fbpx
হোম অন্যান্য ‘আমাদের অবস্থা ছিটমহলের মানুষের মতো’
‘আমাদের অবস্থা ছিটমহলের মানুষের মতো’

‘আমাদের অবস্থা ছিটমহলের মানুষের মতো’

0

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের তিন সহস্রাধিক মানুষ বৃটিশ শাসন আমল থেকে বসবাস করছে পার্শ্ববর্তী নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের মানচিত্রের অভ্যন্তরে।

বৃটিশ আমলে শিরিষ চন্দ্র ও সতীশ চন্দ্র নামে দুই মহারাজা উলিপুর ও নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দে জমিদারি প্রথাচলাকালীন তাদের সীমানায় বসবাসকারীদের সেভাবেই খাজনা দিতে হতো। ভারত ভাগ ও দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও জোতদারদের রেখে যাওয়া সীমানা জটিলতার কারণে ভোগান্তিতে পড়েন ৫ গ্রামের মানুষজন।

ভিতরবন্দ ইউনিয়ন পরবর্তীতে নাগেশ্বরী উপজেলার মধ্যে পড়ে যায়। অপরদিকে ভিতরবন্দ ইউনিয়নের অভ্যন্তরে বসবাসরত ৫ গ্রামের মানুষ উলিপুরের মহারাজার অধীনে থাকায় তারা পরবর্তীতে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের ভোটার হয়ে যান।

ভারত ভাগ ও দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও জোতদারদের রেখে যাওয়া সীমানা জটিলতার কারণে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এ যেন আরেক ছিটমহল। ফলে যুগ যুগ ধরে অন্য উপজেলায় হাট-বাজারসহ সুযোগ-সুবিধা নিলেও ভোট দিচ্ছেন আরেক উপজেলায়।

ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের ছিটমহল সাদৃশ্য কৈকুড়ি গ্রামের বাসিন্দা বয়োজৈষ্ঠ্য আহাম্মদ হোসেন (৮৫) জানান, এই এলাকার ৫টি গ্রামের মানুষ কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের হলেও বসবাস করছে পার্শ্ববর্তী নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের অভ্যন্তরে।

তিনি জানান, ৫টি গ্রামের মধ্যে কৈকুড়ি গ্রামে ২২৫টি পরিবার, বড়ভিটা গ্রামে ১৫০টি পরিবার, মরাদিগদারী গ্রামে ৭০ পরিবার, টেংনার ভিটা গ্রামে ১শটি পরিবার এবং দিগদারী গ্রামে ৫৫টি পরিবার। গ্রামগুলোর তিন সহস্রাধিক মানুষ বৃটিশ আমল থেকে আরেক উপজেলার ইউনিয়নে বসবাস করছে। ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৮শ। বন্যা বা বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেই আমাদেরকে বাড়ির পার্শ্ববর্তী ভিতরবন্দ ইউনিয়নে আশ্রয় ও সাহায্য সহযোগিতা নিতে হয়। জাতীয় পরিচয়পত্রে তাদের ইউনিয়ন ভোগডাঙ্গা হলেও গ্রামগুলোর মানুষের লেখাপাড়া, বিয়ে-শাদী, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিচার-সালিশ, বন্যায় আশ্রয় গ্রহণ সবকিছুই করতে হয় ভিতরবন্দে।

অন্য আরেকজন জানান, চারদিকে ভিতরবন্দ আর আমরা তার ভেতরে বসবাস করছি ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা। এই গ্রামগুলো থেকে ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নে যেতে হলে ভিতরবন্দ পার হয়ে আমাদেরকে যেতে হয় কমপক্ষে ৮/১০ কিলোমিটার। আমাদের অবস্থা ছিটমহলের মানুষের মতো।

সামাজিক বেষ্টনির সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত আমরা। মাঝখানে বিলের ছড়া দিয়ে বিচ্ছিন্ন এ এলাকার রাস্তাঘাটের বেহাল দশার কারণে রোগী পরিবহনসহ যাতায়াত সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত এসব গ্রামের মানুষ উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিবর্তন করে বর্তমান অবস্থান নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দের বাসিন্দা হতে চাই। আমরা যেহেতু ভিতরবন্দের ভেতরে আছি, এখন আমরা এখানেই থাকতে চাই।

ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, আপনাদের কে কী বলেছে জানি না। তবে ওই এলাকার অনেক জ্ঞানী-গুণী মানুষ আছেন। যারা আমার ইউনিয়নে থাকতে চায়। এখনো অনেকে ফোন করে আমাকে জানায় ভিতরবন্দ ইউনিয়নে তারা থাকবে না।

ভিতরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল হক খন্দকার বলেন, তার ইউনিয়ন পরিষদের কাছেই গ্রামগুলোর অবস্থান হওয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন সময়ে এই ৫টি গ্রামের মানুষকে আশ্রয় দেওয়াসহ বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা দেওয়া হয় মানবিক কারণে।

কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য পনির উদ্দিন আহমেদ বলেন, মানুষগুলো খুবই দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে। জটিলতা কাটাতে স্থানীয় জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদের সদিচ্ছার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে প্রথম জানতে পারলাম। দুই উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *