fbpx
হোম অনুসন্ধান অপরাধবার্তা কী অপরাধে সব শেষ হলো জানি না, কারও কাছে বিচার চাইব না’
কী অপরাধে সব শেষ হলো জানি না, কারও কাছে বিচার চাইব না’

কী অপরাধে সব শেষ হলো জানি না, কারও কাছে বিচার চাইব না’

0

‘ঢাকা মেডিকেলে শোকাহত মিজানুর রহমান। তাঁর স্ত্রী নাদিরা আক্তার ও তিন বছরের ছেলে ইয়াছিনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে ট্রেনের একটি বগি থেকে
ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের মর্গে গিয়ে দেখা গেল, পুড়ে অঙ্গার হওয়া চারজনের মরদেহ সারি করে রাখা। মর্গের বাইরে দাঁড়িয়ে সেদিকে অপলক তাকিয়ে আছেন মিজানুর রহমান।
সারি করা মরদেহগুলোর মধ্যে একজন তাঁর স্ত্রী নাদিরা আক্তার (৩২), অন্যজন ৩ বছরের ছেলে ইয়াছিন রহমান।
আজ মঙ্গলবার ভোর পাঁচটার পরে রাজধানীর তেজগাঁও স্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে তাঁরা মারা গেছেন। এ ঘটনায় আরও দুজন নিহত হয়েছেন। তাঁরা পুরুষ। তাঁদের পরিচয় জানা যায়নি।
পুড়ে যাওয়া ট্রেনের বগিতে পড়ে থাকা জীবন
ট্রেনের বগিতে লাগানো আগুনে পুড়ে নিহত মা নাদিরা আক্তার ও ছেলে ইয়াছিন রহমান
বেলা ১১টার দিকে কথা হয় মিজানুরের সঙ্গে। বললেন, ‘আমি চিৎকার করে কাঁদতে চাইছি। কিন্তু পারছি না। আমার ভেতরে কী চলছে, এটা বোঝাতে পারব না। আমার তো সবই শেষ হয়ে গেল। কী অপরাধে আমার সব শেষ হয়ে গেল জানি না। আমি কারও কাছে বিচার চাইব না। এখন একটাই চাওয়া, আমার স্ত্রী-সন্তানকে যেন আর কাটাছেঁড়া করা না হয়। শুধু অক্ষত লাশ ফেরত চাই।’
ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় হার্ডওয়্যারের ব্যবসা করেন মিজানুর। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকেন পশ্চিম তেজতুরী বাজার এলাকায়। বড় ছেলে রিয়াদ হাসান ফাহিম স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। ছেলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ৩ ডিসেম্বর দুই সন্তান নিয়ে তাঁর স্ত্রী নাদিরা আক্তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায় যান। সেখান থেকেই মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে করে ঢাকায় ফিরছিলেন তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান। নাদিরার কলেজপড়ুয়া ছোট ভাই হাবিবুর রহমানও সঙ্গে ছিল। ট্রেনে আগুন লাগার পর ফাহিমকে নিয়ে হাবিবুর ট্রেন থেকে নেমে যান। তবে নাদিরা ও ইয়াছিন আটকা পড়ে।
ট্রেনের বগিতে লাগানো আগুনে পুড়ে মারা গেছে ছোট্ট ইয়াছিন
গতকাল সোমবার রাতে স্ত্রী নাদিরার সঙ্গে কথা হয়েছিল মিজানুরের। বলেন, ‘রাতে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে ওঠার পর নাদিরার সঙ্গে কথা হয়েছিল। আজ ভোর পাঁচটার দিকে নাদিরার ভাই হাবিবুর ফোন করে আগুন লাগার খবর দেন। বাসা থেকে দ্রুত তেজগাঁও রেলস্টেশনে পৌঁছাই। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যখন চারটি লাশ নামায়, দেখি আমার স্ত্রী-সন্তান পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে।’
আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ট্রেনের বগি। আজ ভোরে তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের তিনটি বগিতে আগুন লাগানো হয়।
ট্রেনে আগুন লাগার ঘটনায় আহত হয়েছেন নুরুল হক আবদুল কাদের নামের এক ব্যক্তি। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি যে বগিতে ছিলেন, সেই বগিতেই আগুনের সূত্রপাত হয় বলেন তিনি। বলেন, ‘বিমানবন্দর স্টেশন পার হয়ে বনানীর কাছাকাছি আসার পর ওই বগিতে আগুন লাগে। তখন রেলের নিরাপত্তাকর্মীদের পোশাক পরা কয়েকজন অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র নিয়ে যায়।কিছুক্ষণ পরই অন্য বগিতে আগুন লেগে যায়। ১০ সেকেন্ডের ভেতরে চারপাশ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। তখন ট্রেন অনেক গতিতে চলছিল। দরজা খুলে গেটের কাছে দাঁড়াই। তখনো ধোঁয়ার কারণে নিশ্বাস নিতে পারিনি।’ পরে ট্রেন থেকে লাফ দেন বলে জানান নুরুল হক।
স্কুলব্যাগটি কার তা জানা যায়নি। হয়তো পছন্দের স্কুলব্যাগটি নিয়ে ট্রেনে চড়েছিল কোনো শিশু।
তেজগাঁও বিভাগ ও রেলওয়ে পুলিশের কর্মকর্তাদের ধারণা, দুর্বৃত্তরা যাত্রীবেশে ট্রেনে উঠে আগুন দিয়েছে। অগ্নিসংযোগকারীরা হয়তো আগুন দিয়ে বিমানবন্দর স্টেশনেই নেমে গেছে। ওই এলাকার ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি ওই ট্রেনের সব যাত্রীর তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
রেলওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক দিদার আহম্মদ তেজগাঁও রেলস্টেশন পরিদর্শনে এসে বলেন, কারা আগুন দিয়েছে, সেটি উদ্‌ঘাটনে রেলওয়ে পুলিশ এরই মধ্য তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশের অন্যান্য ইউনিটও কাজ করছে। শিগগিরই এ ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটন ও জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *