fbpx
হোম আন্তর্জাতিক সাদ্দাম হোসেনকে নিয়ে মার্কিন সেনার বইয়ে আবেগঘন লেখা
সাদ্দাম হোসেনকে নিয়ে মার্কিন সেনার বইয়ে আবেগঘন লেখা

সাদ্দাম হোসেনকে নিয়ে মার্কিন সেনার বইয়ে আবেগঘন লেখা

0

ইরাকের স্বৈরশাসক সাদ্দাম হোসেনকে গ্রেফতারের পর থেকে বিচারের পর জীবনের শেষ দিনগুলোতে তাকে পাহারা দিয়েছিলেন ১২ জন মার্কিন সৈন্য। সেই ১২ সেনা যে প্রথম অবস্থায় সাদ্দামের বন্ধু ছিলেন তা নয়। কিন্তু যত দিন গড়িয়েছে তারা একে অপরের কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন। সেই ১২ মার্কিন সেনাদের সঙ্গে অকৃত্রিম বন্ধুত্ব তৈরি হয় সাদ্দাম হোসেনের।

মার্কিন ৫৫১ নম্বর মিলিটারি পুলিশ কোম্পানির ওই ১২ জন সেনাসদস্যকে ‘সুপার টুয়েলভ’ বলে ডাকা হতো। তাদেরই একজন, উইল বার্ডেনওয়ার্পার একটি বই লিখেছেন, ‘দা প্রিজনার ইন হিজ প্যালেস, হিজ অ্যামেরিকান গার্ডস, অ্যান্ড হোয়াট হিস্ট্রি লেফট আনসেইড’ নামে। বইটি বাংলা নামের শিরোনামটি দাঁড়ায় ‘নিজের প্রাসাদেই এক বন্দী, তার আমেরিকান প্রহরী – ইতিহাস যে কথা বলেনি’।

বইটি জুড়ে রয়েছে সাদ্দাম হোসেনকে তার শেষ সময় পর্যন্ত সুরক্ষা দেওয়ার অভিজ্ঞতা। বার্ডেনওয়ার্পার স্বীকার করেছেন যে, তারা যখন সাদ্দাম হোসেনকে জল্লাদদের হাতে তুলে দিলেন ফাঁসির জন্য, তখন তাদের ১২ জনেরই চোখে পানি এসে গিয়েছিল।

বার্ডেনওয়ার্পার তারই এক সেনা-সঙ্গী রজারসনকে উদ্ধৃত করে লিখেছেন, ‘আমরা কখনও সাদ্দামকে মানসিক বিকারগ্রস্ত হত্যাকারী হিসাবে দেখিনি। তার দিকে তাকালে নিজের দাদুর মতো লাগত অনেক সময়ে।’

নিজের জীবনের শেষ দিনগুলোতে সাদ্দাম তাদের সঙ্গে খুব ভাল ব্যবহার করতেন। ওই ব্যবহার দেখে বোঝাই যেত না যে সাদ্দাম হোসেন কোনও এক সময়ে একজন অত্যন্ত নিষ্ঠুর শাসক ছিলেন। সাদ্দাম হোসেনের নিরাপত্তার জন্য নিযুক্ত আমেরিকান সেনারাই তাকে একদিন জানিয়েছিলেন যে তার ভাই মারা গেছেন। যে সেনাসদস্য খবরটা দিয়েছিলেন, সাদ্দাম তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, ‘আজ থেকে তুমিই আমার ভাই।’

আরেকজন প্রহরীকে সাদ্দাম বলেছিলেন, ‘যদি আমার সম্পত্তি ব্যবহার করার অনুমতি পাই, তাহলে তোমার ছেলের কলেজে পড়তে যা খরচ লাগবে, সব আমি দিতে রাজী।’

নিরাপত্তা রক্ষীরা চেষ্টা করত সাদ্দামকে খুশী রাখতে। তার বদলে সাদ্দামও সকলের সঙ্গে হাসি-মস্করা করতেন। কয়েকজন রক্ষী পরে বার্ডেনওয়ার্পারকে বলেছিলেন যে তারা বিশ্বাস করতেন ‘যদি তাদের কোনও ঝামেলায় পড়তে হয়, তাহলে সাদ্দাম তাদের বাঁচানোর জন্য নিজের জীবনও বাজি রেখে দিতে পারেন।’

যখনই সময়-সুযোগ পেতেন, তখনই সাদ্দাম হোসেন পাহারার দায়িত্বে থাকা রক্ষীদের পরিবারের খোঁজখবর নিতেন। বার্ডেনওয়ার্পারের বইটাতে সব থেকে আশ্চর্যজনক যে বিষয়টার উল্লেখ রয়েছে, সেটা হল সাদ্দামের মৃত্যুর পরে তার প্রহরীরা রীতিমতো শোক পালন করেছিলেন, যদিও তিনি আমেরিকার কট্টর শত্রু ছিলেন।

অ্যাডাম রজারসন নামে প্রহরীদেরই একজন, উইল বার্ডেনওয়ার্পারকে বলেছিলেন, ‘সাদ্দামের ফাঁসি হয়ে যাওয়ার পরে আমার মনে হচ্ছে আমরা ওর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছি। নিজেদেরই এখন তার হত্যাকারী বলে মনে হচ্ছে। এমন একজনকে মেরে ফেললাম আমরা, তিনি যেন আমাদের খুব আপনজন ছিলেন।’

২০০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর তিনটে নাগাদ ঘুম থেকে ডেকে তোলা হয়েছিল সাদ্দাম হোসেনকে। তাকে জানানো হয়েছিল যে কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে ফাঁসি দেওয়া হবে। তিনি চুপচাপ গোসল করে ফাঁসির জন্য তৈরি হয়ে নিয়েছিলেন।

ফাঁসির কয়েক মিনিট আগে সেই সেনা সদস্যদের একজন স্টিভ হাচিনসনকে কারাকক্ষের বাইরে ডেকে পাঠান সাদ্দাম হোসেন। লোহার শিকগুলোর মধ্যে দিয়ে হাতটা বের করে নিজের রেমন্ড ওয়েইল হাতঘড়িটা দিয়ে দেন স্টিভকে। হাচিনসন আপত্তি করেছিলেন। তবে সাদ্দাম কিছুটা জোর করেই ঘড়িটা স্টিভের হাতে পরিয়ে দেন। হাচিনসনের ঘরে এখনো সেই ঘড়ির কাঁটার শব্দ শোনা যায়।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry
15

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *