fbpx
হোম অন্যান্য আড়াই বছরে ৭ জন ইউএনও বদলি; জনদূর্ভোগ চরমে !
আড়াই বছরে ৭ জন ইউএনও বদলি; জনদূর্ভোগ চরমে !

আড়াই বছরে ৭ জন ইউএনও বদলি; জনদূর্ভোগ চরমে !

0

দেশের প্রায় প্রত্যেক উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তারা নানা কারণে দ্রুততম সময়ে বদলি হয়ে থাকেন। যদিও পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালনের পর বেশিরভাগ উপজেলায় বদলির আদেশ আসে। কিন্তু এমন কিছু উপজেলা রয়েছে যেখানে রাজনীতি আর স্থানীয় নানা জটিলতায় দায়িত্ব পালনে ইতস্ততবোধ করেন কর্মকর্তারা। ফলে দায়িত্ব পালনে নানা সমস্যায় পড়েন তারা।

তেমনি এক উপজেলা লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলা। যেখানে মাত্র আড়াই বছরে ৭ জনের বদলির খবর উপজেলার মানুষদের কাছে আশ্চর্যের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। স্থানীয় সাংবাদিক সামিউল ইসলাম সানি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুকদের কাছ থেকে তুলে আনার চেষ্টা করেছেন ভেতরের সেই গোপন রহস্য।

পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদে বারবার রদবদল হওয়ার নেপথ্যের কারণ খুঁজতে গিয়ে মাঠ প্রশাসন, কর্মকর্তা ও স্থানীয় কিছু মানুষদের মুখ থেকে বেড়িয়ে এসেছে ভয়ঙ্কর তথ্য। গত আড়াই বছরে পাটগ্রামে ইউএনও পদে ৭ জন যোগদান করেন। যাদের কর্তব্য পালনে দেখা দেয় নানা জটিলতা। স্থানীয় নেতাদের সাথে বনিবনা না হওয়ার অভিযোগ  খালি চোখে দেখা গেলেও ভিতরের কাহিনী ভিন্ন।

জেনে নেয়া যাক আড়াই বছরে যারা প্রমোশন কিংবা রাজনৈতিক কারণে বদলি হলেন তাদের পরিচয়। ২০১৮ সালের আগস্টে ইউএনও হিসেবে যোগদান করেন আব্দুল করিম। এর ঠিক এক বছর পরে ইউএনও মশিউর রহমান।এরপর ভারপ্রাপ্ত ইউএনও হিসেবে এসিল্যান্ড দীপক কুমার দেব শর্মা, তারপর ৫ মাসের মাথায় ইউএনও কামরুন নাহার। এরপর অতিরিক্ত দায়িত্বে হাতীবান্ধা ইউএনও সামিউল আমিন। তারপর ইউএনও রামকৃষ্ণ বর্মণ প্রমোশন পেলে প্রজ্ঞাপন জারী হয় গাইবান্ধা ফুলছড়ি ইউএনও আবু রায়হান দোলনকে পাটগ্রামে বদলি করা হয়।

পরবর্তীতে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় কর্তৃক আদেশ পরিবর্তন করে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাটগ্রাম ইউএনও হিসেবে গত মাসে যোগদান করেন ইউএনও সাইফুর রহমান। সর্বশেষ তথ্য মতে, তার প্রমোশন সংক্রান্ত এ বদলি বলে জানা গেছে।

বদলিকৃত ইউএনওদের মধ্যে অনেকেই বলছেন, নেতাদের সাথে বনিবনার চেয়ে সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, সরকারি কাজে অযাচিত হস্তক্ষেপ করা হয়। নিয়ম ভঙ্গ করে নিজেরাই নিজেদের মত করে বিভিন্ন তালিকা করেন। সেই তালিকায় পদাধিকার বলে তৃণমূল থেকে উপজেলা পর্যন্ত ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা কমিটি’র স্বাক্ষর থাকা আবশ্যক হলেও তা মানা হয় না।

তাদের এই কথার সঙ্গে স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তি ও কর্মীরাও সহমত পোষণ করেছেন। আবার অনেকেই বলছেন পাটগ্রামের মানুষ বদলি হওয়ার বিষয়গুলো নিয়ে নানা সময়ে সমালোচনা এবং কারণগুলো প্রত্যক্ষ করে যা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো বিষয় নয়। অনেকটা স্পষ্ট হয়েছে কী কী কারণে এখানে কর্মকর্তারা টিকে থাকতে পারে না। জানা যায়, দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে অবস্থান চলে গেলে শুরু হয় ক্ষোভ। মূলত বদলি হওয়ার প্রাথমিক ধাপ এখান থেকেই সূচনা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ইউএনও জানিয়েছেন, সরকারের বিভিন্ন সুবিধাদি প্রনোদনা প্রদানের রুলস অব সিস্টেম এড়িয়ে যাবার কারণে পাটগ্রামে কর্মকর্তারা টিকতে পারছেন না। গেল দুই বছর আগে প্রশাসন ও নেতাদের রশি টানাটানির কারণে সরকারের দেয়া ফ্রি পাট বীজ সময়মত বিতরণ না করার কারণে পাটগ্রাম উপজেলার ভাগে দেড় হাজার বীজসহ পুরো জেলায় প্রায় ৯ হাজার কেজি পাটবীজ নষ্ট হয়ে যায়।এবারও বিতরণ করা হয়েছে। এরপর সে বিষয়ে কেউ কোন দায় না নিয়ে ভিতরে ভিতরে ঘটনা চাপা দেন বলে জানা যায়।

নির্বাহী প্রশাসন সচল না থাকার কারণে গেল দু’বছর ধরে নানা অসঙ্গতি অনিয়ম যেন ঘাপটি মেরে বাসা বেঁধেছে। পাটগ্রাম উপজেলায় কৃষি প্রণোদনা দেয়া হয় কিন্তু মাঠ পর্যায়ের সেই তালিকায় ইউএনও’র স্বাক্ষর নেয়া হয়না এমন তথ্যও রয়েছে। গেল কয়েক বছর ধরে সময়মত বৃক্ষ মেলা করা হয় না। অসময়ে হওয়ায় সপ্রাবি প্রতিষ্ঠানের চারাগাছগুলো মরে গেছে। পাটগ্রাম উপজেলায় সমাজসেবা, সমবায়, কৃষি, মৎস্য, প্রাণি সম্পদ, জনস্বাস্থ্য, খাদ্যসহ প্রায় অফিসের কার্যক্রম সম্পর্কে ইউএনও’র বোধগম্যতা বা তদারকি না থাকায় জনদূর্ভোগ বেড়েছে। ফলে সরকারের উদ্দেশ্য দিনের পরদিন ব্যাহত হচ্ছে। সরকারি সেবার সুফলও সঠিক সময়ে পাচ্ছেন না জনগণ। এমন চিত্র আরও দেখা গেছে, মহিলা ও শিশু, যুব উন্নয়ন ও নির্বাচনসহ বিভিন্ন অফিসে।

এর নেপথ্যের কারণ হিসেবে গত আড়াই তিন বছরে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা ইউএনও সামিউল আমিনের এক আমলেই পাটগ্রাম উপজেলায় ৭ জন ইউএনও রদবদল হওয়ায় সরকারি কাজে ফাইলপত্র ভীড় জমে যায়। যা সঠিক পর্যবেক্ষণ ছাড়াই তড়িঘড়ি করে পরবর্তী ইউএনওকে স্বাক্ষর করতে দেখা য়ায়। এতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারি অর্থ অপচয় হওয়ার পাশাপাশি অনিয়ম-দুর্নীতি করার সুযোগ সৃষ্টি হয় বলে খোদ অফিস সুত্রে জানা যায়।

করোনা’র অজুহাত ও নির্বাহী কর্মকর্তার অনুপস্থিতি এবং বারবার রদবদলের দরুন সেবাখাতে স্থবিরতা লক্ষ্য করা গেছে। কর্মকর্তাদের কেউ কেউ সময়মত অফিসে আসেন না। আবার কেউ কেউ দু’এক ঘন্টা অফিস করেই চলে যান। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণ সেবা না পেয়ে হয়রানী হচ্ছেন। পাটগ্রাম ইউএনও রামকৃষ্ণ বর্মণের প্রমোশন পোস্টিং (এডিসি ঠাকুরগাঁও) হওয়ার কারণে গত পরশু মঙ্গলবার তিনি দায়িত্ব হস্তান্তর করেন নবাগত ইউএনও সাইফুর রহমানের কাছে।

অফিস সুত্র জানা যায়, পাটগ্রামের ইউএনও সাইফুর রহমান একজন অর্থ প্রশাসন ক্যাডার। তিনি ঢাকায় মাঠ প্রশাসন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষক হিসেবে এতদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। মাঠ প্রশাসন অভিজ্ঞতা অর্জন বাধ্যতামূলক হওয়ার কারণে তাকে পাটগ্রামে বদলি করা হয়েছে। রংপুর মিঠাপুকুর উপজেলার বাসিন্দা সাইফুর রহমান বর্তমানে সিনিয়র পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। আগামী দুই এক মাসের মধ্যে তার প্রমোশন হলে তিনিও চলে যাবেন।

এই হলো ইউএনও বদলি হওয়ার কিছু উল্লেখযোগ্য কারণ। এর বাইরেও দুইজন বদলি হওয়া কর্মকর্তা রয়েছে যারা একান্ত আলাপনে অনেক বিস্ময়কর তথ্য দিয়েছেন যা রীতিমতো আশ্চর্যের । তবে বারবার ইউএনও বদলির ঘটনায় পাটগ্রাম উপজেলার জনসেবায় জনদূর্ভোগ বেড়েছে বলে স্থানীয় বিশেষজ্ঞ ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা মনে করেন। তারা দ্রুত এই উপজেলায় ইউএনও বদলির বিষয় নিয়ে সরকারের নজরদারি ও ব্যবস্থাপনার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *