সাঁতার কেটে পবিত্র কাবা শরীফ তাওয়াফ করেছেন যে কিশোর !
৭৯ বছরের পুরানো এই সাদাকালো ছবিতে দেখা যাচ্ছে পবিত্র কাবা শরিফ পানিতে ডুবে গেছে, আর এক কিশোর সাঁতার কেটে কাবা ঘর তাওয়াফ করছে, বানের পানির হালকা ঢেউয়ে ভেসে আছে ওই কিশোরের মুখ। ছবিটি যিনিই দেখেছেন তিনিই অবাক হয়েছেন।
খুলে বলা যাক- ১৯৪১ সালে একাধারে ৭ দিন বৃষ্টির ফলে কাবার চারপাশে ৬ ফুট পানি জমে গিয়েছিলো। তখন বাহরাইনের ১২ বছর বয়সী শেখ আল আওয়াদী তখন মক্কায় পড়ালেখার সুবাদে থাকেন। তিনি ওই ঘটনার মূল নায়ক এবং সম্ভবত তিনিই পৃথিবীর একমাত্র ব্যক্তি যিনি সাঁতার কেটে পবিত্র কাবা শরিফ তাওয়াফ করেছেন। ২০১৩ সালে কুয়েত আল রাই টেলিভিশনে ওই ঘটনার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, বন্যার পানিতে মানুষ, যানবাহন, আর গবাদি পশু ভেসে যেতে দেখেছি। ৭ দিন পর বৃষ্টি থামলে আমার ভাই হানিফ, বন্ধু মোহাম্মদ আল তাইয়িব, আলী সাবিত, হাসিম আল বার ও আমাদের শিক্ষক আবদুর রউফ মিলে কাবা শরিফের বন্যা পরিস্থিতি দেখতে যাই। বাচ্চারা পানি দেখলে যা করে আমরাও তাই করলাম, মাথায় আসলো সাঁতরিয়ে তওয়াফ করবো। যা ভাবা তাই, আমরা চারজন পানিতে নেমে পড়লাম। আমরা কালো পাথর (হাজরে আসওয়াদ) চুরি করার নিয়তে পানিতে নেমেছি এমনটা ভেবে পুলিশ হই হই করে উঠলো। পুলিশের তাড়া খেয়ে অন্য বন্ধুরা উঠে গেলেও আমি সাঁতরাতে সাঁতরাতে পুলিশকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম, আমি শুধু সাঁতরে তওয়াফ করব ৭ বার, পুলিশ তাদের স্বভাব সুলভ খবরদারী করেই চলছিলো। কিন্তু আমি না থেমে তাওয়াফের কাজ চালু রাখি।
শেখ আল আওয়াদী বলেন, ‘আমার ভয় হচ্ছিলো যে- পুলিশ না আমাকে গুলি করে বসে। আবার আনন্দ হচ্ছিলো এটা ভেবে যে, পৃথিবীতে সম্ভবত কেউ এভাবে কাবা প্রদক্ষিণ করেনি, আমিই প্রথম। তাই ভয় আর আনন্দের মিশ্র অনুভুতি নিয়ে আমি কাবার চারপাশে সাঁতরে চললাম। পুলিশ তার কাজ করল, আমি আমার কাজ করলাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি যেহেতু মক্কায় অধ্যয়নরত ছিলাম, তাই তৎকালীন মক্কার অনেক বয়স্কদের কাছে জানতে শুনেছি, তারা বলেছেন- এর আগে এমন বন্যার পানি আগে দেখেননি। ‘সত্যি কথা বলতে কী, আমি ওই তাওয়াফের বিষয়টি পরে ভুলে যাই। আমার কল্পনাতেও ছিল না, কেউ ওই সময় এর ছবি তুলে রেখেছে’- বলছিলেন শেখ আল আওয়াদী। তার ছেলে আবদুল মজিদ ২০ বছর আগে হজ করতে গিয়ে দেখেন কাবা শরিফের কিছু দূর্লভ ছবি বিক্রি হচ্ছে, সেখানে বন্যা কবলিত কাবার ছবিটিও ছিল। ছবিতে থাকা লোকটির চেহারারা সঙ্গে আমার কিছুটা মিল থাকায় সে ছবির পোস্টারটি আমার জন্য উপহার হিসেবে কিনে আনে। এরপর কীভাবে যেন প্রচার হতে থাকে কাবায় সাঁতরানো লোকটি আমি।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সনের ১৬ মে ৮৬ বছর বয়সে শেখ আল আওয়াদি বাহরাইনে ইন্তেকাল করেন। তার অমর এই কীর্তি এখনও গণমাধ্যমসহ অনেকের কাছে বিস্ময় হয়ে আছে।
সূত্র: দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন ও সউদি গেজেট