fbpx
হোম আন্তর্জাতিক সাকিব আল হাসান ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব
সাকিব আল হাসান ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব

সাকিব আল হাসান ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব

0

এসময়ে  বাংলাদেশের ‘টক অব দ্য কান্ট্রি সাকিব আল হাসান’। শুধু বাংলাদেশেই নয়; ক্রিকেট দুনিয়ায় সাকিবকে নিয়ে চলছে আলোচনা, সমালোচনা, সহমর্মিতা ও সমবেদনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে  সাম্প্রতিক সময়ের সর্বাধিক পঠিত, আলোচিত বিষয় বিশ্বজয়ী অলরাউন্ডার ক্রিকেটার, স্বনামধন্য বাংলাদেশি খোলোয়ার সাকিব আল হাসান। আর এসব আলোচনার কেন্দ্রীয় বিষয় হলো ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থা (আইসিসি) গত ২৯ অক্টোবর বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে এক বছর স্থগিত নিষেধাজ্ঞাসহ দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে’।

এ প্রসঙ্গে সাকিব, তাঁর পরিবার, বিসিবি, সতীর্থ খেলোয়াড়, ভক্তবৃন্দ কে কি বলেছেন-তার সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হলো।

শাস্তির ঘটনা

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থা (আইসিসি) আজ বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে। এর মাঝে থাকছে এক বছর স্থগিত নিষেধাজ্ঞা।

আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী নীতিমালার আইন লঙ্ঘনের অপরাধে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থা (আইসিসি) গত ২৯ অক্টোবর বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে  এক বছর স্থগিত নিষেধাজ্ঞাসহ দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে। আইসিসি একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। সেখানে সাকিবের বিরুদ্ধে আইসিসির দুর্নীতি দমন আইনের ২.৪.৪ ধারার অধীনে তিনটি অভিযোগ তোলা হয়েছে।

২.৪.৪ ধারা: ২০১৮ সালে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার ত্রিদেশীয় সিরিজ ও ২০১৮ সালে আইপিএলের সময় জুয়াড়িদের কাছ থেকে পাওয়া প্রস্তাবের কথা আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিটের (এসিইউ) কাছে জানাননি সাকিব।

২.৪.৪ ধারা: ২০১৮ সালের ত্রিদেশীয় সিরিজেই তাঁর সঙ্গে জুয়াড়িরা দ্বিতীয়বার যোগাযোগ করলেও সেটি দ্বিতীয়বার এসিইউর কাছে বিস্তারিত জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন সাকিব।

২.৪.৪ ধারা: ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ও কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের একটি ম্যাচের আগে সাকিবকে ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সেটিও যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।

সাকিব সব কটির দায় স্বীকার করে নিয়েছেন এবং আইসিসির দুর্নীতি দমন ট্রাইব্যুনালের শুনানিতে দেওয়া সব শাস্তি মেনে নিয়েছেন। যদি নিষেধাজ্ঞার সময় শাস্তির সব বিধিবিধান মেনে চলেন, তবে ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন।

শাস্তি প্রসঙ্গে সাকিবের প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আইসিসির কাছে নিজের অপরাধ স্বীকার করেছেন। ভুল করেছেন জানিয়ে বলেছেন, ‘যে খেলাটি ভালোবাসি, সেখান থেকে নিষিদ্ধ হয়ে আমি অবশ্যই অসম্ভব কষ্ট পাচ্ছি। কিন্তু আমার কাছে অনৈতিক প্রস্তাব আসার পরও না জানানোর ফলে আমার শাস্তি আমি মেনে নিয়েছি। আইসিসির দুর্নীতিবিষয়ক কমিটির দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই খেলোয়াড়দের ওপর নির্ভর করে। এ ঘটনায় আমি আমার দায়িত্ব পালন করতে পারিনি।’

ভবিষ্যতে তরুণ কোনো ক্রিকেটার যেন এমন ভুল না করে, সেটা নিশ্চিত করতে চান সাকিব। এ ব্যাপারে আইসিসিকে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা করতে চান, ‘বিশ্বের অধিকাংশ ক্রিকেটার ও সমর্থকের মতো আমিও চাই দুর্নীতিবিরোধী খেলার পরিবেশ। আমি আইসিসির দুর্নীতিবিষয়ক কমিটির সঙ্গে এ ব্যাপারে কাজ করার অপেক্ষায় আছি। তরুণ ক্রিকেটারদের শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেব এবং নিশ্চিত করতে চাই, তরুণ ক্রিকেটাররা আমার ভুল থেকে শিক্ষা নেবে।’

ম্যাচ না পাতিয়েও কেন শাস্তি?

যা  বলা হয়েছে ২.৪.৪ ধারায়-

এটা অনস্বীকার্য যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এ ধরনের সব অনৈতিক প্রস্তাব যত দ্রুত সম্ভব কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী বিভাগ ও অন্যান্য দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠান, যারা খেলাটির নৈতিকতা রক্ষার চেষ্টা করছে তার কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে। এটা ঠিক ‘অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব’ ছিল কি না, সেটা প্রতিটি ক্ষেত্রেই আলাদাভাবে বিচার করা হবে। একটি নির্দিষ্ট ম্যাচে যদি কোনো খেলোয়াড় দুর্নীতির প্রস্তাব পায় এবং সেটি দুর্নীতি বিভাগকে জানাতে সে যদি ম্যাচ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে, তবে তা গ্রহণযোগ্য হবে না (এবং ‘অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব’ বলে গণ্য হবে)।

দুর্নীতি দমন বিভাগের ৬.২ ধারা অনুযায়ী ২.৪.৪ ধারায় সর্বনিম্ন ছয় (৬) মাস থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ (৫) বছরের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে সাকিবকে দুই বছর (এর মাঝে স্থগিত শাস্তি এক বছর) শাস্তি দেওয়ার পেছনে এ বিষয়টি ভূমিকা রেখেছে।

সাকিবের শাস্তি ছয় মাস থেকে বেড়ে যাওয়ার কারণ
১. আগারওয়ালের কাছ থেকে তিনবার প্রস্তাব পেয়েও কর্তৃপক্ষকে জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
২. আগারওয়ালের সঙ্গে সাকিবের সাক্ষাতের বিষয়টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং বেশ দীর্ঘ সময় ধরে চলেছে।
৩. সাকিব আল হাসানের সঙ্গে যেভাবে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তাতে উদ্দেশ্য পরিষ্কার বোঝা গেছে। সাকিব পরিষ্কার বুঝতে পেরেছিলেন আগারওয়াল তাঁর কাছ থেকে তথ্য নিয়ে জুয়ার কাজে তা ব্যবহার করবে।
৪. সাকিব একজন অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। তিনি অনেকবারই দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন এবং এ ধারায় তাঁর কর্তব্য খুব ভালোমতোই জানেন।
৫. বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে সাকিব বেশ গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে ছিলেন।

সাকিবের সর্বোচ্চ শাস্তি না পাওয়ার কারণ
১. সাকিব নিজ থেকে সব দায় মেনে নিয়েছেন এবং তদন্তের সময় সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছেন।
২. নিয়ম ভাঙার নোটিশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দায় স্বীকার করে নিয়েছেন।
৩. দুর্নীতিবিরোধী বিভাগের কাছে সাকিব অনুশোচনা করেছেন এবং অনুতপ্ত হয়েছেন।
৪. সাকিবের অতীত আচরণ।
৫. ওই নির্দিষ্ট ম্যাচগুলোয় ওই ঘটনায় আর্থিক কোনো ক্ষতি হয়নি, মানুষের আগ্রহেও ঘাটতি দেখা যায়নি।
৬. ওই ঘটনায় খেলার ফলে কোনো প্রভাব পড়েনি।

সাকিব বা বিসিবি কেউই আপিল করতে পারবে না

 আইসিসিতে বিসিবি এখনই কোনো তদবির করতে পারবে না সাকিবের শাস্তি কমাতে। শাস্তিটা যেহেতু আইসিসি ও সাকিবের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ভিত্তিতে হয়েছে, আইসিসির দুর্নীতি দমন নীতি অনুযায়ী এর বিরুদ্ধে সাকিব বা বিসিবি কেউই আপিল করতে পারবে না।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে আলোচনা, সমালোচনা ও সমবেদনা

 

সাবের হোসেন চৌধুরী: 

বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কর্মকাণ্ডে রীতিমতো ত্যক্ত-বিরক্ত সাবেক বোর্ড প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী। সম্প্রতি ক্রিকেটারদের ধর্মঘটকে পাপনের ব্যর্থতা বলে আখ্যায়িত করেন তিনি। এবার সাকিব ইস্যুতে পাপনকে রীতিমতো ধুয়ে দিলেন সাবের হোসেন। সাকিবের নিষেধাজ্ঞার শাস্তির বিষয়ে আগে থেকে পাপন কিছুই জানতেন না—বিসিবি সভাপতির এ কথা বিশ্বাসই করতে পারছেন না তিনি।

এ নিয়ে নিজের ভেরিফায়েড টুইটারে বেশ কয়েকটি টুইট করেছেন সাবের হোসেন। বিসিবির সংবাদ সম্মেলনে পাপন ‘ম্যাচ ফিক্সিংয়ের খবর আসছে’ বলে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন সেই ভিডিও নিজের টুইটারে শেয়ার করে তিনি লিখেন, ‘আমার মনে হচ্ছে বিসিবি সবকিছুই জানতো এবং পাপন সাহেব যে বলেছেন, তার কোনো ধারণাই ছিল না, কথাটা সত্য নয়। খারাপ লাগলেও বলতেই হচ্ছে। ২২ অক্টোবরের ভিডিও ক্লিপটা দেখলে মনে হবে, আইসিসির ঘোষণার জন্য যেন তর সইছিল না পাপন সাহেবের।’

আরেক টুইটে বিসিবির সাবেক সভাপতি লিখেছেন- ভণ্ডামি, সর্বোৎকৃষ্ট/নিকৃষ্টের দ্বৈত চরিত্র। আইসিসির সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়েছে বিসিবি। ক্রিকেট দুর্নীতির বিরুদ্ধে সমান আবেগই দেখিয়েছে। কিন্তু সংস্থাগত ম্যাচ ফিক্সিং দুর্নীতির মূলোৎপাটন না করে, ঘরোয়া ক্রিকেটে সেটিকে আরও উৎসাহিত করছে বোর্ড। লজ্জাজনক!

সাকিবের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়াবে বিসিবি। বোর্ডের এমন আশ্বাস-বিশ্বাস করতে পারছেন না সাবের হোসেন। অপর টুইটে সাবের হোসেন লেখেন- কেউ অপরাধ করলে সুবিচার প্রাপ্য। বিসিবি অন্তত নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ কমানোর চেষ্টা করতে পারত। কিন্তু পরিতাপের বিষয়- এ ক্ষেত্রে সাকিবের পাশে দাঁড়ায়নি বোর্ড। অযথা মায়াকান্না দেখাচ্ছে।

সাকিব আল হাসানের স্ত্রী উম্মে আহমেদ শিশির:

নিজের ফেরিফাইড ফেসবুক পেজে জানালেন সাকিব আল হাসানের স্ত্রী উম্মে আহমেদ শিশির উল্লেখ করেছেন, ‘লিজেন্ডরা কখনো রাতারাতি লিজেন্ড হয় না, অনেক ঝড়-ঝঞ্ঝা আর চড়াই-উতরাই পার হতে হয় তাদের। কঠিন সময় আসবেই, কিন্তু তারা সেটা শক্ত মনে মোকাবিলা করবে এবং আমরা জানি সাকিব কতটা শক্তিশালী! এটা নতুন শুরু, যে কোনো সময়ের চেয়ে সে আরো শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ইনজুরিতে সে ক্রিকেট থেকে দূরে ছিলো, আমররা দেখেছি সে কীভাবে সে আবারও বিশ্বকাপে ফিরে এসেছিলো। এটা ক্যাবল সময়ের ব্যাপার, আমরা আপনাদের এই ভালোবাসা ও সমর্থনে সত্যি কৃতজ্ঞ। এটাই ঐক্য, যা একটা জাতির জন্য প্রয়োজন।’

সাকিবকে আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসার আহ্বান সতীর্থদের: 

সাকিবের এমন নিষেধাজ্ঞায় ব্যথিত তাঁর সতীর্থরাও। সাকিবের এ দুঃসময়ে তার পাশে দাঁড়ালেন বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের সফলতম অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফাইড পেজে মাশরাফি লেখেন, ‘দীর্ঘ ১৩ বছরের সহযোদ্ধার আজকের ঘটনায় নিশ্চিতভাবেই কিছু বিনিদ্র রাত কাটবে আমার। তবে কিছুদিন পর এটা ভেবেও শান্তিতে ঘুমাতে পারব যে, তার নেতৃত্বেই ২০২৩ সালে আমরা বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলব। কারণ নামটি তো সাকিব আল হাসান…!!!’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের ভাষ্য তুলে ধরেছেন সাকিবের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে খেলে আসা বাংলাদেশের উইকেটরক্ষক ও সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ২০১২ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে হারের পর সাকিবকে জড়িয়ে ধরে কান্নার সেই মুহূর্তের ছবি পোস্ট করে মুশফিক লেখেন, ‘বয়স ভিত্তিক ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একসঙ্গে ১৮ বছর খেলার পর, মাঠে তোমাকে ছাড়া খেলার কথা ভাবা খুবই কষ্টদায়ক। আশা করি, তুমি চ্যাম্পিয়নের মতো ফিরে আসবে। তোমার প্রতি আমার এবং পুরো বাংলাদেশের সমর্থন রয়েছে। ভেঙে পড়ো না, ইনশাল্লাহ।’

সাকিবের এমন সংবাদে মাশরাফি-মুশফিকদের মতোই ব্যথিত দলের অন্যান্য সতীর্থরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, তাসকিন আহমেদ, লিটন কুমার দাস, সম্য সরকারদের পোস্টে তাই বারবার প্রতিফলিত হয়েছে সেই অনুভূতি। সবাই আছেন তার পাশে। সবাই চান আবার আরও শক্তিশালী হয়ে মাঠে ফিরে আসুক পৃথিবীর সেরা এই অলরাউন্ডার।

 

কে এই জুয়াড়ি  দীপক আগারওয়াল?

ক্রিকেট বিশ্বের কাছে এই মুহূর্তে এক রহস্যময় চরিত্র হলেন দীপক আগারওয়াল। তার সঙ্গেই হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাটিং করে ফেঁসে গেছেন সাকিব আল হাসান। যদিও বাজিকরদের দুনিয়ায় তিনি মোটেও অপরিচিত কেউ নন। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ অনেকবারই তার নাম উচ্চারিত হয়েছে।

কেউ কেউ দাবি করেন, এই মানুষটার আরেক নাম নাকি বিক্রম আগারওয়াল। জুয়ার আড়ালে হোটেল ব্যবসা করেন। চেন্নাইয়ে তার দুটি পাঁচ তারকা হোটেল থাকারও খবর পাওয়া গেল। হোটেল ব্যবসা করেই ব্যবসায়ী দুনিয়ায় প্রবেশ করেন। সেখান থেকে হুট করে আরো বেশি আর্থিক মুনাফার আশায় ক্রিকেট জুয়ার দুনিয়ায় পা রাখেন। আর যত দিন যাচ্ছে, দীপকদের মতো জুয়াড়িদের প্রভাব ততই বাড়ছে!

সাকিবের আর্থিক ক্ষতি

সাকিবের আর্থিক ক্ষতির কথাই যদি বলা হয়, সবার আগে আসবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সঙ্গে তাঁর কেন্দ্রীয় চুক্তি। যেহেতু এক বছর ক্রিকেটের বাইরে থাকতে হবে সাকিবকে, বিসিবি কি তাঁকে এই সময়ে বেতন দেবে? বাঁ হাতি অলরাউন্ডার আছেন কেন্দ্রীয় চুক্তির সর্বোচ্চ ক্যাটাগরিতেই, যেটিতে তিনি মাসে বেতন পান চার লাখ টাকা। কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে সাকিবকে বাদ দেওয়ার শঙ্কাই বেশি। বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান আকরাম খান অবশ্য এ ব্যাপারে এখনই নিশ্চিত করতে পারেননি, ‘সে তো এমনি এক বছর খেলতে পারবে না। এ ব্যাপারে আমরা আলোচনা করব। তারপর সিদ্ধান্ত। কালই ঘটনা ঘটেছে, কদিন যাক।’

সাকিবের সঙ্গে চুক্তি আছে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান উবার, ইউনিলিভারের সঙ্গেও। চুক্তি আছে একটি পাঁচ তারকা হোটেলের সঙ্গেও। শুভেচ্ছাদূত হিসেবে আছেন আন্তর্জাতিক শিশু তহবিল প্রতিষ্ঠান ইউনিসেফের সঙ্গে। ইউনিসেফের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন থাকবে কি থাকবে না সেটি এখনো বলা না গেলেও একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে উবার আপাতত চুক্তির ইতি টানতে যাচ্ছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোও সাকিবের সঙ্গে চুক্তি অব্যাহত রাখবে কিনা, সেটি কদিনের মধ্যেই জানা যাবে। তবে গত বছর স্টিভ স্মিথ-ডেভিড ওয়ার্নার নিষিদ্ধ হওয়ার পর স্পনসররা যেভাবে সরে গিয়েছিল, সাকিবের ক্ষেত্রেও সেটিই হয়তো হবে। এটি হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। যত বড় তারকা ক্রিকেটার হন, তিনি যখন ক্রিকেটেই নিষিদ্ধ থাকেন, তাঁর পেছনে কেনই বা কোটি কোটি টাকা লগ্নি করবেন পৃষ্ঠপোষকেরা। সাকিব দুর্দান্তভাবে ফিরে এলে তখন হয়তো আবার আগের মতো কোটি কোটি টাকার প্রস্তাব নিয়ে তাঁর দিকে হাত বাড়িয়ে দেবে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো।

ভক্তরা জানতে চান, সাকিব কি ষড়যন্ত্রের শিকার?

আইসিসির শাস্তি ঘোষণার পরই মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের মূল ফটকের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন সাকিব আল হাসানের ভক্তরা। কখনো সারিবদ্ধ হয়ে, কখনো এলোমেলো হয়ে তাঁরা স্লোগান তুলছেন প্রিয় তারকার শাস্তির বিরুদ্ধে।

এক ভক্ত প্ল্যাকার্ডে লিখে নিয়ে এসেছেন, ‘সাকিব কি ষড়যন্ত্রের শিকার?’ কেন তিনি ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব খুঁজে পেয়েছেন, সেটির যুক্তি তুলে ধরেছেন সংবাদমাধ্যমকে, ‘যখন খেলোয়াড়েরা দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলনে গেলেন, তখনই একটার পর একটা সিদ্ধান্ত আসছে তাঁদের বিরুদ্ধে। এখানে বিসিবির ভূমিকা নিয়ে আমাদের সন্দেহ হয়।’

সাকিব যখন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলে বিসিবি ছেড়ে গেলেন, তখনো সামনের সড়ক থেকে স্লোগান ভেসে আসছে, ‘সাকিবকে ছাড়া ক্রিকেট চলবে না, এই শাস্তি মানি না, মানব না।’
Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *