fbpx
হোম আন্তর্জাতিক করোনার মতো ভাইরাস পৃথিবীতে আরও আসবে
করোনার মতো ভাইরাস পৃথিবীতে আরও আসবে

করোনার মতো ভাইরাস পৃথিবীতে আরও আসবে

0

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত বিশ্ব। লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, এখনো কোন ভ্যাকসিন বা ওষুধ আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। করোনার তাণ্ডব নৃত্য কবে থামবে কেউ বলতে পারে না। এরই মধ্যে বিজ্ঞানীরা দিচ্ছেন নতুন হতাশার খবর। বলছেন, আগামীতে করোনাভাইরাসের মতো মহামারি পৃথিবীতে আরো আসবে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষ যে ধরনের সভ্যতা গড়ে তুলেছে, তাতে বন্যপ্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে রোগ সংক্রমণ এবং এরপর তা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ার ‌‘নিখুঁত ব্যবস্থা’ করে রাখা আছে। প্রাকৃতিক জগতে মানুষের অনুপ্রবেশ সে প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করছে। কোথায় এবং কীভাবে নতুন রোগের বিস্তার ঘটে, তা নিয়ে গবেষণা করা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এমন কথাই বলছেন।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সারা বিশ্বের এই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এমন একটি পদ্ধতি তৈরি করেছেন, যাতে বন্যপ্রাণী থেকে এসব রোগ বিস্তারের প্রক্রিয়ায় কী কী সাদৃশ্য দেখা যায় তা চিহ্নিত করা সম্ভব। একে বলা হয় ‘প্যাটার্ন রিকগনিশন’। এ পদ্ধতির ফলে পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব যে, কোন কোন বন্যপ্রাণী মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

 

এ গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন যুক্তরাজ্যের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। তবে এটি ভবিষ্যতের কোনো রোগবিস্তারের জন্য প্রস্তুত থাকার যে বৈশ্বিক প্রয়াস, তারই অংশ।

‘গত ২০ বছরে আমরা ছয়টি বড় বড় হুমকির সম্মুখীন হয়েছি– সার্স, মার্স, ইবোলা, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ও সোয়াইন ফ্লু’, বলছিলেন লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যাথিউ বেলিস।

অধ্যাপক বেলিস বলেন, ‘আমরা পাঁচটি বুলেট এড়াতে পেরেছি, কিন্তু ছয় নম্বরটার হাত থেকে বাঁচতে পারিনি।’

সবচেয়ে বড় ভয়ের কথা, অধ্যাপক ম্যাথিউ বেলিস বলছেন—’করোনাভাইরাসই যে আমাদের সম্মুখীন হওয়া শেষ মহামারি, তা মোটেও নয়। আমাদের বন্যপ্রাণী থেকে মানবদেহে আসা রোগগুলোর দিকে আরো গভীরভাবে নজর দিতে হবে।’

এ পরীক্ষারই অংশ হিসেবে অধ্যাপক ম্যাথিউ বেলিস ও তাঁর সহযোগীরা এমন একটি প্যাটার্ন রিকগনিশন পদ্ধতি তৈরি করেছেন, যার সাহায্যে আমরা বন্যপ্রাণী থেকে আসা যত রোগের কথা জানি, তার সবগুলোর উপাত্ত অনুসন্ধান করে দেখা যাবে। এ পর্যন্ত এ পদ্ধতিতে বিজ্ঞানীরা হাজার হাজার ব্যাকটেরিয়া, প্যারাসাইট বা পরজীবী ও ভাইরাস সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। অধ্যাপক বেলিসের পদ্ধতি দিয়ে এ অণুজীবগুলো যেসব প্রজাতির প্রাণীকে সংক্রমিত করতে পারে, তার মধ্যে লুকিয়ে থাকা সূত্রগুলো চিহ্নিত করা যাবে। এ সূত্রগুলো দিয়ে এটাও বোঝা যাবে যে কোন কোন অণুজীব মানুষের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

যদি এভাবে কোনো প্যাথোজেন, অর্থাৎ রোগ-সৃষ্টিকারী অণুজীব চিহ্নিত হয়, তাহলে বিজ্ঞানীরা কোনো রোগের প্রাদুর্ভাব হওয়ার আগেই তা ঠেকানোর উপায় উদ্ভাবনের গবেষণা চালাতে পারবেন। অধ্যাপক বেলিস বলেন, ‘ঠিক কোন রোগ মহামারির রূপ নিতে পারে, তার গবেষণা সম্পূর্ণ আলাদা, কিন্তু আমরা এ সংক্রান্ত প্রথম পদক্ষেপটির ব্যাপারে অগ্রগতি ঘটাতে পেরেছি।’

 

বিজ্ঞানীরা বলছেন, বন ধ্বংস এবং বন্যপ্রাণীর আবাসসভূমিতে মানুষের ঢুকে পড়ার ফলে এখন ঘন ঘন এবং সহজেই প্রাণী থেকে মানুষে রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক কেট জোনস বলেন, মানুষ যেভাবে ইকোসিস্টেমকে বদলে দিয়ে কৃষি বা বৃক্ষরোপণ করছে, তাতে জীববৈচিত্র্য কমে যাচ্ছে এবং মানুষের নানা সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে বলেই তাঁরা তথ্যপ্রমাণ পাচ্ছেন।

