ইভ টিজিং আর যৌন হয়রানির ঘটনা নিয়ন্ত্রণে তরুণদের চুলে নজর দিয়েছে প্রশাসন
ইভ টিজিং আর যৌন হয়রানির ঘটনা নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসাবেই এবার তরুণদের চুলের দিকে নজর দিয়েছে প্রশাসন। কমপক্ষে আট জেলায় প্রশাসন, পুলিশ ও শিক্ষা কর্মকর্তারা কী করে চুল কাটতে হবে, তা নিয়ে নরসুন্দর সম্প্রদায়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
বাঘার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীন রেজা গণমাধ্যমকে বলেন, জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে বিষয়টি উঠেছিল। বেশ কিছু অভিভাবকের অভিযোগ ছিল, ছেলেরা বখাটে স্টাইলে চুল কাটছে। এটা নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক বলেছিলেন, ছেলেরা স্টাইল করলে করুক, কিন্তু বিদঘুটে যেন না লাগে।
সংশ্লিষ্ট আরও তিনটি জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কর্মকর্তারা মনে করেন, বখাটে স্টাইলে চুল কাটা কিশোর-তরুণেরা ইভ টিজিংয়ের মতো ঘটনায় জড়াচ্ছে তারা।
তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) সোহেল রানা একটি গণমাধ্যমকে বলেন, চুল কে কীভাবে কাটবে, সে সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্তের ব্যাপারে পুলিশ সদর দপ্তর কাউকে কোনো নির্দেশনা দেয়নি। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে কিশোর গ্যাং ও কিশোর অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে কার্যকর আইনি ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশে চুল নিয়ে এই ঘটনা নতুন নয়। এর আগে মার্চে প্রথম টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফ্যাশন করে চুল কাটলে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করে সেলুনগুলোকে নোটিশ দেন। এরপর ঝালকাঠিতে পুলিশ ও সাভারের জনপ্রতিনিধিরা এ বিষয়ে কাজ করেন। নানা প্রশ্নের মুখে কিছুদিনের জন্য চুল কাটা নিয়ে নির্দেশনা জারি বন্ধ হয়। নতুন করে আবারও শুরু হয় চলতি বছরের জুলাই মাসে। এবার নাটোরের উপজেলা শিক্ষা অফিস, সিলেট, মাগুরায় পুলিশ এবং সব শেষ রাজশাহীর বাঘায় উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ বখাটে স্টাইলে চুল কাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে নরসুন্দরদের সঙ্গে বৈঠক করে।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, চুল কে কীভাবে কাটবে, সেটা ব্যক্তির অভিরুচি। এটা নিয়ে নির্দেশনা জারির মানে হলো সংবিধানের ৩১ ও ৩২ ধারার লঙ্ঘন। মানুষের জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার এই দুটি ধারায় স্বীকৃত। স্টাইল করে চুল কাটার সঙ্গে ইভ টিজিং বা যৌন হয়রানির কোনো সম্পর্ক আছে বলে তিনি মনে করেন না। তিনি আরও বলেন, সৃষ্টিশীল মানুষের চুলের ছাঁটও সব সময় আর সবার মতো হয় না। কাজেই চুল কাটার সঙ্গে অপরাধের সম্পর্ক খোঁজার কোনো মানে হয় না।