কেকের মৃত্যুর মূল কারণ জানালেন চিকিৎসকরা
ভারতের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ ওরফে কেকের প্রয়াণে সুরের ভুবনে নেমে এসেছে পিনপতন নিরবতা। তার চলে যাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না ভক্তরা। ইতোমধ্যে গায়কের মৃত্যুতে কলকাতার নিউ মার্কেট থানায় মামলা হয়েছে।
কলকাতার অনুষ্ঠানে যারা কেকের সঙ্গী হয়ে এসেছিলেন, তারাই অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করেছেন। প্রয়াত গায়ক যে হোটেলে উঠেছিলেন ওই হোটেলের ম্যানেজারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া নজরুল মঞ্চে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজকদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
প্রশ্ন উঠছে— কনসার্টের চরম অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে। বলা হচ্ছে, ওই অব্যবস্থাপনার কারণেই গায়কের মৃত্যু হয়েছে। কী কারণে মৃত্যু হয়েছিল কেকের, তা নিয়ে জল্পনা ছিল ভক্তদের ভেতর।
এবার প্রকাশ্যে এসেছে কেকের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট। সেখানে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অস্বাভাবিক কোনো কারণে গায়কের মৃত্যু হয়নি। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাভাবিকভাবে মারা গেছেন তিনি।
কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে প্রয়াত গায়কের দেহের ময়নাতদন্তের পর প্রাথমিক রিপোর্টে এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে। তবে চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশ হবে ৭২ ঘণ্টা পর।
চিকিৎসকেরা বলছেন, হার্টের ব্লকেজই কে কের জন্য কাল হয়েছে। হার্টের এই ব্লকেজের কথা কাউকে জানাননি তিনি। এমনকি ছায়াসঙ্গী ম্যানেজারকেও না।
ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছে, গাইতে আর নাচতে গিয়ে অতিরিক্ত উত্তেজনায় তার হার্টের ব্লকেজ বেড়ে গিয়ে আচমকাই বন্ধ হয়ে যায় রক্ত চলাচল। ফল, কার্ডিয়াক অ্যাটাক। এরপর চিকিৎসা শুরুর আগেই চলে যেতে হলো গায়ককে।
মুম্বাই থেকে কলকাতার অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগে স্ত্রী জ্যোতিলক্ষ্মী কৃষ্ণাকে বলেছিলেন, শরীরটা ইদানীং ভালো যাচ্ছে না। আয়োজকদের কাছ থেকে অগ্রিম নিয়েছি। তাই শেষ মুহূর্তে পারফর্ম না করে পারছি না।
সেই অসুস্থতা নিয়েই কলকাতায় পা রেখেছিলেন কে কে। দুদিনের অনুষ্ঠানে সোমবার ভালোভাবে পারফর্ম করলেও মঙ্গলবার অসুস্থ বোধ করেন। মঞ্চেই বারবার পানি খেয়েছেন। একসময় শীতাতপ যন্ত্র কাজ না করলে মঞ্চের স্পটলাইট বন্ধ করতেও বলেছিলেন। একের পর এক গান গেয়েছেন, নেচেছেন। প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত হাজারো ভক্তকে গানের তালে তালে নাচিয়েছেন।
হাসপাতাল সূত্র বলছে, তার হৃদ্যন্ত্রের বাঁ দিকের ধমনিতে ৭০ শতাংশ ব্লকেজ ছিল। কে কের স্ত্রী কলকাতায় বলেছেন, মুম্বাই ছাড়ার আগে বারবার বলেছিল, শরীরটা ভালো নেই। ব্যথা ছিল হাতে। তখনো আমরা বুঝতে পারিনি, ওর শরীরে বড় কোনো রোগ বাসা বেঁধে আছে। এখন জানতে পারছি, হৃদ্রোগের প্রাথমিক উপসর্গস্থল এই হাতে ব্যথা।
প্রসঙ্গত, নব্বই দশক থেকে শুরু করে বাংলা, হিন্দি, তামিল, কন্নড়, মালয়ালাম, মারাঠি, অসমীয়া ভাষায় বহু জনপ্রিয় গানে কণ্ঠ দিয়েছেন কেকে। তার গাওয়া গানগুলো শ্রোতামহলে এখনও বেশ জনপ্রিয়। তবে এই শিল্পীর জীবনের শেষ গানের স্মৃতি হয়ে রইল কলকাতা।