করোনায় শ্রমিকের হতাশা আর অনিশ্চয়তার মে দিবস
ঐতিহাসিক সংগ্রামের লাল রক্তে চিহ্নিত মে দিবস আজ। ২০২০ সালের এই মে দিবসে করোনা আক্রান্ত পৃথিবীতে খেটে খাওয়া মানুষেরাই সবচেয়ে বেশি বিপন্ন আর অনিশ্চয়তায় জীবন পাড়ি দিচ্ছেন।
শ্রমিক ও মেহনতী মানুষ করোনার ফলে ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, চাকরিচ্যুতি, রোজগারহীনতা, মন্দা, হতাশা ও অনিশ্চয়তার বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছেন।
‘শ্রমিক-মালিক ঐক্য গড়ি, সোনার বাংলা গড়ে তুলি’ প্রতিপাদ্যে করোনা কবলিত এ বছরের (২০২০) মে দিবস পালিত হচ্ছে বাংলাদেশে। এ যেনো সারা পৃথিবীজুড়ে ভিন্ন এক অভিজ্ঞতায় মে দিবস।
তবে, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন, সঙ্গরোধ ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার স্বার্থে এ বছর মে দিবসের সব আনুষ্ঠানিকতা বাংলাদেশে এবং সম্ভবত বিশ্বের অধিকাংশ স্থানেই বাতিল করা হয়েছে। ফলে এ বছর দেখা যাবে না মে দিবসের বর্ণিল শ্রমিক সমাবেশ আর শোনা যাবে না বজ্রকণ্ঠে ঘোষিত ‘দুনিয়ার মজদুর, এক হও’ ধ্বনি।
জীবনের কঠিন বাস্তবতা আর করোনার প্রাণঘাতী পরিস্থিতির দোলাচলের মধ্যেই কাটছে শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রামমুখর জীবন। যেখানে নিত্য বিরাজমান জীবনের লেলিহান ক্ষুধার দাবি আর করোনা সংক্রমণের ভয়াবহ ঝুঁকি। এমনই এক বিরূপতার মধ্যে শ্রমিক শ্রেণির লড়াকু জীবনে আশার স্ফুলিঙ্গের মতো এসেছে করোনা কবলিত মে দিবস। মে দিবস শতবর্ষের সংগ্রামশীল অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে বিদ্যমান সংকট ও সঙ্কুলতা উত্তরণের জন্য শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে জাগাচ্ছে নবতর লড়াইয়ের সাহস, স্পৃহা ও প্রতীতি।
শ্রমজীবী মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে মালিক ও শোষকদের বিরুদ্ধে ১৮৮৬ সালে সরাসরি লড়ে জীবন ও রক্ত দিয়েছিলেন। শতবর্ষ পরে তাদের জীবন দিতে হচ্ছে অদৃশ্য ভাইরাসের কবলে, নীতিগত ভ্রান্তিতে ও ভুল পরিকল্পনার কারণে। আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটের আত্মাহুতির পেছনে ছিল নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টার দাবি। সে দাবি পরিপূর্ণ হলেও কর্মপরিবেশ, ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, সামাজিক স্থিতিশীলতা, আর্থিক স্থিরতার মতে বহুবিধ বিপদ একবিংশ শতকের অগ্রসর পৃথিবীতেও আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে রেখেছে শ্রমজীবীদের কর্মক্লান্ত জীবন।
মহামারি করোনার প্রতিক্রিয়ায় শ্রমজীবীদের অবস্থান আরো নাজুক হয়েছে। অনেক নতুন নতুন স্বাস্থ্য ও পেশাগত বিপদ তৈরি হচ্ছে শ্রমিক ও মেহনতী মানুষের সংগ্রামী জীবনের পদে পদে। তদুপরি, প্রযুক্তি, পরিবেশ ও পরিবর্তনের জোয়ারের ফলে নব নব সমস্যা উত্থিত হয়ে কালাপাহাড়ের মতো সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে। শ্রমিক শ্রেণির স্বার্থে যেসব সমস্যা নিয়ে গভীরভাবে ভাবনা-চিন্তা করার এবং প্রতিবিধান খুঁজে বের করার দরকার আছে মে দিবসকে সামনে রেখে।