fbpx
হোম অন্যান্য ৩ হাজার বছরের পুরনো মমি কথা বলে উঠলো !
৩ হাজার বছরের পুরনো মমি কথা বলে উঠলো !

৩ হাজার বছরের পুরনো মমি কথা বলে উঠলো !

0

মিশরীয়দের মমি সম্পর্কে তো কমবেশি সবারই জানা আছে। মিশরের পিরামিডের পাশাপাশি যে জিনিসটি বিশ্ববাসীকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছে তা হচ্ছে তাদের মৃতদেহের মমি। এর রহস্য উদঘাটন করতে যুগের পর যুগ ধরে হিমশিম খাচ্ছেন গবেষকরা। এরই মধ্যে সম্প্রতি পাওয়া গেছে এমন এক মমি যে কথা বলেছে। নিশ্চয় অবাক হয়েছেন? ঠিক এভাবে গবেষকরাও অবাক হয়েছেন। তবে এমন না যে মমিটি নিজে থেকেই কথা বলছে। বিজ্ঞানীরা নানা কসরত করে তার কণ্ঠস্বর সচল করেছেন। এই মমিটি ৩০০০ বছর আগের এক যাজকের। তিনি ছিলেন মিশরের প্রাচীন শহর থিবসের কর্ণক মন্দিরের পুরোহিত। তার নাম নেসায়ামুন। আনুমানিক ৩০০০ বছর আগে তিনি মন্দিরেই মারা যান। এরপর অত্যন্ত যত্ন সহকারে তার মমি সংরক্ষণ করা হয়। তিনি দেবতা আমুনের খাদেম ছিলেন।

গবেষকদের দাবি- এই যাজকের মমি কথা বলছে। তার কণ্ঠ ছিল খুবই ক্ষীণ এবং অস্পষ্ট। তিনি যে সব শব্দ উচ্চারণ করছিলেন তার কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না গবেষকরা। তবে ধারণা করা হচ্ছে এটি সেসময়ের কোনো মন্ত্র পাঠ করছেন। কারণ জীবদ্দশায় তিনি বিভিন্ন মন্ত্র পাঠ করতেন। তবে এই সব শব্দের অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। ব্যাপারটি এমন নয় যে, মমি জীবিত মানুষের মতো কথা বলে উঠেছে। মমিকে কথা বলাতে করা হয়েছে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা, ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। এই মিশরীয় পুরোহিতের দেহ এতো ভালোভাবে মমি করা হয়েছিল যে এতো বছর পড়ে এসেও রয়েছে অবিকৃত। এমনকি ভোকাল কর্ডের কোষগুলো পর্যন্ত অক্ষত রয়েছে। সিটিস্ক্যানের মাধ্যমে প্রথমেই পরীক্ষা করে জেনে নেন বিজ্ঞানীরা। এজন্য থ্রি-ডি ডায়মেনশনাল প্রিন্টার ভোকাল বক্স প্রযুক্তি ব্যবহার করেন তারা। মানুষের ল্যারিন্যাক্সে শব্দ তৈরি হয়। আর ভোকাল ট্র্যাক প্যাসেজে সেই শব্দ ফিল্টার হয়ে অর্থপূর্ণ শব্দ তৈরি করে। এই পুরো পদ্ধতিকে বলা হয় ভয়েস বক্স। প্রথমেই বিজ্ঞানীরা মমির ভোকাল কর্ডের ডায়মেনশন থ্রি-ডি প্রিন্টারে কপি করেন। তারপর এই মমির ভোকাল কর্ডের কপি করে বৈদ্যুতিক ল্যারিন্যাক্সে কৃত্রিমভাবে তার কণ্ঠ তৈরি করেন। এখন পর্যন্ত মমিটি মাত্র দুটি শব্দ উচ্চারণ করেছে। সেগুলো হলো ‘আহ’ এবং ‘এহ’। এর অর্থ অনেকটা দাঁড়ায় ‘খারাপ’ এবং ‘বিছানা’। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলছে এই গবেষণার কাজ। ইংল্যান্ডের লেডস সিটি মিউজিয়ামের কর্মীরা, নেসায়মুনের মমিটি ২০০ বছর ধরে এখানে আছে বলে জানান।

ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের মিশরবিদ এবং কাগজে লেখক জোয়ান ফ্লেচার বলেছিলেন, এখানে সবচেয়ে বেশি যে ব্যাপারটি চমকপ্রদ করেছে সবাইকে তা হলো, এই পুরোহিতের মমির অবস্থা। এটিকে অনেক যত্ন সহকারে মমি করা হয়েছিল। যে কারণে এর ভোকাল কর্ড এখনো অবিকৃত আছে। সিটি স্ক্যান ব্যবহার করে, দলটি থ্রি- ডি প্রিন্ট করে নেসায়ামুনের ভোকাল ট্র্যাক্টের ল্যারেক্স এবং ঠোঁটের মধ্যে একটি কপি করেছিল। ডা.হাওয়ার্ড লাউড স্পিকারের সঙ্গে থ্রি- ডি প্রিন্টেড ভোকাল ট্র্যাক্টের সঙ্গে প্রতিস্থাপন করেন। এবার লাউডস্পিকারকে কম্পিউটারের সঙ্গে সংযুক্ত করেন। যা সাধারণ স্পিচ সিন্থেসাইজারগুলোতে ব্যবহৃত হয়। এটি অনুরূপ একটি বৈদ্যুতিক তরঙ্গরূপ তৈরি করতে সক্ষম। এরপর একটি কৃত্রিম ল্যারেক্স তৈরি করা হয়। অতঃপর কম্পিউটারে সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে তিনি এমন একটি শব্দ তৈরি করেন। যা পরবর্তীতে লাউডস্পিকারের মাধ্যমে এবং থ্রি-ডি প্রিন্টেড ভোকাল ট্র্যাক্টে প্রবেশ করে মমির স্বরধ্বনি তৈরি করে।

এখনো চলছে এই মমিকে নিয়ে বিস্তর গবেষণা। বিজ্ঞানীরা এই মমির কণ্ঠস্বর থেকে আরো শব্দ তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মিশরীয়দের এই মমি আধুনিক বিজ্ঞানকেও চমকে দিয়েছে। আর মমি থেকে সেসময়ের অনেক কিছুই জানা সম্ভব হয়েছে এখন পর্যন্ত। হয়তো এখনকার এই গবেষণা থেকে জানা যাবে সেসময়ের মানুষের ভাষাও।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *