অবশেষে না ফেরার দেশে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
অবশেষে না ফেরার দেশে পারি জমালেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। আজ বৃহস্পতিবার বিকাল ৪ টা ৫৫ মিনিটে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাহি রাজেউন)।
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে তার ছেলে আনন্দ জামান বলেন, আজ সকালে তার জ্বর আসে। সাথে বুকে ব্যথাও বাড়ে। চিকিৎসকরা তাকে সিসিসি (ক্রিটিকাল কেয়ার সেন্টার) এ স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেন। বিকাল ৩ টার দিকে তাকে সিসিসি (ক্রিটিকাল কেয়ার সেন্টার) এ স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটের প্রধান কর্নেল সৈয়দা আলেয়া সুলতানার নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের একটি দল ‘সতর্কতার সঙ্গে সর্বোচ্চ সেবা’ দিচ্ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর এই জাতীয় অধ্যাপককে ফেরানো যায়নি।
শরীরে নানা জটিলতা নিয়ে গত ২৭ এপ্রিল ৮৩ বছর বয়সী এই অধ্যাপককে রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৯ মে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সবশেষ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
উল্লেখ্য, গুণী এই জাতীয় অধ্যাপক ১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনায় বসিরহাটে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম এ টি এম মোয়াজ্জেম। তিনি ছিলেন বিখ্যাত হোমিও চিকিৎসক। মা সৈয়দা খাতুন গৃহিনী হলেও লেখালেখির অভ্যাস ছিল। পিতামহ শেখ আবদুর রহিম ছিলেন লেখক ও সাংবাদিক। আনিসুজ্জামানরা ছিলেন পাঁচ ভাই-বোন। তিন বোনের ছোট আনিসুজ্জামান, তারপর আরেকটি ভাই। বড় বোনও নিয়মিত কবিতা লিখতেন।
তিনি একজন বাংলাদেশি শিক্ষাবিদ, লেখক ও জাতীয় অধ্যাপক। এবং তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইমেরিটাস অধ্যাপক। তিনি ১৯৫২ ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯ গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ড. কুদরত-ই-খোদাকে প্রধান করে গঠিত জাতীয় শিক্ষা কমিশনের সদস্য ছিলেন। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস নিয়ে তার গবেষণা সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।
তিনি শিক্ষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য একাধিক পুরস্কার লাভ করেছেন। প্রবন্ধ গবেষণায় অবদানের জন্য ১৯৭০ সালে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। শিক্ষায় অবদানের জন্য তাকে ১৯৮৫ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। শিক্ষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য তাকে ভারত সরকার কর্তৃক প্রদত্ত তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণ প্রদান করা হয়। সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৫ সালে তাকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়।