সব রোগের ক্ষেত্রেই এমন না হলেও, কিছু বন্যপ্রাণী যারা মানুষের উৎপাতের ব্যাপারে সবচেয়ে সহিষ্ণু – যেমন, কয়েক প্রজাতির ইঁদুর– তারা অনেক সময় রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীব ছড়ানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে বলে জানান অধ্যাপক কেট জোনস।

অধ্যাপক কেট জোনস বলেন, ‘জীববৈচিত্র্য হারানোর ফলে এমন পরিবেশ তৈরি হচ্ছে. যাতে মানুষ ও বন্যপ্রাণীর ঝুঁকিপূর্ণ সংস্পর্শ বেড়ে যাচ্ছে। এতে কিছু কিছু ভাইরাস, ব্যকটেরিয়া বা পরজীবীর মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে।’ এ ক্ষেত্রে কিছু রোগ বিস্তারের কথা বলা যায়,  যেখানে মানুষ ও বন্যপ্রাণীর সংস্পর্শের এই যে ঝুঁকি, তা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।

মালয়েশিয়ায় ১৯৯৯ সালে নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল। এক ধরনের বাদুড়ের মাধ্যমে এ ভাইরাসের সংক্রমণ হয়। বনভূমির প্রান্তে থাকার একটি শূকরের খামারে এ সংক্রমণ ছড়িয়েছিল। জঙ্গলের বাদুড় ফল খেত। তাদের আধা-খাওয়া ফল মাটিতে পড়লে, তা খেতো শূকর। ওই ফলে লেগে থাকত বাদুড়ের মুখের লালা, যা থেকে শূকরের দেহে ভাইরাসের সংক্রমণ হয়। ওই সংক্রমিত শূকরের দেখাশোনা করতেন খামারের ২৫০ জনেরও বেশি কর্মী। ফলে তাঁদের দেহেও দেখা দিল ভাইরাসের সংক্রমণ। তাদের মধ্যে ১০০ জনেরও বেশি কর্মীর মৃত্যু হয়।

কভিড-১৯ রোগে মৃত্যুর হার সম্পর্কে এখনো গবেষণা চলছে। তবে অনুমান করা হয়, যত লোক করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়, তার প্রায় ১ শতাংশ মারা যায়। অনদিকে নিপাহ ভাইরাসের ক্ষেত্রে মারা যায় সংক্রমিতদের ৪০ থেকে ৭৫ শতাংশ।

লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয় ও কেনিয়ার আন্তর্জাতিক গবাদিপশু গবেষণা কেন্দ্রের অধ্যাপক এরিক ফেভরে বলছেন, যেসব এলাকায় রোগের প্রাদুর্ভাবের উচ্চঝুঁকি রয়েছে, সেসব জায়গায় গবেষকদের সার্বক্ষণিক নজর রাখতে হবে। বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ও ফার্মের মতো মানুষের কর্মকাণ্ড– এ দুয়ের মধ্যে যদি এরকম কোনো ‘ইন্টারফেস’ বা সংস্পর্শে আসার অবকাশ থাকে, তাহলে সেটা হয়ে উঠতে পারে নতুন রোগ ছড়ানোর হটস্পট। যেমন, বনভূমির কাছাকাছি পশুপালনের ফার্ম বা যেসব বাজারে প্রাণী বেচাকেনা হয়, এগুলোই হচ্ছে এমন জায়গা, যেখানে মানুষ আর বন্যপ্রাণীর আবাসস্থলের পার্থক্য কমে আসে। এগুলো থেকেই রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি।

অধ্যাপক ফেভরে বলেন, ‘এ রকম ইন্টারফেস কোথাও তৈরি হচ্ছে কি না, আমাদের তার ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখতে হবে এবং অস্বাভাবিক কোনো কিছু দেখলেই তার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, মানব বসতি আছে এমন জায়গায় প্রতি বছর তিন থেকে চারবার নতুন রোগের উদ্ভব হয়। শুধু এশিয়া বা আফ্রিকা নয়, ইউরোপ বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও এটা হচ্ছে।

‘নতুন রোগের ব্যাপারে নজরদারির গুরুত্ব এখন আরো বেড়ে যাচ্ছে। আমরা এখন পৃথিবীতে মহামারি ছড়ানোর জন্য প্রায় আদর্শ পরিবেশ সৃষ্টি করে ফেলেছি’, যোগ করেন অধ্যাপক বেলিস।

অধ্যাপক ফেভরেও এ ব্যাপারে একমত। তিনি মনে করেন, করোনাভাইরাসের মতো ঘটনা আগামীতে বারবার ঘটতে পারে। তিনি বলেন, কীভাবে মানুষের কর্মকাণ্ড প্রাকৃতিক জগতের ওপর প্রভাব ফেলছে, তা থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়ার আছে।

সূত্র- বিবিসি বাংলা।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *