আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় উৎসব ভাতা থেকে বঞ্চিত খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা !
দেশ স্বাধীনের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যারা অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখেন, সেই অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রকাশিত গেজেটে তাদের ‘খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ৪ ক্যাটাগরিতে খেতাবপ্রাপ্ত যথা বীরশ্রেষ্ঠ ৭ জন, বীর উত্তম ৬৮ জন, বীর বিক্রম ১৭৫ জন এবং বীর প্রতীক ৪২৬ জন, সর্বমোট ৬৭৬ জন মুক্তিযোদ্ধা ‘খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান স্মরণীয় রাখতে তাদের সম্মানী ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছে সরকার। দেশে বর্তমানে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৩১১ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ১২ হাজার টাকা সম্মানী ভাতা দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা হারে দুটি উৎসব ভাতাও দেয়া হচ্ছে। কিন্তু অন্যান্য ক্যাটাগরির মুক্তিযোদ্ধারা উৎসব ভাতা পেলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা এ ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়, মক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
তবে আশার কথা হচ্ছে, গত ১৭ আগস্ট খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসব ভাতা প্রদানের অনুরোধ জানিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগও গ্রহণ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। হয়তো খুব শিগগিরই খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা উৎসব ভাতা পাবেন। কিন্তু এতদিন কেন তারা পেলেন না- সে বিষয়ে জানতে চাইলে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা অ্যাসোসিয়েশন বলছে, নিছক আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এতদিন আটকে আছে তাদের ভাতা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, ‘তারা তো (খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা) বিভিন্ন ধরনের ভাতা পেয়ে থাকেন। তাই এ ভাতার বিষয়ে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়নি। তবে এবার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারাও উৎসব ভাতা পাবেন।’
এ প্রসঙ্গে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব আলহাজ মো. শাহজাহান কবির, বীর প্রতীক বলেন, ‘এবার নিয়ে আমরা চারবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সচিব বরাবর উৎসব ভাতার জন্য চিঠি লিখেছি। এ বিষয়ে যখনই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলি, তিনি একটা আবেদন লিখতে বলেন। মন্ত্রীর পরামর্শে সচিব বরাবর আবেদন লিখি, কিন্তু কোনো কাজ হয় না। তাই আমরা এতদিন ধরে উৎসব ভাতা বঞ্চিতই রয়ে গেছি।’ তিনি বলেন, ‘আবেদন করলে সচিব বলেন, এ ভাতার বিষয়ে নীতিমালায় কোনো উল্লেখ নেই। তবে নীতিমালায় অন্যান্য ক্যাটাগরির মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়েও কোনো কিছু উল্লেখ নেই, এ ক্ষেত্রে প্রশাসন আলাদা অর্ডার জারি করেছে। এসব সচিবকে বললে সচিব বলেন, আপনারাও তাহলে পাবেন। কিন্তু তার কিছুদিন পরই সচিব বদলি হয়ে যান। এভাবে আমরা চারবার আবেদন করেছি, কিন্তু বিভিন্ন সময় সচিবের অবসর বা বদলির কারণে আমাদের ভাতা চালুর বিষয়টির কোনো সুরহা হয়নি।’
এ বীর মুক্তিযোদ্ধা আরও বলেন, ‘আমাদের এ সম্মানীপ্রাপ্তটা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে। তবে এখন মন্ত্রণালয়ে নতুন সচিব এসেছেন। গত কোরবানি ঈদের পর তার সঙ্গে দেখা করে আমরা আবারও আবেদন করেছি। এ আবেদন দেখে সচিবও আশ্চর্য হয়েছেন। তিনি বলেছেন, অন্যরা পেলে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা কেন পাবেন না- এটা কোনো কথা হলো? তবে আমরা শুনেছি, এবার মনে হয় মক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে।’ এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, তারা ইতোমধ্যে এ ধরনের একটি প্রস্তাব পেয়েছেন। আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে খেতাবপ্রাপ্তরা ছাড়া অন্য মুক্তিযোদ্ধারা মাসে ১২ হাজার টাকা করে সম্মানী ভাতা পাচ্ছেন। সঙ্গে বছরে ১০ হাজার টাকা করে দুটি উৎসব ভাতাও পাচ্ছেন।