রাজনীতি না করার শর্তে কারাবন্দি নেতাদের জামিন চায় হেফাজত
কারাবন্দি হেফাজত নেতাদের মুক্তি চেয়েছেন সংগঠনের নেতারা। হেফাজতের শীর্ষস্থানীয় নেতারা বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে সচিবালয়ে তার অফিসে দেখা করে বন্দি নেতা-কর্মীদের নিজেদের জিম্মায় জামিনের ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেছে। দুপুর ২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চলা বৈঠক শেষে কোনো পক্ষই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি।
বৈঠকে হেফাজত নেতারা সংগঠন ও পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন যে, বন্দি নেতাদের মুক্তি দেওয়া হলে তারা কওমি মাদ্রাসায় কোনো ধরনের রাজনীতিতে জড়াবে না। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হেফাজত নেতাদের জানিয়ে দেন, এ বিষয়ে আমরা আরও অলোচনা করব, যা হবে আদালতের মাধ্যমেই করতে হবে।
বৈঠকে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক মাওলানা ইয়াহিয়াসহ সংগঠনের ৬ জন সিনিয়র সদস্য অংশ নেন। অন্য নেতারা হলেন-দলটির নায়েবে আমির মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান (দেওনার পীর), হেফাজত মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদ্রীস ও প্রচার সম্পাদক মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ শাখার ডিআইজি নাফিউল ইসলাম, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগের প্রধান একেএম হাফিজ আক্তার, র্যাবের গোয়েন্দা প্রধান লে. কর্নেল মশিউর রহমান এবং সিআইডির একজন প্রতিনিধিসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রাজনীতি না করার বিষয়ে সংগঠন ও পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের অঙ্গীকার বা এ বিষয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে প্রচার সম্পাদক মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী সরাসরি উত্তর এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে এ প্রসঙ্গে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব বিষয়সহ অনেক বিষয়েই আলোচনা হয়েছে। আমি সব বিষয়ে আপনাকে বলব না।
গোয়েন্দা সূত্র যুগান্তরকে জানায়, হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সরকারের টানাপোড়েন কমিয়ে আনা ও কারাবন্দি নেতাদের মুক্তির উদ্যোগের অংশ হিসাবে এই বৈঠক হয়েছে। হেফাজত নেতাদের মুক্তির বিষয়ে সরকারের তরফে বেশকিছু শর্তারোপ করা হয়েছে। হেফাজত নেতারাও সেগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
জানতে চাইলে মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী যুগান্তরকে বলেন, আমাদের যেসব নেতাকর্মী এখনো কারাগারে রয়েছেন আমরা তাদের মুক্তির দাবি জানিয়েছি। লিখিতভাবে আমরা দাবিগুলো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জমা দিয়েছি। তিনি বিষয়টি আন্তরিকতার সঙ্গে দেখবেন বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন। মাওলানা মামুনুল হকের মুক্তির ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আলাদাভাবে আমরা কারও ব্যাপারে কথা বলিনি। যারাই জেলে রয়েছেন সবার মুক্তি আবেদনই আমরা জানিয়েছি।
হেফাজতের প্রচার সম্পাদক মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী বলেন, কারাগারে স্বজনদের সাক্ষাতসহ বিভিন্ন বিষয়ে হয়রানি না করতে মৌখিকভাবে কথা হয়েছে। বৈঠক সূত্র জানায়, হেফাজতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বৈঠকে হেফাজত নেতাকর্মীদের নামে ২০১৩, ২০১৬ ও ২০২১ সালে করা সব মামলা প্রত্যাহারের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ জানানো হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ওলামায়ে কেরামদের মুক্তির বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।