর্তী’র বক্তব্য বাকী জীবনটা পূজা প্রার্থনা করে বেঁচে থাকতে চাই। স্বামীর সংসারে অনেক নির্যাতন সয়েছি। আর না।
তিনি চেঞ্জ টিভিকে জানান, তাকে জড়িয়ে তার স্বামী মিথ্যা বদনাম ছড়িয়েছেন, এখবরটা ভাইয়ের কাছে গেছে তােই বাবার বাড়িতে যাননি। তার সাথে বিষ্ণু প্রসাদের প্রেম বা পরকীয়া নেই বলে দাবী করেন। বলেন, একদিন রড তালা দিয়েও প্রচন্ড মারধর করেন তার স্বামী। কোমরের নীচে ও উরুতে রক্তপাত হয়। তবু কাউকে বিচার দেননি অঞ্জলি। বছর দশেক আগে বৃদ্ধ বাবার সামনেও অঞ্জলিকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন স্বামী। ছেলে মেয়েদের মুখের দিকে তাকিয়ে সংসার চালিয়ে যান তিনি। অঞ্জলি’র নিজ বাড়ি রংপুর দাসপাড়া। বাবা জগেশ্বর ভট্টাচার্য, মা নিহার বালা পরলোক গমন করেছেন। অঞ্জলি’র তিন ভাই আছেন। স্বামীর পরিবারের কথা তাদেরকেও জানাননি অমঙ্গল হবে বলে। সংসার জীবনে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা নেই। বাচ্চাগুলোর কারণে পাশের মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছেন। সংসার না করলেও স্বামীকে ডিভোর্স দেয়ার ইচ্ছা ছিল না তার। তবে বাধ্য হয়ে দেন বলে জানান।
কার্তিক -অঞ্জলি দম্পতি  সমাজের দশজনের সহযোগীতা নিয়ে বছরখানেক আগে নিজের অর্থায়নে বাড়ির পাশে মন্দির গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন। সেই মন্দিরে কার্তিক ঠাকুর ৭৬ হাজার ৫ শ টাকা দান করেন। স্ত্রী অঞ্জলিও গরু বেচে ৪২ হাজার টাকা দান করেছেন। সৎসঙ্গ প্রার্থনালয় নামে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করার পর শুরু হয় সাংসারিক কলহ। ইতোমধ্যে মন্দিরটির ছাদ ঢালাই কাজ শেষ হয়েছে।
এদিকে, শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র সৎ সঙ্গ প্রার্থনালয় ও আশ্রমের নিয়মের কথা বলে জমিদাতা কমল সেনদের কাছ থেকে চালাকি করে মন্দিরের জমি নিজ নামে দলিল করে নেন মন্দির সভাপতি বিষ্ণু প্রসাদ রায়। কেন, জমি নিজ নামে নিয়েছেন এমন প্রশ্নে বিষ্ণু প্রসাদ রায় বলেন, কমল সেনরা সেচ্ছায় তার নামে মন্দিরের জমি দান করে দিয়েছেন।
কার্তিক ঠাকুর বলেন, বিষ্ণু একটা খারাপ লোক। তার খপ্পরে পরেছে আমার স্ত্রী। স্ত্রীকে অপহরণ করার অপরাধে স্বামী কার্তিক জুনের প্রথম সপ্তাহে পাটগ্রাম থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন। এসআই মিন্টু চন্দ্র রায় ঘটনার তদন্তে গিয়ে আসামী বিষ্ণু প্রসাদ রায়, কমল চন্দ্র সেন, সতীষ চন্দ্র সেন, রাজেন্দ্র রায় সেন, রুপম রায় সেনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তেমন সত্যতা পাননি।
কার্তিকের স্ত্রী অঞ্জলি ও  মেয়ে শিখা অভিযোগটি নাকচ করে দেন। এদিকে, শিখাকে মায়ের কাছ থেকে উদ্ধার করার জন্য লালমনিরহাট বিজ্ঞ আদালতে ১০০ ধারায় একটি মামলা করেছেন বাবা কার্তিক। মেয়ে তার মায়ের কাছে থাকতে চাইলে তাকে তেজ্য ঘোষণা করবেন বাবা এমনটাই জানিয়েছেন।
ঘটনাটি মীমাংসার জন্য অনেক চেস্টা করেছেন বলে জানান পাটগ্রাম থানার এস আই মিন্টু চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, হিন্দু নেতারা বসে স্বামী -স্ত্রীকে এক করে দিলে থানা প্রশাসন সহযোগীতা করবে।
এঘটনায় কার্তিক ঠাকুর জানান, তিনি ছেলে-মেয়েদের মুখের দিকে তাকিয়ে ব্রাহ্মণ সমাজের কাছে বিচারের ভার দেন।
ব্রাহ্মণ সমাজের উপজেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ হিসাবিয়া আলোবাবু বলেন, আগে হিন্দু নেতাদের সাথে কথা বলতে হবে, পবিত্র গ্রন্থ বেদ দেখতে হবে, তারপর সিদ্ধান্ত। তবে সরকার বা প্রশাসন যদি ব্যবস্থা নেন তাহলে তার সহযোগীতা থাকবে বলে মন্তব্য করেন।
এব্যাপারে পাটগ্রাম উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ছাত্র ঐক্য পরিষদ সভাপতি অনুপ কুমার রায় লিটন বলেন, সমস্যাটা স্বামী ও স্ত্রীর। মাঝখানে কিছু লোক অগত্যা বাড়াবাড়ি করেছেন। মন্দিরের সভাপতি বিষ্ণু প্রসাদ রায় ন্যায্য কথা বলেন বলে অনেকে সহ্য করতে পারেনা। প্রেম বা পরকীয়া যদি থাকে তাহলে অঞ্জলি তো বিষ্ণু’র ঘরে উঠতে পারত।
ঘটনাটি তদন্ত করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমাজচ্যুত এক ঘরে থাকা অঞ্জলি ও তার মেয়েকে নিজ গৃহে ফিরিয়ে দেয়া হোক এমনটাই দাবী সচেতন মহলের ।
Like
Like Love Haha Wow Sad Angry
2

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *